বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেছেন, ‘‘৫৩ বছরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে ২০২৪ সালে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। আমরা বলতে চাই, একাত্তরে যারা পরাজিত হয়েছিল, জনগণ যাদের পরাজিত করেছিল পরবর্তীকালে শাসকশ্রেণী তাদের পুনর্বাসিত করেছে। ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে জনগণ যাদের পরাজিত করেছিল, তাদেরও আবার শাসকশ্রেণী পুনর্বাসিত করেছে। আমাদের আকাঙ্ক্ষা থাকবে, ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে যাদের পরাজিত করল জনগণ, সেই শক্তি যেন পুনর্বাসিত না হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের চেতনা সাম্যের বাংলাদেশ, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠিত করতে পারি এটাই হোক এই বিজয় দিবসের অঙ্গীকার।’’
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা জানাতে এসে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় ঐক্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘আমরা বলতে চাই, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণঅভ্যুত্থানের যে চেতনা, সেটার ভিত্তিতে জনগণের ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। কারণ এখানে বিভিন্ন দল বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি আছে, বিভিন্ন আদর্শ আছে বা আদর্শ আছে, মত-পথের পার্থক্য আছে; জনগণের মধ্যে যে একটা গণঐক্য গণঅভ্যুত্থানকালে সংঘটিত হয়েছে, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হয়েছে; সেই ধরনের জনগণের একটা গণঐক্য গড়ে তোলার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।’’
তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন হল একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ। নির্বাচন হলেই গণতন্ত্র হয় এটা আমরা মনে করি না। কারণ জার্মানিতে হিটলার, ইতালিতে বসুলিলি, তারাও নির্বাচিত হয়েছিল। কিন্তু তারা গণতন্ত্র করেনি, ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল। আমাদের দেশে হাসিনা নির্বাচনের নামে যেভাবেই করুক না কেন, সে নির্বাচনের নামে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন কায়েম করেছিল। এজন্য নির্বাচনটা গণতন্ত্রের একটা উপসর্গ, যে কারণে জনগণ গত তিন নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। জনগণ ভোটাধিকার ফিরে পেতে চায়। ভোটাধিকারের জন্যই লড়াই করেছে, এই অভ্যুত্থান সংঘটিত করেছে। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রথমেই বলেছিলাম, আমাদের পার্টি বাসাদের পক্ষ থেকে, যে আপনি একটা টাইম লিমিট ঘোষণা করেন। কী সংস্কার করবেন কত দিনে করবেন এবং কতদিন নির্বাচন করবেন! এটা না হলে মানুষের মধ্যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়, অবিশ্বাস তৈরি হয়। আর একটা অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে পারে না। সংবিধানও সেটা সম্মতি দেয় না। কারণ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারাই আমাদের দেশ পরিচালিত হবে, এটাই আমাদের সাংবিধানিক অঙ্গীকার। সেজন্য আমরা মনে করি যে যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচনের তারিখটা ঘোষণা করা হোক।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমলাতন্ত্রের ওপরে ও পুলিশ বাহিনীর ওপরে নির্ভর করতে হচ্ছে। জনগণের সমর্থন তাদের পুঁজি। যে কারণে পুলিশ প্রশাসন এখনো পর্যন্ত পুরোপুরি অ্যাকটিভ না। আমলাতন্ত্র সিভিল প্রশাসন তারাও পুরোপুরি এই সরকারকে সহযোগিতা করছে বলে আমরা মনে করি না। এই সরকারের যেটা অদ্ভুত অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার ছিল, সেই কাজে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। আহত নিহতদের তালিকা করে তাদের ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসন, সেই কাজটাতেও দৃশ্যমান তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। তারপরই আসে জনগণের যে মূল সমস্যা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সিন্ডিকেট তারা ভাঙতে পারেনি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সেটাও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। অনেকগুলো ব্যর্থতা আছে। তবে সংস্কারের জন্য কয়েকটা কমিটি করেছে। সেই কমিটি সুপারিশগুলো ডিসেম্বরের মধ্যে দেওয়ার কথা, বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দেওয়ার কথা। সেগুলো দিলে দেখা যাক, সেগুলো নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করব। এজন্য আগে বলছিলাম কী সংস্কার করতে চান বলেন, তাহলে আমরা বলতে পারব এগুলো আপনার বেশি কিছু করার দরকার নেই। আপনি এইটা এইটা করেন। নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন ততটুকু করেন। এই সরকারের ব্যর্থতার অনেক বহর রয়েছে। তবে চার মাস তো বেশি সময় না, ১৫ বছরের জঞ্জাল আর যদি ৫৩ বছরের বলি, সেটা এই চার মাসে সরানো সম্ভব না।’’