আইন ও অপরাধ

সিকদার গ্রুপের স্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিকদার গ্রুপের স্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। 

সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের অবকাশকালীন বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়া এ আদেশ দেন। 

সিকদার গ্রুপের যেসব স্থাবর সম্পদ জব্দ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে, সেসবের মধ্যে আছে—রাজধানীর কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউয়ে ১২ কাঠা জমিতে ১৩ তলা ভবন। সীমান্ত স্কয়ারের একটি ফ্লোর, যা ন্যাশনাল ব্যাংকে ভাড়া দেওয়া। হাজারীবাগের সিকদার রিয়েল এস্টেট বিল্ডিং। সিকদার রিয়েল এস্টেটের ওয়েস্টার্ন কমিউনিটি সেন্টার বিল্ডিং। সীমান্ত স্কয়ারের পঞ্চম তলায় ৪ হাজার ৭০০ স্কয়ার ফুটের ফ্লোর। ধানমন্ডির জেড এইচ সিকদার উইমেন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। হাজারীবাগে একটি সাততলা ভবনের নিচতলা, চতুর্থ তলা ও পঞ্চম তলা, যা ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছে ভাড়া দেওয়া। বনানীর কামাল টাওয়ারের ১৮তলা ভবনের ৩ হাজার ৪০০ ফুট স্পেস, যা ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছে ভাড়া দেওয়া। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে সিকদার শপিং কমপ্লেক্স। পটুয়াখালীর কলাপাড়া ইউনিয়নের একটি ছয়তলা ভবনের অংশ, যা ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছে ভাড়া দেওয়া। বাগেরহাটের মোংলায় তিনতলা ভবনের নিচ তলায় ৩ হাজার বর্গফুটের স্পেস, যা বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটির কাছে ভাড়া দেওয়া। শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ তিন তলা ভবনের নিচতলা ও দোতলায় ৪ হাজার ২০০ স্কয়ার ফুটের স্পেস, যা ন্যাশনাল ব্যাংকে ভাড়া দেওয়া। শরীয়তপুরের মাধবপুরে জেড এইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবন। সীমান্ত স্কয়ারের চতুর্থ তলায় ৯ হাজার ৩৭৭ ফুট স্পেস, যা ন্যাশনাল ব্যাংকের অ্যান্টি মানিলন্ডারিং বিভাগের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। হাজারীবাগের সিকদার রিয়েল এস্টেটের দশ তলা ভবনের পঞ্চম তলা, যা ন্যাশনাল ব্যাংকের মহিলা শাখা ও কার্ড প্রসেসিং সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত।

সিকদার স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ চেয়ে আবেদন করেন দুদকের উপ-পরিচালক জি এম আহসানুল। আবেদনে বলা হয়, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নুল হক শিকদার ও ব্যাংকের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, নামে-বেনামে জনগণের আমানতকৃত অর্থ লুটপাটসহ ঘুষের বিনিময়ে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ দেওয়া ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য চার সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। অনুসন্ধানকালে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের মালিকপক্ষ কর্তৃক জনগণের আমানতকৃত হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ প্রদান ও মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে আত্মসাতের তথ্য পাওয়া যায়।

আত্মসাৎকৃত টাকা দিয়ে তারা নিজেদের, পরিবারের সদস্যদের ও নিকটাত্মীয়দের নামে-বেনামে প্রচুর সম্পদ গড়ে তুলেছেন। মালিকপক্ষ প্রভাব খাটিয়ে অর্জিত সম্পদগুলোর মধ্যে কতিপয় সম্পদ ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের বিভিন্ন অফিস ভবন, এটিএম বুথসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার দেখিয়ে চুক্তিপত্র মূলে/ চুক্তিপত্র ছাড়া অস্বাভাবিকভাবে ভাড়া আদায় করছেন। 

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় যে, আদায়কৃত ভাড়ার টাকা সিকদার পরিবারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবে, যেমন: রন হক সিকদারের মালিকানাধীন আরঅ্যান্ডআর হোল্ডিংস লিমিটেড, মাল্টিপেক্স হোল্ডিংস লিমিটেড ও পাওয়ারপ্যাক ইকোনমিক জোন; পারভীন হক সিকদারের স্বামী সালাউদ্দিন খান, মনোয়ারা হক সিকদার ও তার মালিকানাধীন সিকদার রিয়েল এস্টেট লিমিটেড এবং নাসিক হক সিকদারের নামে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের হিসাবগুলোতে নিয়মিত জমা হচ্ছে। এভাবে সিকদার পরিবারের সদস্য ও তাদের নিকটাত্মীয়রা প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংক থেকে নিয়মিত প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। 

সিকদার পরিবারের সদস্য ও তাদের নিকটাত্মীয়দের মালিকানাধীন স্থাবর সম্পদ ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের বিভিন্ন কার্যক্রমে ভাড়া প্রদান দেখিয়ে ব্যাংক থেকে অস্বাভাবিকভাবে হারে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।  

মালিকপক্ষের বেশিরভাগ সদস্য বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তারা বিদেশে অবস্থান করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ক্ষমতা দেওয়ার মাধ্যমে অর্জিত অপরাধলব্ধ স্থাবর সম্পদগুলো বিক্রি/স্থানান্তরের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

আবেদনে বলা হয়েছে, সিকদার গ্রুপের এসব স্থাবর সম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হলে রাষ্ট্রের সমূহ ক্ষতির আশঙ্কা আছে। তাই, সম্পদগুলো অবিলম্বে ক্রোক করা একান্ত আবশ্যক।