চার বছর বন্ধ থাকার পর রংপুরের ভারি শিল্প শ্যামপুর চিনিকল পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চিনিকলটি চালু করার সিদ্ধান্তের খবরে আনন্দের জোয়ার বইছে আখ চাষি ও মিলটির শ্রমিকদের মধ্যে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি তাদের দাবি, শুধু চিঠিতে নয়, দ্রুত সময়ের মধ্যে মিলটি চালু করতে উদ্যোগ নিতে হবে।
চিনিকল চালুর বিষয়ে এখনো দাপ্তরিকভাবে কোনো চিঠি পাননি বলে জানান শ্যামপুর চিনিকলের সহকারী ব্যবস্থাপক জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, “শিল্প মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিয়েছে দেশের ছয়টি চিনিকল পর্যায়ক্রমে চালু করার। বিষয়টি আমরা শুনেছি। এটি চালুর সিদ্ধান্তের খবরে এখানকার আখ চাষি, মিলের শ্রমিক থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইছে।”
গত ১৫ ডিসেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয়ের পত্রের মাধ্যমে জানা গেছে, সরকার বন্ধ হওয়া শ্যামপুর চিনিকল চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে পূর্বে দেওয়া চিনিকলটির মাড়াই কার্যক্রম স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। পত্রে আরও উল্লেখ আছে, চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের অধীনে রংপুরের শ্যামপুরসহ ছয়টি চিনিকলের মাড়াই কার্যক্রম পুনরায় চালু করার লক্ষ্যে পূর্ববর্তী স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হল।
আরো পড়ুন: চালু হচ্ছে বন্ধ থাকা পঞ্চগড় চিনিকল
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা অবস্থিত শ্যামপুর সুগার মিলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক-শ্রমিকদের আনাগোনা সেখানে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকরা চিনিকল কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার খবর নিচ্ছেন, কবে নাগাদ এর বাস্তবায়ন হবে।
শ্যামপুর আখ কল্যাণ সমিতির সভাপতি এমদাদুল হকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, “গতকাল থেকে শুনতেছি, শ্যামপুর চিনিকলটি পুনরায় চালু করা হবে। মিলটি চালু হচ্ছে এমন খবর শুনে আমরা আখ চাষিরা অনেক আনন্দিত। এই খবরটি যেন কাগজে না থেকে দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়।”
তিনি আখ চাষিদের সময়মতো ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিশেষ নজরের দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
চিনিকল চালুর বিষয়ে কী কী সঙ্কট রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে শ্যামপুর চিনিকলের সহকারী ব্যবস্থাপক জাহিদুল ইসলাম বলেন, “এক সময় এখানে ৭৭৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন। সেটি এখন ৬৯ জনে ঠেকেছে। ইঞ্জিন চালিত ট্রাক্টর ৬০টির মধ্যে ৫০টি অন্যান্য চালু থাকা চিনিকলগুলোতে পাঠানো হয়েছে। বাকিগুলো অকেজোর পথে। এছাড়া, পৌনে ২০০ ট্রলি থাকলেও এখন সেগুলো অকেজো হয়ে নিশ্চিহ্নের পথে। মিলটি চালুর সিদ্ধান্ত হলে জনবল নিয়োগ, পরিবহন ও মেশিনারিজের বিষয়গুলো আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চাহিদা আকারে প্রেরণ করব।”
এদিকে, শ্যামপুর সুগারমিল পুনরায় চালুর ঘোষণায় গতকাল মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় শ্যামপুর বাজারে আনন্দ মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও শ্রমিক-কর্মচারীরা।
রংপুর জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল বলেন, “শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠির বিষয় আমাদের কানে এসেছে। তবে চিঠিটি এখনো আমরা হাতে পায়নি। চিনিকল চালুর বিষয়টি একটি বিরাট সুসংবাদ।”
প্রসঙ্গত, শ্যামপুর চিনিকল রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুরে অবস্থিত। ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মিলটি। ১৯৬৭ সালে এখানে আখ মাড়াই শুরু হয়। চিনিকলটির দৈনিক আখ মাড়াই ক্ষমতা ছিল ১ হাজার ০১৬ মেট্রিক টন। বার্ষিক চিনি উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১০ হাজার ১৬১ মেট্রিক টন। ২০২০ সালে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) কর্তৃক পরিচালিত ১৫টি চিনিকলের মধ্যে ছয়টি বন্ধ করা হয়, যার মধ্যে শ্যামপুর চিনিকলও ছিল।