রাজনীতি

প্রতিবন্ধীরা একা নন, তাদের সঙ্গে নিয়েই হবে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ

‘প্রতিবন্ধীরা একা নন’ উল্লেখ করে তাদের সঙ্গে নিয়েই ‘আগামীর গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করলেন তারেক রহমান।

শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে প্রতিবন্ধী নাগরিকের এক মতবিনিময় সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, ‘‘আমরা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ সক্ষম সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তুলতে চাই। আমি ও আমার দল বিএনপি উপলব্ধি করি আমরা … আপনাদের সমস্যা ও কষ্টগুলো বাস্তব এবং গভীর।’’

‘‘আপনাদের মনে রাখতে হবে এই বাস্তবতায় আপনারা একা নন। আমরা সব সময় আপনাদের পাশে আছি, আপনাদের পাশে ছিলাম, ইনশাল্লাহ আপনাদের পাশে আমরা থাকব। কারণ আপনাদের প্রতিবন্ধকতা আমাদের সবার প্রতিবন্ধকতা।”

তারেক রহমান বলেন, ‘‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি… আমরা সকলে বিশ্বাস করি… আমরা আপনাদের পেছনে রেখে আমরা কখনো এগিয়ে যেতে পারব না। আর এগুতেও আমরা চাই না। আমরা সবাই মিলে একসাথে যে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলব সেটি হবে সবার জন্য ফেয়ার, সবার জন্য ইনক্লুসিভ, সবার জন্য বসবাসযোগ্য এবং সবার জন্য উপভোগ্য যেন হয়।”

‘‘আমাদের প্রতিশ্রুতি হলো বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের মান উন্নয়নে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। যার ভিত্তি হবে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা, সামাজিক সক্ষমতা এবং মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করা। আসুন আমরা সবাই মিলে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলি যার ভিত্তি হবে বৈষম্যহীন অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং উদারতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণ। আপনাদের কল্যাণ এবং সাফল্য আমাদের অগ্রাধিকার।”

আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রতিবন্ধীদের সমস্যা সমাধানের জন্য আলাদা অধিদপ্তর গঠন, জেলা সদর হাসপাতালসমূহে বিশেষায়িত ইউনিট স্থাপন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোবাইল হেলথ ক্লিনিক চালু, প্রতিবন্ধীদের সহায়ক উপকরণসমূহ দেশে তৈরির কারখানা স্থাপন, প্রতিবন্ধী শিশুদের শারীরিক সক্ষমতা গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট…প্রান্তিক থেকে কেন্দ্রীয় পর্যন্ত খেলাধুলার সিস্টেমেটিক ডেভেলপমেন্ট এবং টুর্নামেন্টের মাধ্যমে প্যারা অলিম্পিকের সহায়তা করা হবে বলে জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এলজিইডি-আরডিইসি ভবনের মিলনায়তনে প্রতিবন্ধী নাগরিকদের এই মতবিনিময় সভা হয়। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত করে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তারেক রহমান।

অনুষ্ঠানে মুক্ত আলোচনায় বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, শারীরিক প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক প্রতিবন্ধীরা তাদের দুঃখ-বেদনা এবং প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইনের সংশোধনসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধীদের বক্তব্য শুনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘আজকে এখানে এসে আমার কাছে নতুন জগত উন্মোচিত হয়েছে, এখানে না আসলে এর সাথে পরিচিত হতে পারতাম না…।”

‘‘আমরা আপনাদের সহযাত্রী। ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আপনাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

‘প্রতিবন্ধীরা অনুকরণীয়’

তারেক রহমান বলেন, ‘‘আমরা যারা আপনাদের মতন কঠিন শারীরিক বা মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হইনি তারা কিন্তু অনেক সময় বুঝতে পারি না আমরা… কী অসীম বাধা অতিক্রম করে আপনারা স্বপ্ন দেখেন এবং আমাদের স্বপ্ন দেখান বা দেখতে শিখান।”

‘‘আপনারা আমাদের মনে করিয়ে দেন যে, সব অক্ষমতাকে জয় করে সমাজে প্রতিটি মানুষ মাথা উঁচু করে সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চায় এবং দৃঢ়তার সাথে সসম্মানে বাঁচতে চায়… আপনাদের সেই সাহস সংকল্প ও শক্তি আমাদের জন্য, অনেক মানুষের জন্য প্রেরণার উৎস। এটি আমাদের উদ্বুদ্ধ করে সাম্য মানবিক, সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক একটা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলা লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যেতে।”

প্রতিবন্ধীদের সাফল্য হিসেবে পটুয়াখালী একজন বাকপ্রতিবন্ধী, একজন শারীরিক প্রতিবন্ধীর মৌলভীবাজারে একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এবং কুমিল্লার একজন চলার শক্তিহীন প্রতিবন্ধীর কাজ করে করে অর্থ উপার্জনের চারটি গল্প তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, ‘‘তাদের গল্প আমাদের শিখিয়েছে বাধা শুধু একটি শব্দ যা চেষ্টার মাধ্যমে জয় করা সম্ভব। আমাদের দায়িত্ব তাদের লড়াইকে সম্মান জানানো, তাদের পাশে দাঁড়ানো।”

‘‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই বা গড়ার পরিকল্পনা করি যেখানে প্রতিটি মানুষ তার সীমাবদ্ধতাকে জয় করে নিজের স্বপ্ন পূরণের সুযোগ পাবে। শারীরিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেও যারা নিজ উদ্যোগে অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন তাদের বিজয়ের গল্প আমাদের আলোর পথ দেখায়। আমি একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিতে চাই, আগামীর বাংলাদেশে শারীরিক সীমাবদ্ধতার কারণে যেন কাউকে বৈষম্যের শিকার না হতে হয়, পিছিয়ে না রাখে… সেই বহুমুখী উদ্যোগে নিয়ে জীবন যুদ্ধে বিজয়ের অজস্র গল্প সৃষ্টি করা হবে। একসাথে কাজ করে আমরা একটি সমাজ গড়ে তুলতে চাই, ইচ্ছা রাখি যেখানে প্রতিটি মানুষ তার পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছাতে পারে ইনশাল্লাহ।”

বিগত ১৬ বছরের মানুষজন বঞ্চনা, অবহেলা ও নির্যাতনের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘আমি এতটুকু বলতে চাই, আমি ও বিএনপি ভবিষ্যতে জনগণের সমর্থনে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে… আমরা সব সময় আপনাদের পাশে থাকব।”

‘‘আমি বিশ্বাস করি আপনারা কেউ প্রতিবন্ধী নন বরং আপনারা বিশেষভাবে সক্ষম নাগরিক। আপনাদের প্রত্যেকের রয়েছে অসীম সক্ষমতা। নির্বাচিত হলে বিএনপি নিশ্চিত করবে দেশের অন্যান্য সকল নাগরিকের মতো আপনাদের নাগরিক অধিকার, সুযোগ-সুবিধা সঠিকভাবে এবং সমানভাবে পৌঁছে দেওয়ার। আপনাদের চিকিৎসা, শিক্ষার সুযোগ, চাকরির ক্ষেত্রে সমান সুযোগ এবং দেশের প্রতিটি স্থাপনা ও যাতায়াত ব্যবস্থাকে আপনাদের জন্য এক্সেসেসবল করে গড়ে তোলার সর্বোচ্চ চেষ্টা আমাদের থাকবে।”

প্রতিবন্ধী নাগরিক পরিষদের সালমা মাহবুব এবং ইফতেখার মাহবুবের সঞ্চালনায় সভায় বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক পারভেজ রেজা কাকনসহ দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।