গাজীপুরের মাওনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি আনন্দ মিছিলে গুলিবিদ্ধ হন রফিকুল ইসলাম রায়হান নামে এক যুবক। গুলিতে এক পা ঝাঁজরা হয়ে যাওয়ায় রায়হান এখন ঘরবন্দি। হুইল চেয়ারে বসেই এখন তার দিন কাটে। মা-বাবা স্ত্রী ও সন্তানসহ পুরো পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম রায়হান এখন কাজ না করতে পেরে অনেকটা অসহায় জীবনযাপন করছেন।
পিরোজপুর জেলার কাউখালি উপজেলার জোলার গাতি গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে রায়হান। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনিই বড়। সংসারে সচ্ছলতা না থাকায় এসএসসির পর সংসারের হাল ধরতে বসা হয়নি পড়ার টেবিলে। জীবিকার সন্ধানে মা-বাবাকে নিয়ে ২০১৭ সালে গাজীপুরের শ্রীপুরে মাওনা চৌরাস্তায় এসে ভাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ নেন।
জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের খবরে সারাদেশে তখন আনন্দের জোয়ার বইছে। তার ধারাবাহিকতায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সেই ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনাতেও। তখন সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি আনন্দ মিছিলে অংশ নেয় রফিকুল ইসলাম রায়হান। সেই মিছিলে চালানো হয় গুলি। আর একটি গুলি রায়হানের পা ভেদ করে বেরিয়ে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিষাদে পরিণত হয় আনন্দ মিছিল।
রায়হান রাইজিংবিডিকে বলেন, “বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে আমরা আন্দোলন করেছি। যখন দেখেছি ঢাকায় আমাদের ভাইয়েরা মারা যাচ্ছে তখন আমরা মফস্বল এলাকা মাওনাতে অনলাইন ও অফলাইনে সাধারণ জনগণকে এক করে আন্দোলন করেছি। শিল্প কারখানা বন্ধ করে রাস্তাঘাটে অবরোধ করেছি।”
তিনি আরো বলেন, “শেখ হাসিনার পলায়নের খবরে হাজারো লোক নিয়ে বিশাল মিছিল বের করি আমরা। সেখানেই গুলিবিদ্ধ হয়ে অচেতন হয়ে যাই। পরে আশপাশের লোকজন উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় আমাকে। সেখানে চিকিৎসা পাইনি। পরের দিন ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হই। চিকিৎসার জন্য ধারদেনা করে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়ে যায়।”
রায়হান আরো বলেন, “শুধু পা নয় জীবন গেলেও কোনো আক্ষেপ থাকতো না। কেননা নতুন প্রজন্মের কাছে নতুন বাংলাদেশের পরিচয় করাতে পেরেছি। এখন সবক্ষেত্রে বৈষম্যমুক্ত হলেই আমরা সার্থক। আমাদের প্রত্যাশা বাংলাদেশ ঠিক পথেই হাঁটবে।”
ব্যক্তি স্বার্থ নয় দেশের প্রয়োজনে এটা নিয়েও ভবিষ্যতের যেকোনো আন্দোলনের সামনের সারিতেই থাকবেন বলেও জানান এই যুবক।
রায়হানের বাবা ফজলুল হক বলেন, “ছেলেই ছিল সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এখন সে আর কাজ করতে পারে না। তাই বাধ্য হয়ে আমি বৃদ্ধ বয়সে ফুটপাতে কলা বিক্রি করে কোনোমতে টিকে আছি। তবে বাসা ভাড়া বাকি পড়েছে। অনেক ধার-দেনা হয়ে গেছে। এরপরও আমাদের কষ্ট নেই। সবাই সহযোগিতা করে যাচ্ছে। জুলাই ফাউন্ডেশন থেকেও সহযোগিতা করা হয়েছে। তবে স্থায়ী একটি ব্যবস্থা হলে নিশ্চয়তা পেতাম।”