শেয়ার হোল্ডারদের বদৌলতে সরকারকে পৌনে পাঁচশ কোটি টাকা ঋণ ফেরত দিয়েছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন। বাংলাদেশের সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের ঘটনা দৃষ্টান্ত বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন পরিচালনা পর্ষদ চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
রবিবার (২২ ডিসেম্বর) নগরের পতেঙ্গা এলাকার চট্টগ্রাম বোর্ড ক্লাবে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) ৪৭তম বার্ষিক সাধারণ সভায় তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘‘শেয়ারহোল্ডারদের আস্থা বিএসসির ওপর থাকায় এই কাজটি সম্ভব হয়েছে এবং এটি একটি বড় কথা। আপনারা জানেন, শেয়ার বাজারের দুর্দিনের কথা। কোনো প্রতিষ্ঠান এখন লভ্যাংশ দিতে পারছে না বিগত সময়ের চুরিচামারির কারণে। কিন্তু বিএসসি সে জায়গায় সম্মানজনক লভ্যাংশ তার শেয়ারহোল্ডারদের দিতে পেরেছে। বর্তমানে পাঁচটি জাহাজ নিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের লাভ দিয়েছে। যদিও ছয়টি জাহাজের মধ্যে একটি ইউক্রেনে ক্ষতি হয়েছে।আগামীতে এই লভ্যাংশ আরো বৃদ্ধি পাবে।’’
উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আপনারা আরো জানেন, ইতোমধ্যে বিএসসির বহরকে বড় করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সে জন্য চাইনিজ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হয়েছে। সরকার অনুমোদন দিলে আমরা চুক্তি সই করে ফেলব এবং দুই বছরের মধ্যে জাহাজগুলো পাওয়া যাবে। এ ছাড়া, শিপিং কর্পোরেশন নিজের অর্থায়নে দুইটি বাল্ক ক্যারিয়ার কিনবে। আমরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিচ্ছি যেখানে আমরা এক থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে ব্যবহার হয়েছে এমন জাহাজ কিনবো। এর মধ্যে বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাপানে দুইটি জাহাজের সন্ধান পেয়েছেন। আমি বা আমাদের প্রতিনিধি কেউ গিয়ে সব ঠিক পেলে আমরা অন দ্যা স্পট জাহাজ কিনে ফেলব। আশা করি জাপানি শিপ অবশ্যই ভালো হবে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘বিদেশি বিনিয়োগে বন্দর আরও লাভজনক প্রতিষ্ঠান হবে, বাড়বে শ্রমিকদের মজুরি।’’
৫৩ বছরে সর্বোচ্চ নীট মুনাফা রয়েছে উল্লেখ করে বিএসসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক বলেন, ‘‘৪৮৭ দশমিক ৭৪ কোটি টাকা আয় হয়েছে এই এক বছরে। এ ছাড়া অন্য খাতে আয় হয়েছে প্রায় ১০৮ দশমিক ৪৪ কোটি টাকা। সর্বমোট প্রায় ৫৯৬ দশমিক ১৯ কোটি টাকা আয় হয়েছে বিএসসির। আয়ের বিপরীতে ১৮৯ দশমিক ৬১ কোটি টাকা পরিচালনা ব্যয় হয়েছে। প্রশাসনিক ও আর্থিক খাতে ব্যয় হয়েছে ১২১ দশমিক ৯৮ কোটি টাকা। সর্বমোট ব্যয় হয়েছে ৩১১ দশমিক ৬০ কোটি টাকা। এ অর্থ বছরে কর সমন্বয়ের পর সংস্থার নীট মুনাফা হয়েছে ২৪৯ দশমিক ৬৯ কোটি টাকা।’’
২০২৩-২৪ অর্থবছরে নীট আয় বেড়েছে প্রায় তিন দশমিক ৪০ কোটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে মোট আয় হয়েছিল ৬৬৭ দশমিক ২৩ কোটি টাকা ও মোট ব্যয় হয়েছিল ৩৭৫ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা এবং কর সমন্বয়ের পর নীট মুনাফা হয়েছিল ২৪৬ দশমিক ২৯ কোটি টাকা। নীট আয় বেড়েছে প্রায় তিন দশমিক ৪০ কোটি টাকা। নীট লাভের ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।’’
গত ৩০ জুন পর্যন্ত বিএসসির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১৫২ কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার ৪০০ টাকা। এর মধ্যে সরকারের শেয়ারের পরিমাণ ৭৯ কোটি ৪৬ লাখ ৩৪ হাজার ৪০০ টাকা এবং বেসরকারি শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ারের পরিমাণ ৭৩ কোটি সাত লাখ ১৬ হাজার টাকা। সরকারের শেয়ারের সংখ্যা সাত কোটি ৯৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৪০ টি যা মোট শেয়ারের ৫২ দশমিক ১০ শতাংশ এবং বেসরকারি শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ারের সংখ্যা সাত কোটি ৩০ লাখ ৭১ হাজার ৬০০ টি যা মোট শেয়ার সংখ্যার ৪৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। এ ছাড়া মোট সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ৮১১ দশমিক ৫৩ কোটি টাকা এবং মোট বহি: দেনার পরিমাণ ২,২৫৬ দশমিক ১৬ কোটি টাকা বলেও জানান তিনি।
এতে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ, বিএসসি পরিচালনা পর্ষদ এর সদস্যবৃন্দ, শেয়ারহোল্ডাররা।