টানা চারদিনের ছুটিতে বান্দরবানের পর্যটন স্পটগুলো এখন পর্যটকে মুখর। জেলা শহরসহ চার উপজেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে থেকে সরেজমিন জেলা শহরের নীলাচল, মেঘলা ও শৈলপ্রপাতে ঘুরে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের ভিড় দেখা গেছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান- রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি তিন উপজেলায় নিষেধাজ্ঞাসহ নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে নিষ্প্রাণ থাকা বান্দরবান জেলার পর্যটন এলাকা যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। দীর্ঘদিন পর পর্যটক সমাগম বাড়ায় পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বেশ খুশি। জেলার রোয়াংছড়ির দেবতাখুম ও থানচির রেমাক্রি ও নাফাখুম যেতে বিধিনিষেধ তুলে নিলে পর্যটক আরও বাড়বে মনে করছেন তারা।
মহিউদ্দিন নামে ঢাকার থেকে আসা এক পর্যটক জানান, তারা ২৪ জনের একটি দল বান্দরবান ভ্রমণে এসেছেন। সারা দিন বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ের শৈলপ্রপাত, চিম্বুক চূড়া ও নীলগিরির বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখবেন।
রাজশাহী থেকে আসা আসলাম সিকদার জানান, তাদের ইচ্ছা ছিল থানচির নাফাখুম ও রেমাক্রি ঝরনায় যাওয়ার। সেখানে যাওয়ার অনুমতি পেলে খুবই ভালো লাগতো। তারপরও নীলগিরি, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক পাহাড় দেখবেন।
নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রে ফল বিক্রেতা মেনয়েই ম্রো জানান, দীর্ঘদিন পর্যটক না থাকায় তারা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন পর্যটক বাড়ায় বিক্রিও বেড়েছে। পর্যটক আসার এই ধারা অব্যাহত থাকলে এত দিন যে ক্ষতির মুখে পড়েছেন, তা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
জেলা শহরের পর্যটক পরিবহনের জিপ (চাঁদের গাড়ি), কার ও মাইক্রোবাসের লাইনম্যান ফখরুল ইসলাম বলেন, “পর্যটক পরিবহনে গতকাল ও আজ চার শতাধিক গাড়ি ভাড়া হয়েছে। গাড়ি নিয়ে অধিকাংশ পর্যটক নীলগিরি, চিম্বুক চূড়া, নীলাচল ও শৈলপ্রপাত ঘুরতে যাচ্ছে।”
গত ৮ অক্টোবর বান্দরবানে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। প্রায় এক মাস পর গত ৬ নভেম্বর রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি ছাড়া জেলার চারটি উপজেলায় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরও এত দিন তেমন পর্যটকের দেখা পায়নি বান্দরবান। গতকাল শুক্রবার থেকে পর্যটক বেড়েছে।
জেলা শহরের হলিডে ইনের ব্যবস্থাপক সালাউদ্দিন জানান, দূরে যেতে না পারায় বেশির ভাগ পর্যটক শহরতলির রিসোর্টগুলোতে রাতযাপন করছেন। তাদের রিসোর্টগুলোতে বিজয় দিবসের আগে পর্যন্ত কোনো কক্ষ খালি নেই।
জেলা শহরের হিলভিউ হোটেলের ব্যবস্থাপক মো. পারভেজ জানান, তাদের ৮০ শতাংশ কক্ষ ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বুকিং রয়েছে। অনেক বছর পরে আশানুরূপ পর্যটক ভ্রমণে এসেছেন।
জেলা হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, “ডিসেম্বরের ১৩-১৬ পর্যন্ত বন্ধ থাকায় পর্যটকের আগমন বেড়েছে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা শেষ হলে পর্যটক আরও বাড়বে।”
তিনি বলেন, “জেলা শহরে ছোট-বড় ৭০টি হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টে একসঙ্গে সাড়ে পাঁচ হাজার পর্যটকের আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। রোয়াংছড়ির দেবতাখুম ও থানচির রেমাক্রি ও নাফাখুম, রুমার কেওক্রাডং, বগালেক খুলে দেওয়া হলে পর্যটক আরও বাড়বে।”
বান্দরবান টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, “যে পরিমাণে পর্যটক আশা করেছি তার চেয়ে বেশি পর্যটক বান্দরবান ভ্রমণে এসেছেন। সকল পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সকল পর্যটন কেন্দ্রে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। টুরিস্ট পুলিশের গোয়েন্দা টিম, নারী পুলিশের টিম ও টহল পুলিশ টিম রয়েছে। পর্যটকদের সার্বিক সহযোগিতা ও নিরাপত্তার বিষয়ে বান্দরবান টুরিস্ট পুলিশ কাজ করে যাচ্ছেন।”