জাতীয়

জঙ্গিবাদের উত্থান বাংলাদেশে হবে না

আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাত হওয়ার পর বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের যে আশঙ্কা পশ্চিমে উঠেছে, তা নাকচ করে দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সাময়িকী ইকোনমিস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “আমি আপনাকে আশ্বস্ত করছি যে জঙ্গিবাদের উত্থান বাংলাদেশে হবে না।”

শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এই সাক্ষাৎকারে তিনি জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বদাতা তরুণদের নিয়ে বলেন, ‘‘ধর্মের প্রশ্নে তারা ‘নিরপেক্ষ’। তারা একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে চায়।’’

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদী তৎপরতা বহু আগে থেকেই ছিল। তবে ২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলনের পর তা প্রকট হয়ে ওঠে একের পর এক ব্লগার, শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মীর আক্রান্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে।

তার ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের ঘটে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা। আত্মঘাতী কয়েক তরুণের সেই হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২২ জন নিহত হয়।

তারপর জঙ্গি দমনে সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। একের পর এক অভিযানে অনেক জঙ্গি নিহত হয়, ধরাও পড়ে অনেকে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ইসলামি জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে বলে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

এই প্রেক্ষাপটে ইকোনমিস্টের সাংবাদিক ড. ইউনূসকে জঙ্গিবাদের উত্থানের শঙ্কা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন।

বাংলাদেশের অভ্যুত্থানে তরুণদের নেতৃত্বের দিকটি তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, “এই তরুণরা গোটা পৃথিবীকে বদলে দিতে সক্ষম। এটা একটি-দুটি দেশ বদলে দেওয়ার বিষয় নয়। তারুণ্য যে বিপুল শক্তির আধার, বাংলাদেশের ঘটনা তারই নজির।”

অভ্যুত্থানে নারী শিক্ষার্থীদের বিপুল অংশগ্রহণের দিকটি দেখিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘তাদের ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তাদের প্রতি এখন দৃষ্টি দিতে হবে, যাতে তাদের স্বপ্ন পূরণ হয়। সেই সুযোগ এখন এসেছে।’’

অভ্যূত্থানের নেতা থেকে সরকারে দায়িত্ব নিয়ে তিনজন তাদের সক্ষমতার স্বাক্ষর রেখে চলছে বলেও মন্তব্য করেন ড. ইউনূস।

যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে এই অভ্যুত্থান হয়েছে, তার দুজন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এখন উপদেষ্টা। এই ফোরামের লিয়াজোঁ কমিটির দায়িত্বে থাকা মাহফুজ আলমও উপদেষ্টার পদে রয়েছেন, যাকে এই জুলাই অভ্যুত্থানের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে পরিচিত করাচ্ছেন ড. ইউনূস।

তিনি বলেন, “তারা খুব ভালো কাজ করছে। তারা গত শতকের তরুণ নয়, তারা এই শতকের তরুণ। তাদের সক্ষমতা অন্য যে কারো চেয়ে বেশি।”

অভ্যুত্থানের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ডাকে সাড়া দিয়েই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিতে বিদেশ থেকে আসেন নোবেলজয়ী ড. ইউনূস।

তিনি এরই মধ্যে বলেছেন, জনআকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করে অর্পিত দায়িত্ব শেষ করতে চান তারা। ২০২৫ সাল কিংবা ২০২৬ সালের মাঝামাঝি নাগাদ সেই নির্বাচন হতে পারে।

নির্বাচনের পর কী করবেন, সেই প্রশ্নে ড. ইউনূস ইকোনমিস্টকে বলেন, “আমার যে মূল কাজ, তা থেকে আমাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি তো আমার কাজটি করে যাচ্ছিলাম, তা ‍উপভোগও করছিলাম।

“আমাকে তো জোর করে এই কাজে (সরকার পরিচালনা) নিয়ে আসা হয়েছে। সুতরাং আমার নিজের কাজে ফিরে যেতে পারলেই আমি খুশি। আর আমি তো জীবনভর তাই করে এসেছি। আমি সেই ক্ষেত্রেই ফিরে যাব, যা আমি বিশ্বময় গড়ে তুলেছি।”