সারা বাংলা

শেখ রেহানার সেই বাংলো যেন পতনের সাক্ষী

বাংলোটি ছিল রহস্যে ঘেরা। কী আছে ওই বাংলোতে, তা নিয়ে ব্যাপক কৌতূহল ছিল মানুষের। কারণ, ভেতরে প্রবেশের সাহস ছিল না আশপাশের বাসিন্দাদের। 

এখন সেই বাংলোয় অবারিত দ্বার। চাইলেই সেখানে ঢুকতে পারেন যে কেউ। বিশাল বাংলোটি এখন খেলাধুলা ও আড্ডার স্থানে পরিণত হয়েছে। 

আলোচিত বাংলোটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার। এর অবস্থান গাজীপুরের মৌচাকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে। 

প্রতি বছর শেখ রেহানা ও শেখ হাসিনা একান্ত সময় কাটাতে আসতেন এই বাংলোতে। চলতি বছরেও দুই বোন এখানে এসেছিলেন। এছাড়াও সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জরুরি মিটিং করতেন এ বাংলোতে। এ বাংলোতে আছে ডুপ্লেক্স ভবন, শান বাঁধানো পুকুরঘাট ও বাগান। নান্দনিক সেই বাংলো এখন পোড়ার ক্ষতচিহ্ন নিয়ে টিকে আছে কোনোরকমে।  

গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পরেই বাংলোতে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। তারা বাংলোতে ঢুকে ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুন লাগিয়ে দেয়। লুট করে টিভি, ফ্যান, এসি, ফ্রিজসহ আসবাবপত্র। নষ্ট করে সব ছোটখাটো স্থাপনা। এরপর থেকেই বাংলোটি অরক্ষিত। এটি যেন শেখ পরিবারের পতনের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে।

সম্প্রতি সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাংলোটির ফটকে পাহারাদার নেই। দেয়াল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট দোকান। ফটকের পাশে অস্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে সেলুন। 

বাংলোতে প্রবেশ করতেই দেখা যায়, ডান পাশে বিশাল নারিকেল গাছ থেকে কয়েকজন কিশোর ডাব পেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। পিচ ঢালা রাস্তা ও পশ্চিম পাশের বাগান দিয়ে অনেক মানুষ হাঁটাচলা করছেন। আরেকটু সামনে বিশাল ডুপ্লেক্স ভবন। সেটি ক্ষত-বিক্ষত। দরজা-জানালাসহ কোনো আসবাবপত্র অবশিষ্ট নেই। প্রতিটি কক্ষে আগুনে পোড়ার চিহ্ন। 

ভবনের নিচ তলায় কয়েকজন কিশোরকে মোবাইল ফোনে গেমস খেলতে দেখা যায়। দোতালায় কয়েকজন যুবক দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন। ছাদে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন তরুণ খাবার রান্না করছেন। জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, “আমরা ক্রিকেট খেলতে এসেছি। অন্যরা খেলছে, আমরা রান্না করছি। খেলা শেষে খাওয়া হবে।” 

ভবনের সামনে বিশালাকৃতির পুকুর। শানবাঁধানো ঘাটে ১০-১৫ জন তরুণ বসে মোবাইল ফোনে গেমস খেলছেন। কয়েকজন পুকুরে সাঁতার কাটছেন। পুকুরপাড়ের রাস্তায় এক ব্যক্তি তার সন্তানকে সাইকেল চালানো শেখাচ্ছেন। পুকুরের পশ্চিম পাশের মাঠে যুবকরা ক্রিকেট খেলছেন। পূর্ব পাশে দলে দলে ভাগ হয়ে ফুটবল খেলছেন কিছু মানুষ। 

ফুটবল খেলতে আসা তরুণ সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমাদের এলাকা শিল্পকারখানায় ঘেরা, তেমন কোনো মাঠ নেই। এখানে অনেক জায়গা এবং সুন্দর। এজন্য আমরা এখানে খেলতে আসি। অনেকেই আসে, কেউ খেলাধুলা করেন, কেউবা আড্ডা দেন।”

এলাকাবাসী বলেন, “এই বাংলোয় শেখ রেহানা, শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অনেক বড় বড় নেতা আসতেন। মাঝেমধ্যে জাতীয় পতাকা লাগানো গাড়ি প্রবেশ করত রাতে। তখন বাংলোর চারপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি থাকত। কখনও ভোরেই গাড়িগুলো চলে যেত, কখনও দু’-এক দিন থাকতেন তারা। সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার ছিল না। শেখ হাসিনার পতনের পর হাজার হাজার মানুষ এখানে প্রবেশ করে। পরে বাংলোতে আগুন লাগিয়ে দেয়, অনেক কিছু লুটপাট করে।” 

মৌচাক এলাকার আতিকুল ইসলাম বলেন, “৫ আগস্টের পর থেকে এই বাংলো অরক্ষিত। বিভিন্ন বয়সী পোলাপান এখানে এসে খেলাধুলা করে। দূর-দূরান্ত থেকেও অনেক মানুষ ঘুরতে আসেন। শুনেছি, রাতে নাকি কিছু লোক এখানে মাদক সেবন করে।”