দেশের ভ্যাট ব্যবস্থাকে রাজস্ব ও ব্যবসাবান্ধব করে গড়ে তুলতে এর সহজ করা প্রয়োজন। মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নের মাধ্যমে এ খাতের উন্নয়ন সম্ভব হবে। আর এজন্য প্রয়োজন স্মার্ট ভ্যাট কাঠামো, যেখানে তথ্যপ্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
মহান বিজয় দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উপলক্ষে ভ্যাট ব্যবসায়ীবান্ধব করা এবং এ সংক্রান্ত আইনের খুঁটিনাটি নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। দ্য রিয়েল কনসালটেশন তাদের কার্যালয়ে এই সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন ভ্যাটবন্ধু হিসেবে খ্যাত দ্য রিয়াল কনসালটেশনের (টিআরসি) প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান পরামর্শক মো. আলিমুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন ভ্যাট কনসালটেন্ট মাসুদুর রহমান।
প্রধান অতিথি উপস্থিত ছিলেন হাতিল কমপ্লেক্স লিমিটেডের পরিচালক মাহফুজুর রহমান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যাট কর্মকর্তা, ভ্যাট কনসালটেন্ট এবং দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীরা।
মো. আলিমুজ্জামান তার বক্তব্যে বলেন, ‘‘একজন দক্ষ ভ্যাট পেশাজীবী পারে সঠিক ভ্যাট ব্যবস্থাপনার দ্বারা ব্যবসার উন্নয়ন, সরকারের সঠিক ভ্যাট প্রাপ্তির নিশ্চয়তা প্রদান করতে। সেটা তিনি কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী বা ভ্যাট কনসালটেন্ট হোন না কেন। উন্নত দেশগুলোতে ভ্যাট কনসালটেন্টরা অথরিটির সাথে মূল বার্গেনিং গ্রুপ হিসেবে কাজ করে। যারা ব্যবসায়ী ও সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভ্যাট কনসালট্যান্ট গ্রুপ তৈরি হয়নি বলে ব্যবসায়ী ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মধ্যে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। যা ন্যায্য ভ্যাট আদায়ের মূল প্রতিবন্ধকতার বলে ধারণা করা হয়।’’
এ সময় ভ্যাট প্রফেশনালদের কাজের দক্ষতা, ব্যবসায় ভ্যাট ব্যবস্থাপনা ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অডিট কার্যক্রম সহজ করার লক্ষ্যে ভ্যাট প্রোফেশনাল গাইড লাইন তৈরির পরামর্শ দেন টিআরসির লিড কনসালট্যান্ট মো. আলীমুজ্জামান। এ সময় তিনি একটি গাইড লাইন উপস্থাপনও করেন।
সেমিনারে ব্যারিস্টার ফয়েজ আহম্মেদ বলেন, নতুন পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহের ক্ষেত্রে আইনের বিধান অনুযায়ী ফরম মূসক ৪.৩ যথাসময়ে দাখিল করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু নতুন পণ্যের ক্ষেত্রে বর্ধিত সময়সীমা প্রযোজ্য হবে না বলা আছে। আইনের এই বিষয়গুলো নিয়ে সবার পরিস্কার ধারণা থাকা প্রয়োজন। আবার, মূসক ৪.৩ মূল্য ঘোষণা কী না তা নিয়েও অনেকে বিতর্ক তুলেন।
ভ্যাট কনসালটেন্ট আহসান হাবিব তার আলোচনায় সুপারসপের ভ্যাট, নিবন্ধনে বিলম্বের বিভিন্ন বিষয়, পাঁচ বছর অ্যানুয়াল ভ্যাট অডিট রিপোর্টার হেড অনুসারে ভ্যাট, আইন জটিলতাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘‘নন-কমপ্লায়েন্স প্রতিষ্ঠানের সাথে ব্যবসায় করা কত কঠিন। বিজয় দিবসের অঙ্গীকার হোক- ভ্যাটের পরিধি বৃদ্ধি করে অধিক ভ্যাট আদায়ের পদ্ধতি সর্ম্পকে এনবিআরকে পরামর্শ দেওয়া।’’
মাসুদুর রহমান সভাপতির ভাষণে বলেন, ‘‘ব্যবসা ও অ্যাকাউন্টস সিস্টেম যদি ভ্যাট কমপ্লায়েন্সের সাথে অমিল থাকে, তাহলে ভ্যাট হয়রানিমুক্ত ব্যবসা করা যাবে না। এনবিআরকে সহযোগিতা করা ছাড়া ভ্যাট আদায়ের পরিধি বাড়ানো সম্ভব নয়।’’
সেমিনারে উপস্থিত সবার সম্মতিক্রমে ভ্যাট প্রফেশনালদের নিয়ে একটি ফোরাম গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়।
এই ফোরামের প্রধান কার্যক্রম হিসেবে কিছু প্রস্তাব রাখা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- প্রতি মাসে অনলাইন সেমিনার করা ও মাঠ পর্যায়ে কাজ করাদের সমস্যার বাস্তবভিত্তিক সমাধান দেওয়া, ভ্যাট আইনের সাংঘর্ষিক কিছু বা আইনের জটিলতা তৈরি হলে তা সমাধানে এনবিআরের সাথে যোগাযোগ করা, গাইড লাইন অনুসারে ভ্যাট প্রফেশনালদের দক্ষ করা ও ব্যবসায়ীদের কমপ্লায়েন্স হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া, এনবিআর সে গাইডলাইন অনুসরণ করে অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করা ও ভ্যাট দায় তৈরি না হলে হয়রানি করা হবে মর্মে সার্টিফিকেট দেওয়া, এবং ব্যবসায়ের সেক্টর ধরে ভ্যাটের নীতিমালা তৈরি ও ভ্যাট আদায়ের পরিধি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ায় এনবিআরকে সহযোগিতা করা।
আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের আলাদা কমিটিসহ কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা এবং আগামী মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকার সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করারও সিদ্ধান্ত হয়।