রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনে যেকোন ধরনের অডিট করতে পারবেন মহা হিসাব নিরীক্ষক। ‘পাবলিক অডিট বিল ২০২৪’-এর খসড়ায় মহা হিসাব নিরীক্ষককে এ ধরনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে এ ধরণের একটি খসড়া প্রণয়ন করেছে।
বিলটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মিতব্যয়িতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনা এবং অডিটের মাধ্যমে সরকারি সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশে ও বিশ্বব্যাপী অডিট কার্যক্রমের সমকালীন সংস্কারগুলো অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে এ বিল প্রণয়ন করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বিধানাবলী প্রতিপালন করে যে উদ্দেশ্যে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা মিতব্যয়িতা ও দক্ষতার সঙ্গে ব্যয়পূর্বক হিসাবভুক্ত করা হয়েছে কি না, সকল রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন-বাণিজ্য-লাভক্ষতি ও ব্যালেন্স শিটসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর রক্ষিত সকল হিসাব; সরকারি-বেসরকারি যে কোন অংশীদারিত্ব বা পিপিপি চুক্তি-বেসরকারি অংশীদার নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং এর আওতায় গৃহীত প্রকল্পসমূহ এবং সরকারি অর্থায়ন সুবিধাপ্রাপ্ত যে কোন বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) ব্যয় ও প্রাপ্তি অডিট করা যাবে।
খসড়ায় অডিট কার্যক্রমকে ৭টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে-ব্যয় ও পরিশোধ সংক্রান্ত অডিট; রাজস্ব ও প্রাপ্তি সংক্রান্ত অডিট; ভান্ডার ও মজুত সংক্রান্ত অডিট; সম্পদ ও দায় সংক্রান্ত অডিট; সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব ব্যবস্থা সংক্রান্ত অডিট; বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থায় প্রদত্ত সরকারি অর্থের বিষয়ে অডিট কার্যক্রম এবং মিতব্যয়িতা-দক্ষতা ও ফলপ্রসূতা অডিট।
ব্যয় ও পরিশোধ সংক্রান্ত অডিটের বিষয়ে খসড়া বিলে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের সরকারি হিসাব থেকে পরিশোধিত সকল অর্থের অডিট করা যাবে।
রাজস্ব ও প্রাপ্তি সংক্রান্ত অডিটের বিষয়ে বলা হয়েছে, যে সকল রাজস্ব সংযুক্ত তহবিলে প্রাপ্য তা যথাযথ ও সঠিকভাবে নির্ধারণ, জমা ও হিসাবভুক্ত হয়েছে কি না; রাজস্ব নিরূপণ সম্পর্কিত আইন, বিধি ও পদ্ধতিগুলো পরিপূর্ণভাবে প্রতিপালিত হয়েছে কি না; সরকারের রাজস্বসমূহ যথা-কর ও কর ব্যতীত রাজস্ব ইত্যাদি যথাযথ নিরূপণ এবং এগুলো আদায়ে পর্যাপ্ত পদ্ধতি ও ব্যবস্থা রয়েছে কি না; প্রজাতন্ত্রের সরকারি হিসাবের প্রাপ্তিসমূহ প্রযোজ্য আইন বিধি ও পদ্ধতি অনুযায়ী যথাযথ ও সঠিকভাবে জমা ও হিসাবভুক্ত হয়েছে কি না-তা মহা হিসাব নিরীক্ষক যাচাই করে দেখবেন।
ভান্ডার ও মজুত সংক্রান্ত অডিটের বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, এর আওতায় মহা হিসাব নিরীক্ষক সকল নিরীক্ষাধীন প্রতিষ্ঠানে রক্ষিত ভান্ডার ও মজুত অডিট করতে পারবেন।
সম্পদ ও দায় সংক্রান্ত অডিটের বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকারের সম্পদ ও দায় সম্বলিত সরকারি হিসাবসমূহের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন স্থিতি এবং নগদ স্থিতি অডিট করা যাবে।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব ব্যবস্থা সংক্রান্ত অডিটের বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, মহা হিসাব নিরীক্ষক বাংলাদেশ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব আইন ২০১৫-এর আওতায় অংশীদারিত্ব চুক্তি বা পিপিপি চুক্তি, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব ব্যবস্থা, বেসরকারি অংশীদার নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে গৃহীত প্রকল্পগুলোর লক্ষ্য অর্জন সংক্রান্ত বিষয় অডিট করতে পারবেন।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থায় প্রদত্ত সরকারি অর্থের বিষয়ে অডিট কার্যক্রমের বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা (এনজিও, ফাউন্ডেশন, ট্রাস্ট, চ্যারিটি, সুশীল সমাজ সংগঠন) যার সঙ্গে সরকারের সরাসরি কোন স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা নেই, সে ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠানে কোনো অর্থবছরে সংযুক্ত তহবিল থেকে কোনো ঋণ বা সাহায্য-মঞ্জুরী প্রদান করা হলে ওই প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার ব্যয় ও প্রাপ্তি অডিট করা যাবে। বিশেষত ওই অর্থ প্রাপ্তির শর্ত ও ব্যয়ের যথার্থতা অনুসন্ধান, পরীক্ষা ও যাচাই করা যাবে। তবে বিদেশি রাষ্ট্র কিংবা আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তহবিলের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে না।