পাবনার পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চুক্তির মাধ্যমে প্রায় ৪ বিলিয়ন পাউন্ড ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। অভিযোগের তদন্তে নাম এসেছে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহেনার মেয়ে ও যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের। এ ঘটনায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভা অফিসের ন্যায় ও নৈতিকতা দল।
রবিবার (২২ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, রবিবার প্রথমবার প্রকাশ্যে আসে যে- মন্ত্রিসভা অফিসের ন্যায় ও নৈতিকতা দল লেবার পার্টির ট্রেজারি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের পরিবারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে টিউলিপ সিদ্দিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এটি এমন সময়ে এল, যখন জানা গেছে যে- তাকে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত সপ্তাহে টিউলিপ সিদ্দিক (৪২), তার মা শেখ রেহানা (৬৯) এবং খালা শেখ হাসিনার (৭৭) বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে এই তদন্ত শুরু করে দুদক। আদালতে দাবি করা হয়েছিল, টিউলিপ এবং তার পরিবারের সদস্যরা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার ভুয়া কোম্পানি এবং মালয়েশিয়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, রাশিয়ার সঙ্গে ২০১৩ সালে যখন রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আলোচনা হয়, তখন এতে মধ্যস্থতা করেন টিউলিপ। যদিও ওই সময় তিনি ব্রিটেনের কোনো সরকারি দায়িত্বে ছিলেন না।
টিউলিপ বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির ইকোনমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার কাজ যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি সামাল দেওয়া।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ডাউনিং স্ট্রিটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, টিউলিপের ওপর প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের আস্থা আছে এবং দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপগুলোর দেখাশোনো করার ক্ষেত্রে তার দায়িত্ব অব্যাহত থাকবে। তিনি তার মন্ত্রীর দায়িত্ব অব্যাহত রাখবেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র জানিয়েছেন, টিউলিপ সিদ্দিকের অর্থ আত্মসাতে জড়িত থাকার যে অভিযোগ রয়েছে, সেগুলোতে তার কোনো সম্পৃক্ততা থাকার দাবিও উড়িয়ে দিয়েছেন স্টারমার।
তবে দুদকের কর্মকর্তারা যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলকে জানান, পাঁচ সদস্যের একটি তদন্তকারী দল বর্তমানে টিউলিপ সিদ্দিক এবং অন্যদের দুর্নীতির বিষয়ে সম্পর্কিত ‘দলিল-প্রমাণ’ সংগ্রহ করছেন এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অভিযুক্তদের প্রতিক্রিয়া জানতে চিঠি পাঠানোর সম্ভাবনা আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুদক এই চিঠি ঢাকায় অবস্থিত ব্রিটিশ হাইকমিশনের মাধ্যমে টিউলিপ সিদ্দিকের কাছে পাঠাতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা আরো বলেন, তারা প্রতিক্রিয়া পাওয়ার পর তদন্তকারীরা আদালতে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এফআইআরে আনুষ্ঠানিকভাবে টিউলিপ সিদ্দিককে সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করবে এবং তাকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা প্রদান করবে বাংলাদেশি পুলিশকে।
দুদকের অপর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘তদন্তটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। তদন্ত শেষ হলে আমরা সবার কাছে চিঠি পাঠাব। তাকে (টিউলিপ) জবাব দেওয়ার জন্য ডাকা হবে।’ দুদকের মহাপরিচালক আখতার হোসেন জানান, এই চিঠি টিউলিপ সিদ্দিক এবং তার পরিবারের সদস্যদের ‘আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ দেবে’।
যদি টিউলিপ সিদ্দিক সহযোগিতা না করেন, তবে তিনি হাসিনার সরকারের সদস্যদের চুরি করা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতার জন্য ব্রিটিশ সরকারের সাম্প্রতিক প্রতিশ্রুতি ক্ষুণ্ন করবেন।
এর আগে, গত অক্টোবরে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির তদন্তকারীরা দুর্নীতি দমন তদন্তগুলোতে ‘সহায়তা’ করার জন্য বাংলাদেশ সফর করেন। সম্প্রতি বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির এক এমপি পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডার্ডস কমিশনারকে লিখিতভাবে মিসেস সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চালানোর অনুরোধ করেছেন। তবে লেবার পার্টি বলেছে, ‘টিউলিপের সঙ্গে এই বিষয়ে কেউ যোগাযোগ করেনি এবং তিনি অভিযোগগুলো পুরোপুরি অস্বীকার করেন।’