প্রথমবারের মতো রেলসেবায় যুক্ত হতে যাচ্ছে নড়াইলবাসী। সব প্রস্তুতি শেষ হওয়ায় এখন এই রেলপথে ট্রেন চলাচলের অপেক্ষায় এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ।
পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের আওতায় সোমবার (২৪ ডিসেম্বর) থেকে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বেনাপোল রুটে নড়াইল এবং লোহাগড়ার ওপর দিয়ে চলাচল শুরু করবে দুই জোড়া ট্রেন। এ ট্রেনের মাধ্যমে পূর্বের চেয়ে অনেক কম সময়ে নড়াইলে পৌঁছানো যাবে বলে মনে করছেন রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।
গত ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ রেলওয়ে মহাপরিচালকের কার্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক মো. নাহিদ হাসান খান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ট্রেন চলাচল শুরুর কথা জানানো হয়। বিজ্ঞিপ্তিতে বলা হয়, ৮২৫/৮২৬ নং জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ঢাকা-খুলনা ও ৮২৭/৮২৮ নং রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ঢাকা-বেনাপোল-লোহাগড়া রুটে চলাচল করবে।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে নড়াইল স্টেশন মাস্টার উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, নড়াইলবাসী প্রথম রেলসেবা পেতে যাচ্ছেন। খুলনা থেকে ৮২৫ নং জাহানাবাদ এক্সপ্রেস সকাল ৬টায় ছেড়ে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছাবে। ৮২৬ নং জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে রাত ৮টায় ছেড়ে ১১টা ৪০ মিনিটে খুলনায় পৌঁছাবে। ট্রেনটি নোওয়াপাড়া, সিঙ্গিয়া জংশন, নড়াইল, লোহাগড়া, কাশিয়ানী ও ভাঙ্গা জংশন স্টেশনে থামবে।
বেনাপোল থেকে ৮২৭ নং রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে ছেড়ে ঢাকায় পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে। ৮২৮ রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে দুপুর ১২টা ৪৬ মিনিটে নড়াইলে ও দুপুর ২টা ৩০ মিটিনে বেনাপোল পৌঁছাবে। ট্রেনটি যশোর, নড়াইল, কাশিয়ানী ও ভাঙ্গা জংশন স্টেশনে থামবে। প্রতি সোমবার সাপ্তাহিক ছুুটি থাকবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ১ হাজার ২২১ মিটার দীর্ঘ মধুমতি নদীর ওপর নির্মিত ‘মধুমতি রেলসেতু’ বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম রেলসেতু। ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওর্য়াকের অধীন পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্প দেশের ১০টি অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্পের অন্যতম। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার এই রেল লাইন নির্মাণ কাজের ঠিকাদার।
নড়াইল জেলায় ৪০৬ দশমিক ৭১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের অংশ হিসাবে পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের আওতায় ২০২৪ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সমাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ধরে নিয়ে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। দীর্ঘ এই রেলপথে মোট ২০টি স্টেশন রয়েছে। ৯টি জেলার ওপর দিয়ে গেছে এই রেললাইন। ব্রডগেজ এই রেললাইনে ৬৬টি বড় সেতু, ২৪৪টি ছোট সেতু ও ৩০টি লেভেল ক্রসিং গেট রয়েছে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা-নগরকান্দা-মুকসুদপুর-কাশিয়ানী-লোহাগড়া-নড়াইল ও জামদিয়া হয়ে যশোরের রুপদিয়ায় গিয়ে খুলনা-বেনাপোল ভায়া যশোর রেললাইনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এ রেল লাইন।
নড়াইলের জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান বলেন, “সমস্ত কাজ শেষ করে নড়াইলে রেলওয়ে স্টেশন এখন প্রস্তুুত ঐতিহাসিক রেলযাত্রার জন্য। ট্রেন চলাচল শুরু হলে নড়াইল জেলায় কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। দেশের বৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল, বাণিজ্যিক শহর নওয়াপাড়া ও শিল্পাঞ্চল খুলনাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের রেলপথে স্বল্প খরচে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন করতে সময় কম লাগবে। ফলে বদলে যাবে এলাকার আর্থসামাজিক চিত্র।”