রাজশাহীর পবায় দুটি হিমাগার থেকে সব আলু বের করে ৩৯ টাকা কেজিদরে বিক্রি করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। পাইকারি ব্যবসায়ীরা এ আলু কিনেছেন। খোলাবাজারে এ আলু ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। গত রোববার (১৫ ডিসেম্বর) ও মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) দুটি হিমাগারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মোট ২ হাজার ৬০৬ বস্তা আলু বিক্রি করা হয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, আলুর বাজারে কয়েকদফা মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে চলমান অস্থিরতা ঠেকাতে সম্প্রতি পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। মজুত করা আলু ৩০ নভেম্বরের পর হিমাগারে রাখা যাবে না- এমন আদেশ দেওয়া হয়েছে কিন্তু পবার কয়েকটি হিমাগার নির্ধারিত সময়ের পরও বিপুল পরিমাণ আলু মজুত করে রেখেছিল।
গত রোববার সন্ধ্যায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাহিদ হাসান পবার নওহাটা পৌর এলাকার আলাইবিদিরপুর এলাকার আমান কোল্ড স্টোরেজে অভিযান চালিয়ে প্রতিটি ৬০ কেজির ৩০৬ বস্তা আলু খোলা বাজারে ৩৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে দেন। এই টাকা আলুর মালিককে দেওয়া হয়। এরপর তারা একই এলাকার রহমান ব্রাদার্স কোল্ড স্টোরেজ প্রাইভেট লিমিটেডে অভিযান চালান। তখন হিমাগারের কর্মকর্তারা পালিয়ে যান।
ওই সময় ম্যাজিস্ট্রেট ঘোষণা দিয়ে আসেন যে বিজয় দিবসের পরের দিন অর্থাৎ ১৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ফের অভিযান চালানো হবে। পরের দিন সোমবার ওই হিমাগারে দেখা যায়, আলু বের করে বিক্রি করা হচ্ছে। শ্রমিকেরা রীতিমতো আলু বাছাইয়ের কাজ করছেন। আগের দিন হিমাগারের ব্যবস্থাপক শিহাব উদ্দিন বলেছিলেন, তাদের হিমাগারে প্রায় ১ হাজার ৬০০ বস্তা আলু রয়েছে। এ আলু কৃষকের। তারা বিক্রি না করলে কিছু করার নেই।
অভিযানের সময় পালানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সন্ধ্যার পরে সাধারণত তারা চলে যান। দুইজন কর্মচারী ছিলেন। তাদের আটক করে নিয়ে গিয়ে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে এ হিমাগারে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোহরাব ২ হাজার ৩০০ বস্তা আলু জব্দ করেন। খবর পেয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা এসে আলু কেনার জন্য ভিড় করতে থাকেন। এ সময় জেলার মোহনপুর উপজেলার নন্দনহাটি এলাকার রাশেদুল হক নামের একজন ব্যবসায়ী এসে বাধ সাধেন। পরে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।
রাশেদুল হক বলেন, এ হিমাগারে তার ১২ হাজার বস্তা আলু ছিল। সর্বশেষ ১ হাজার ৫০০ বস্তা অবশিষ্ট ছিল। এগুলো তার ৩৪ টাকা কেজি দরে কেনা ছিল। হিমাগারে রেখে কেজিতে ৪৫ টাকা খরচ পড়েছে। তিনি ৪৮ টাকা থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করছিলেন। এখন তাকে ‘জবাই’ করে সেই আলু অন্য ব্যবসায়ীদের কাছে ৩৯ টাকায় বিক্রি করা হলো।
তিনি বলেন, যারা এখন আলু কিনলেন তারা তো ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করবেন। তার চেয়ে জনগণকে এ ন্যায্য দামে দিলে তিনি খুশি হতেন।
রাশেদুল বলেন, ‘‘এর আগে আমরা আলুতে লোকসান খেয়ে জমি বিক্রি করে হিমাগারের ভাড়া শোধ করেছি। তখন তো কেউ দেখেননি।’’ তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘‘আগামীবারও তাই হবে। আমি ৩০০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। এখনই কোনো হিমাগারে বুকিং নিচ্ছে না। এ আলু কোথায় রাখব। ফেলে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। আমরা আবারও পথে বসব।’’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পবার ইউএনও মো. সোহরাব হোসেন বলেন, ‘‘আমাদের দায়িত্ব হিমাগারের মজুত খালি করে দেওয়া। যাদের কাছে আলু বিক্রি করা হচ্ছে, তাদের ফোন নম্বর রেখে দিয়েছি। এ আলু ভোক্তাদের কাছে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ৪৫ টাকা দরে বিক্রি করা হবে। তারা যেখানে আলু বিক্রি করবেন, সেখানে তদারকি করা হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘এ পর্যন্ত আমাদের দায়িত্ব না। তারপরও এটা করা হবে। ইতোমধ্যে দুটি হিমাগার খালি করে ফেলা হয়েছে। অন্য হিমাগারগুলোতেও অভিযান চলবে।’’ তিনি মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পবা উপজেলার আরেকটি হিমাগারের দিকে যাচ্ছিলেন।
শুধু রাজশাহী জেলাতেই ৪৩টি হিমাগার আছে। এতে সংরক্ষণ করা যায় প্রায় ৮৫ লাখ বস্তা আলু। প্রতিবস্তায় আলু থাকে ৬০ থেকে ৬৫ কেজি। এখনও অনেক হিমাগারে আলু মজুত করে রাখা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব হিমাগার পরিদর্শনের কথা বলছে প্রশাসন। এই আলু খুচরা বাজারে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। তবে মঙ্গলবার রাজশাহীর শহরের বাজারগুলো থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোথাও পুরাতন আলু ৭০ টাকা কেজির কম দামে বিক্রি হচ্ছে না। আর নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি।