লো স্কোরিং ম্যাচে রোমাঞ্চ ছড়াল। হুট করে রং বদলানো ম্যাচে কে জিতবে তা বোঝা যাচ্ছিল না। পার্লের বোল্যান্ড পার্কে পাকিস্তান এগিয়ে থাকলেও ছাড় দচ্ছিল না দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ পর্যন্ত তীব্র লড়াই শেষে জিতেছে পাকিস্তান। আর তাদের জয়ের নায়ক স্পিন অলরাউন্ডার সালমান আগা।
সায়েব আইয়ুব সেঞ্চুরি করে প্রাথমিক কাজ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জিতিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেননি। ৪ উইকেট নেওয়ার পর সালমান ৮২ রানের ইনিংস খেলে দলকে প্রথম ওয়ানডেতে জয়ের স্বাদ দিয়েছেন। আগে ব্যাটিং করে দক্ষিণ আফ্রিকা ৯ উইকেটে ২৩৯ রান করে। জবাবে পাকিস্তান মাত্র ৩ বল আগে ৩ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে পাকিস্তান ৪ উইকেট হারায় ৬০ রানে। আব্দুল্লাহ শফিক শূন্য, বাবর আজম ২৩, রিজওয়ান ১ ও কামরান গুলাম মাত্র ৪ রানে আউট হন। বিপদে পড়া দলকে উদ্ধার করেন সায়েম ও সালমান। দুজন ১৪১ রানের জুটি গড়ে দলকে শুধু উদ্ধারই করেননি জয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে যান। এ সময়ে সায়েম তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। কিছুদিন আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১১৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। গতকাল করেন ১০৯ রান। ১১৯ বলে ১০ চার ও ৩ ছক্কায় সাজান ইনিংসটি।
জয়ের থেকে ৩৯ রান দূরে থাকতে সায়েম আউট হলে ম্যাচের গতিপথ পরিবর্তন হওয়া শুরু করে। পাকিস্তান দ্রুত আরো ৩ উইকেট হারায়। অন্যপ্রান্তে থাকা সালমানের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। কিন্তু ডানহাতি ব্যাটসম্যান মনোবল হারাননি। শেষ পর্যন্ত লড়াই করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। ৯০ বলে ৮২ রানের ইনিংসটি খেলেন ৪ চার ও ২ ছক্কায়।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের শুরুটা ভালো ছিল। দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান টনি ডি জর্জি ও রায়ান রিকেলটন ৭০ রানের জুটি গড়েন। নতুন বলে খুব সহজে দুই পেসার শাহীন শাহ আফ্রিদি ও নাসিম শাহকে সামলে নেন তারা। উইকেটের খোঁজে থাকা পাকিস্তান তৃতীয় বোলার হিসেবে বোলিংয়ে আনেন সালমান আগাকে। তার এক স্পেলেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। ১০, ১২ ও ১৪; টানা তিন ওভারে অফস্পিনার তুলে নেন ৪ উইকেট। ৭০ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর ১৮ রান যোগ হতেই নেই চার প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান।
শুরুটা টনিকে দিয়ে। ৩৩ রানে এলবিডব্লিউ হন। পরের ওভারে রিকেলটন ৩৬ রানে বোল্ড হন। নতুন দুই ব্যাটসম্যান রাইসি ভন ডার ডুসেন (৮) ও ট্রিসটান স্টাবস (১) এক ওভারে ফেরেন সাজঘরে। দ্রুত ৪ উইকেট তুলে পাকিস্তান দারুণভাবে ফিরে আসে। পঞ্চম উইকেটে অধিনায়ক আইডেন মার্করাম ও হেনরিক ক্লাসেন প্রতিরোধ গড়েন। রয়েশয়েই দুই ব্যাটসম্যান এগোতে থাকেন। বাড়তি ঝুঁকি না নিয়ে সিঙ্গেলস-ডাবলসে এগিয়ে যায় তাদের জুটি।
নিয়মিত বোলাররা কিছু যখন করতে পারেননি তখন পার্ট টাইম বোলার এনে দেন সফলতা। সায়েম আইয়ুব বোলিংয়ে এসে থামান মার্করামকে। ৫৪ বলে ৩৫ রান করেন কামরান গুলামের হাতে ক্যাচ দেন প্রোটিয়া অধিনায়ক। সেখান থেকে শুরু হয় ক্লাসেনের একার লড়াই। পরের ব্যাটসম্যানরা কেউ আর তাকে সাহায্য করতে পারেনি।
ফিফটির পর সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। দারুণ ব্যাটিংয়ে তিন অঙ্কের দেখা পেলে পেত পূর্ণতা। কিন্তু ৪৫তম ওভারে তাকে থামান আফ্রিদি। দারুণ এক ফুলার লেন্থ বল ভেতরে ঢুকিয়ে বোল্ড করেন ক্লাসেনকে। ৯৭ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ক্লাসেন ৮৬ রানের ইনিংসটি সাজান। শেষ দিকে কাগিসো রাবাদার ১১ ও ওটনেইল বার্টম্যানের ১০ রানে দক্ষিণ আফ্রিকা মাঝারি মানের পুঁজি পায়।
সালমান আগার ৪ উইকেট বাদে ২ উইকেট নেন আবরার আহমেদ। ১টি করে উইকেট পান আফ্রিদি ও সায়েম।
৩ উইকেটের জয়ে পাকিস্তান তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল। ১৯ ডিসেম্বর কেপটাউনে হবে দ্বিতীয় ওয়ানডে।