সন্ত্রাস বিরোধ আইনের মামলায় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি নিশীতা ইকবাল নদীসহ চার জনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালত শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন।
রিমান্ডে যাওয়া অপর আসামিরা হলেন- বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলের ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলফাতারা কাজল, এআইইউব বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগকর্মী শোভন মজুমদার ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগকর্মী হাসান ইমাম শোভন।
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার সাব-ইন্সপেক্টর তারেক মোহাম্মদ মাসুদ তাদের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, ‘‘ফ্যাসিবাদ দেশে নেই। পাশের দেশে থেকে উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে। এরা ফলোআপ করছে। ধানমন্ডি-৩২ এর আশপাশে তারা ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করছে। দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ব্যাঘাতে বসে নেই তারা। গত ১৫ বছর কী করছে তারা। তাদের কোনো অনুশোচনা, ফিলিংস নেই। তাদের সর্বোচ্চ রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।’’
আসামিদের পক্ষে ফারজানা ইয়াসমিন (রাখি) রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, ‘‘হাসান ইমাম শোভন চাকরিজীবী। তার ডকুমেন্ট আছে। শোভন মজুমদার সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার। ওই বাসায় সাবলেট হিসেবে আছে। পদ-পদবি না পাওয়া সত্ত্বেও ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে ধরে নিয়ে এসেছে। যে কাউকে ধরে এনে ট্যাগ দেওয়া যায়।’’
নদীর বিষয়ে বলেন, ‘‘২০১৮ সালের পরে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। তিনি চাকরিজীবী। ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে বলে ছাত্রলীগের তোপের মুখে পড়েন। আর সংগঠন করা অপরাধ না। তারা জয় বাংলা স্লোগান দিয়েছেন। ছাত্রলীগের ব্যানার ব্যবহার করেনি।’’
এরপর ফারজানা ইয়াসমিন (রাখি) বলেন, ‘‘আসামিরা কিছু বলতে চান।’’ আদালত তাদের বক্তব্য শোনেন।
প্রথমে হাসান ইমাম শোভন বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে তিনটা প্রশ্ন আছে। এ সময় আইনজীবীরা বলেন, এটা প্রশ্ন করার জায়গা না। পরে তিনি বলেন, ‘‘ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম। মিছিল থেকে শুরু করে ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছি। এ কারণে অফিস থেকে শুরু করে সর্বত্র তোপের মুখে পড়ি। চাকরিও ছাড়তে হয়। ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে আসে। পরে এ মামলায় আসামি করেছে।’’
শোভন মজুমদার বলেন, ‘‘তিন মাসে আগে ওই বাসায় সাবলেট হিসেবে উঠি। রাজনীতির সাথে জড়িত না।’’
নদী বলেন, ‘‘২০১৮ সালের পর থেকে আমি সাবেক। জুলাই-আগস্টে ছাত্রদের পক্ষে স্ট্যাটাস দিয়েছি। জয় বাংলা স্লোগান প্রত্যাহার করায় মিছিলে যাই। বাঙালি হিসেবে যে স্লোগান সবার আগে আসে এটা প্রত্যাহার করায় মিছিল করি। এটা দলীয় স্লোগান ছিল না। জয় বাংলা নিষেধ এমন তো না।’’
এরপর আলফাতারা কাজল বলেন, ‘‘২০২১ সালের আগস্টে পড়াশোনা শেষ করি। এরপর বিসিএসসহ বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা দেওয়া শুরু করি। এলাকায় চলে যাই। জুলাই-আগস্টে এলাকায় ছিলাম। চাকরির পরীক্ষা দিতে ঢাকায় আসি। আপুর (বেনজীর আহমেদ নিশি) বাসা উঠি। আপুকে না পেয়ে আমাকে নিয়ে এসেছে।’’
এরপর নদী আবার বলেন, ‘‘আমি কর্পোরেট জব করি। রাজনীতির সাথে ন্যূনতম সম্পৃক্ততা নেই। আজ দুপুরেও ইন্টারভিউ ছিল। দিতে পারলাম না। রাজনীতির সাথে আমার সম্পৃক্ততা নেই, ভবিষ্যতেও থাকব না।’’
এরপর ওমর ফারুক বলেন, ‘‘একজন এজাহারনামীয় আসামি, বাকিরা সন্দিগ্ধ। পুলিশ তদন্ত করছে। আগের ফ্যাসিস্টের পুলিশ নেই। ভিডিও দেখে তাদের গ্রেপ্তার করেছে।’’
তখন নদী বলেন, ‘‘ভিডিওতে তিনজনের কেউ তো নেই।’’ তখন অন্য তিনজন বলেন, ‘‘আমরা তো ভিডিওতে নেই।’’ পরে ওমর ফারুক বলেন, ‘‘তাদের পদগুলো নেটের মাধ্যমে বের করা হয়েছে।’’ তখন নদী হিন্দিতে বলেন, ‘‘কুচ ভি।’’
এ কথা শুনে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘‘আর বইলেন না। ইন্ডিয়াকে নিয়ে বিপদে আছি।’’ তখন নদী বলেন, ‘‘এটার মধ্যে পলিটিক্স ঢুকায়েন না।’’ জবাবে আইনজীবী বলেন, ‘‘রাজনীতির পদ-পদবি আছে; আবার বলেন, রাজনীতি ঢুকায়েন না। এ দেশে ভালো না লাগলে ইন্ডিয়া চলে যান।’’
পরে আদালত প্রত্যেকের দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।