অর্থনীতি

দুই কার্গো এলএনজি আমদানি করবে সরকার, ব্যয় এক হাজার ১৩৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা

দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে পৃথক দুটি আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে দুই কার্গো এলনজি আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে এক হাজার ১৩৩ কোটি ৭৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।

দেশের বিদ্যমান ও ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে দেশীয় উৎপাদিত গ্যাসের পাশাপাশি কক্সবাজারের মহেশখালীতে স্থাপিত দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মাধ্যমে জি টু জি ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় কাতার থেকে ২.৫ এমটিপিএ (মিলিয়ন টন পার এনাম) এবং ওমান হতে ১.০ এমটিপিএ এলএনজি অর্থাৎ মোট ৩.৫ এমটিপিএ (৫৬ কার্গো) এলএনজি ক্রয় করা হচ্ছে।

এছাড়া, চাহিদার আলোকে অ্যানেয়াল ডেলিভারি প্রোগ্রামের (এডিপি) আওতায় স্পট মার্কেট থেকেও এলএনজি ক্রয় করা হয়।

জানুয়ারি-ডিসেম্বর ২০২৫ সময়ে স্পট মার্কেট থেকে ৫৯ কার্গো এলএনজি আমদানির লক্ষ্যে গত ৪ নভেম্বর  জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অনুমোদন দেওয়া হয়। আগামী ৩০-৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ সময়ের জন্য (২০২৪ সালের ৩৯তম) তিন বার কোটেশন আহ্বান করে কাঙ্খিত সংখ্যক কোটেশন না পাওয়ায় এবং পর্যাপ্ত সময় না থাকায় গ্যাসের সরবরাহ নির্বিঘ্ন রাখার জন্য ২০২৪ সালের ৩৯তম কার্গোর পরিবর্তে আগামী ৫-৬ জানুয়ারি ২০২৫ সময়ে এক কার্গো এলএনজি (২০২৫ সালের ৩য় কার্গো) ক্রয়ের জন্য পেট্রোবাংলা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সে অনুযায়ী পেট্রোবাংলা আগামী ২০২৫ সালের ০৫-০৬ জানুয়ারি সময়ে এক কার্গো এলএনজি ক্রয়ের প্রস্তাব পাঠায়। গত ১১ডিসেম্বর কোটেশন আহ্বান করে মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ (এমএসপিএ) স্বাক্ষরকারী ২৩টি প্রতিষ্ঠানকে এলএসপি সফটওয়্যারের মাধ্যমে কোটেশন দাখিলের জন্য ই-মেইলে চিঠি পাঠানো হয়। দর প্রস্তাবকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে দাখিলকৃত চারটি কোটেশন দরপত্র ও প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি কারিগরি ও আর্থিকভাবে মূল্যায়ন করে সুপারিশ সম্বলিত একটি প্রতিবেদন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কাছে দাখিল করে। দাখিলকৃত চারটি কোটেশনের মধ্যে চারটি কোটেশন রেসপন্সিভ হয়।

এই ৪টি প্রতিষ্ঠানের দাখিলকৃত দর বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১ম সর্বনিম্ন প্রস্তাবিত একক দর ১৩.৮৭০০ মার্কিন ডলার/এমএমবিটিইউ যা  মেসার্স টোটালএনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড, সুইজারল্যান্ড দাখিল করেছে। প্রতিষ্ঠানটির সরবরাহতব্য এলএনজির পরিমাণ ৩২,০০,০০০ এমএমবিটিইউ। স্বাক্ষরিত এমএসপিএ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৫% কম-বেশি। সরবরাহতব্য এলএনজির পরিমাণ সর্বোচ্চ ৩৩,৬০,০০০ এমএমবিটিইউ হতে পারে। প্রতি এমএমবিটিইউ ১৩.৮৭০০ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩৩,৬০,০০০ এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ ৪৬,৬০৩,২০০,০০ মার্কিন ডলার (ভ্যাট এবং এআইটি ব্যতিত)। গত ১৫ ডিসেম্বর সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এর মুদ্রা বিনিময় হার ১ মার্কিন ডলার= ১২০,০০ টাকা হিসেবে এ অর্থের পরিমাণ ৫৫৯,২৩,৮৪,০০০,০০ টাকা (ভ্যাট এবং এআইটি ব্যতিত)। এলএনজি আমদানিতে ১৫% ভ্যাট এবং ২% এআইটি প্রযোজ্য বিবেচনায় সর্বমোট ১৭% ভ্যাট এবং এআইটির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ ৯৫ কোটি ৭ লাখ ৫ হাজার ২৮০ টাকা। অর্থাৎ ৩৩,৬০,০০০ এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ হবে সর্বমোট ৬৫৪ কোটি ৩০ লাখ ৮৯ হাজার ২৮০ টাকা (ভ্যাট এবং এআইটিসহ)।

এছাড়া আগামী ০৯-১০ জানুয়ারি ২০২৫ সময়ের জন্য এক কার্গো এলএনজি ক্রয়ের প্রস্তাব দিয়েছে পেট্রোবাংলা। আগামী জানুয়ারি-ডিসেম্বর ২০২৫ সময়ে স্পট মার্কেট থেকে ৫৯ কার্গো এলএনজি আমদানির লক্ষ্যে গত ৪ নভেম্বর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অনুমোদন দেওয়া হয়। সে প্রেক্ষিতে পেট্রোবাংলা আগামী ০৯-১০ জানুয়ারি সময়ে এক কার্গো এলএনজি ক্রয়ের পঠায়।

‘পিপিআর-২০০৮'-এর বিধি-৮৫ অনুযায়ী গত ০৩-১২-২০২৪ কোটেশন আহ্বান করা হলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কোটেশন না পাওয়ায় এলএনজি কার্গো ক্রয়ের পরবর্তী কার্যক্রম প্রহণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে গত ১১-১২-২০২৪ আবার কোটেশন আহ্বান করে এমএসপিএ স্বাক্ষরকারী ২৩টি প্রতিষ্ঠানকে এলএসপি সফটওয়্যারের মাধ্যমে কোটেশন দাখিলের জন্য ই-মেইলে চিঠি পাঠানো হয়। দর প্রস্তাবকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নির্ধারিত সময়ে দাখিলকৃত তিনটি কোটেশন দরপত্র ও প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি কারিগরি ও আর্থিকভাবে মূল্যায়ন করে সুপারিশ সম্বলিত একটি প্রতিবেদন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে পাঠায়।

রেসপন্সিভ ৩টি প্রতিষ্ঠানের দাখিলকৃত দর বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১ম সর্বনিম্ন প্রস্তাবিত একক দর ১৪.২৫০০ মার্কিন ডলার/এমএমবিটিইউ যা মেসার্স টোটালএনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড লন্ডন. মেরিন-জেনেভা ব্রাঞ্চ, সুইজারল্যান্ড দাখিল করেছে। উক্ত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরবরাহতব্য এলএনজির পরিমাণ ৩২,০০,০০০ এমএমবিটিইউ। স্বাক্ষরিত এমএসপিএ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৫% কম-বেশি বিবেচনায় সরবরাহতব্য এলএনজির পরিমাণ সর্বোচ্চ ৩৩,৬০,০০০ এমএমবিটিইউ হতে পারে। প্রতি এমএমবিটিইউ ১৪.২৫০০ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩৩,৬০,০০০ এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ ৪৭,৮৮০,০০০,০০ মার্কিন ডলার (ভ্যাট এবং এআইটি ব্যতিত)। গত ১৫ ডিসেম্বর তারিখের সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এর মুদ্রা বিনিময় হার ১ মার্কিন ডলার=১২০.০০ টাকা হিসেবে এ অর্থের পরিমাণ ৫৭৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা (ভ্যাট এবং এআইটি ব্যতিত)।

এলএনজি আমদানিতে ১৫% ভ্যাট এবং ২% এআইটি প্রযোজ্য বিবেচনায় সর্বমোট ১৭% ভ্যাট এবং এআইটির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ ৯৭,৬৭,৫২,০০০,০০ টাকা। অর্থাৎ ৩৩,৬০,০০০ এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ হবে সর্বমোট ৬৭২ কোটি ২৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা (ভ্যাট এবং এআইটিসহ)। অর্থাৎ ২ কার্গো এলএনজি আমদানিতে মোট ব্যয় হবে এক হাজার ১৩৩ কোটি ৭৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।

সূত্র জানিয়েছে, এ সংক্রান্ত দুটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে।