রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বিভিন্ন সময়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে ছয়জনকে স্থায়ী বহিষ্কারসহ ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। বহিষ্কৃত এ ছয়জনই সাবেক-বর্তমানসহ নিষিদ্ধ সংগঠন রাবি শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সেখানে শাস্তিপ্রাপ্তদের কারও নাম উল্লেখ ছিল না। রোববার (২২ ডিসেম্বর) রাতে তাদের সবার নাম উল্লেখ করে আরেকটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে প্রশাসন।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৫ জনই নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মী। বাকিরা সাধারণ শিক্ষার্থী। তবে কোন অপরাধে তাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে, তা বিস্তারিত জানানো হয়নি।
শাস্তির কারণ হিসেবে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে র্যাগিং, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি হামলা, ষড়যন্ত্র, ইন্ধনমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা, ভয়ভীতি, হলে সিট বাণিজ্য ও গণরুমের ছাত্রীদেরকে জোরপূর্বক শ্লোগান দিতে বাধ্য করা, হলের কক্ষের তালা ভেঙ্গে কক্ষ দখল, গভীর রাতে ছাত্রীদের ঘুম থেকে উঠিয়ে নিয়ে মিটিং করা, শিক্ষার্থীদের ব্লাকমেইল করা, জিনিসপত্র চুরি করা, দূর্ব্যবহার করা, নেশাদ্রব্য সেবন করা, উচ্চস্বরে গান-বাজনা বাজিয়ে পড়ালেখা ও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানো, রাতে নিজ কক্ষে নিয়ে গিয়ে অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো, মোবাইল ফোন, পেনড্রাইভ ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্রে তল্লাশি চালানো, হত্যার হুমকি প্রদান, নিপীড়ন ও অত্যাচার ইত্যাদি বিভিন্ন অপরাধের ধরণ ও মাত্রা ভেদে এ শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
স্থায়ী বহিষ্কারকৃতরা হলেন, নিষিদ্ধ সংগঠন রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান বাবু, সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-আল-গালিব, সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু, মাদারবক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি ও গণিত বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের জয়ন্ত কুমার রায়, মাদারবক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এবং হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী মো. মিশকাত হাসান। তাদের ছাত্রত্ব না থাকলে সনদ বাতিল করা হবে বলে জানা গেছে।
দুই বছরের জন্য বহিষ্কৃত পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন, সমাজকর্ম বিভাগের মো. শামীম রেজা, মো. আব্দুল্লাহ আত তাসরীফ, মিনহাজুল ইসলাম, মুজাহিদ আল হাসান, আরবি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের আরিফুল ইসলাম।
এক বছরের জন্য বহিষ্কৃত চার শিক্ষার্থী হলেন, সমাজকর্ম বিভাগের আলফি শাহরিন আরিয়ানা, জারিফা আহনাফ ইলমা, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের মো. আহসানুল হক (মিলন), দশর্ন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের কিশোর পাল।
ছয় মাসের জন্য বহিষ্কৃত দুই শিক্ষার্থী হলেন, সমাজকর্ম বিভাগের আনিকা আলম উষা ও মরিয়ম আক্তার শান্তা। এছাড়া ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে, মার্কেটিং বিভাগের অন্তর বিশ্বাসকে। শুধু ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে, মার্কেটিং বিভাগের মো. নাজমুল হোসেন নাবিল।
আবাসিকতা বাতিল হওয়া ১৪ জন হলেন, আইন বিভাগের তাজরীন আহমেদ খান মেধা, চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের মোছা. আশা খাতুন, ইংরেজী বিভাগের নবনীতা বিশ্বাস, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের নুসরাত জাহান পাঁপড়ি, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের নূর-ই-জান্নাত কথা, ফারিনা জামান মীম, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের লিমা খাতুন, সংস্কৃত বিভাগের বাবলী আক্তার, নৃবিজ্ঞান বিভাগের জাফরিন খান প্রিয়া, চারুকলা বিভাগের বাবলী ইসলাম নিঝুম, লোক প্রশাসন বিভাগের রাইতাহ ইসলাম, সমাজকর্ম বিভাগের কাজী উর্বী ইয়াসমিন রুপ, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের আফ্রিদা বিনতে ইকবাল।
অপরদিকে, মুচলেকা প্রদান করতে বলা হয়েছে পাঁচ শিক্ষার্থীকে। তারা হলেন, ফোকলোর বিভাগের শামীমা ইয়াসমীন জীবন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের নাছরিন আক্তার নেহা, ইতিহাস বিভাগের তানজিনা আক্তার, চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের মোছা. হুমায়রা আক্তার, চারুকলা অনুষদের মোছা. তামান্না তাসনীম অরিত্রা।
পাঁচ শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রমাণিত অপরাধের জন্য শান্তি প্রদান করা হলেও অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে পুনরায় তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তারা হলেন, সংস্কৃত বিভাগের বাবলী আক্তার, নৃবিজ্ঞান বিভাগের জাফরিন খান প্রিয়া, চারুকলা বিভাগের বাবলী ইসলাম নিঝুম, লোক প্রশাসন বিভাগের রাইতাহ ইসলাম, দর্শন বিভাগের কিশোর পাল।