ক্যাম্পাস

বন্ধ হচ্ছে ঢাবির শাহনেওয়াজ ছাত্রাবাস 

মূল ক্যাম্পাস থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শাহনেওয়াজ ছাত্রাবাসটি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাইজিংবিডি ডটকমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্যার এএফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ সহযোগী অধ্যাপক ড. কাজী মাহফুজুল হক সুপন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের কোন না কোন হলের সঙ্গে আবাসিক বা অনাবাসিক হিসেবে যুক্ত থাকতে হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য ১৪টি এবং ছাত্রীদের জন্য পাঁচটি আবাসিক হল রয়েছে। 

এছাড়া চারুকলা অনুষদ, ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট ও লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে আলাদা হোস্টেল। বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক হলও রয়েছে।

চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্রদের একমাত্র হোস্টেল শাহনেওয়াজ ছাত্রাবাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের অধীনে। ছাত্রাবাসটি আজিমপুর কবরস্থানের উত্তরে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের পাশে অবস্থিত।

চারুকলা অনুষদের অধিকাংশ বিভাগেই তত্ত্বের চেয়ে ব্যবহারিক শিক্ষার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক শিক্ষা যেমন ছবি আঁকা, কাঠের কারুশিল্প, ভাস্কর্য শিল্প ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে বেশি সময় ব্যয় করে। এ কাজের জন্য অন্য শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি জায়গা প্রয়োজন হয়। ব্যতিক্রমী এ শিক্ষা পদ্ধতির কারণে চারুকলার শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা ছাত্রাবাসে ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে ড. কাজী মাহফুজুল হক সুপন বলেন, “এই ছাত্রাবাসে নতুন করে কোনো ছাত্রকে রুম বরাদ্দ দেওয়া হবে না। ছাত্রাবাসটি ভেঙে ফেলে নতুন করে হল নির্মাণ করা হবে। এটি অনেক পুরনো পরিকল্পনা। তবে তা আগে বাস্তবায়ন হয়নি।”

ছাত্রাবাসটি বন্ধ করার বিষয়ে বেশ কয়েকটি সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বৃষ্টি হলেই ছাত্রাবাসে পানি জমে যায়। এমনকি পানি রুম পর্যন্ত উঠে যায়। মশার উপদ্রবও অনেক বেশি। ভবনটি এমনভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে, যা কোনভাবেই সংস্কার যোগ্য না।” শেখ মুজিবুর রহমান হলের নতুন ভবনটি উদ্বোধন হলেই সেখানে বর্তমান শিক্ষার্থীদের স্থানান্তরিত করা হবে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, “শাহনেওয়াজের ছাত্রদের শেখ মুজিবুর রহমান হলের নতুন ভবনে রুম বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোষাধ্যক্ষ স্যার এ ব্যাপারে একবার কথা বলেছিলেন। তবে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি।”

এদিকে শাহনেওয়াজ ছাত্রাবাস পরিবর্তন নিয়ে চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে।

ছাত্রাবাসের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের আবাসিক শিক্ষার্থী এম এ আকবর রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “এটা আমাদের জন্য বিশাল বড় একটা ক্ষতি। শুধু আমাদের জন্য না, এটা পুরো চারুকলা তথা শিল্প সংস্কৃতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্য হলে গিয়ে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় জায়গাটা যদি না পাই, তাহলে আমাদের বিকাশ হবে না। আমরা আমাদের কাজ করতে পারব না। কাজ করতে না পারলে আমরা কিছুই শিখতে পারব না। অন্যান্য শিল্পীদের সঙ্গে আমাদের একটা বিরাট বড় দূরত্ব তৈরি হবে।”

তিনি বলেন, “আমাদের সাধারণ হলে স্থানান্তর করা হলে দেখা যাবে, যারা কাঠের কাজ করেন তারা বেশি রাতেও ঠকঠক করছে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটবে। আবার তাদের কথা চিন্তা করে যদি আমরা কাজ না করি, তাহলে আমরা কিছু শিখতে পারব না। আবার যারা চিত্রাঙ্কন করেন, তারা ছবি আঁকার বিভিন্ন টুলস খোলা জায়গায় রেখেই চলে যান। এটা আমাদের চারুকলার শিক্ষার্থীরা দেখলেই বুঝবেন, এটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীরা এটা বুঝতে নাও পারেন। তারা গুরুত্বহীন ভেবে ফেলেও দিতে পারেন। যা আমাদের জন্য খুবই অস্বস্তিকর।

তিনি আরও বলেন, “শাহনেওয়াজ ছাত্রাবাসের বর্তমান ভবনটি ভেঙে ফেলে নতুন হল নির্মাণ করলে সেখানে চারুকলার অন্তত ৫০০ শিক্ষার্থীর জন্য চারুকলাবান্ধব জায়াগা তৈরি হতে পারে।”

“নতুন ভবন করলেও সেই ভবনে নাম যেন শাহনেওয়াজ যেন থাকে, এটাও নিশ্চিত করা উচিত। যেহেতু ছাত্রাবাসের নাম শাহনেওয়াজ হওয়ার পেছনে একটি ঐতিহাসিক পটভূমি রয়েছে,” যোগ করেন তিনি।

ছাত্রাবাস পরিবর্তন নিয়ে শিক্ষার্থীদের এমন অস্বস্তির ব্যাপারে স্যার এএফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ সহযোগী অধ্যাপক ড. কাজী মাহফুজুল হক সুপন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানে যে তাদের অতিরিক্ত জায়গার প্রয়োজন হয়। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, তা আমার জানা নেই।”