কক্সবাজারের প্রতিটি স্থানই অনন্য সুন্দর! এই শীতে আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনায় কক্সবাজার অবশ্যই আদর্শ গন্তব্য হতে পারে। তবে যেহেতু বছরের সিংহভাগ সময় সেন্টমার্টিন যাওয়ার সুযোগ থাকে না, সেক্ষেত্রে এখন সুযোগটি আপনি নিতে পারেন। এই প্রবাল দ্বীপে জানুয়ারি পর্যন্ত রাত্রিযাপনের অনুমতি রয়েছে। ফলে কক্সবাজার থেকে আরেকটু বেশি সময় এবং বাজেট বেশি থাকলে ভ্রমণের জন্য সেন্টমার্টিন হতে পারে বেস্ট চয়েস।
তবে সম্প্রতি এই দ্বীপে যেতে হলে প্রথমে আপনাকে ট্রাভেল পাস নিতে হবে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অ্যাপস থেকে ট্রাভেল পাস সংগ্রহ করতে পারবেন। এ কাজে ট্যুর অপারেটর এমনকি আপনি যখন বাস বা জাহাজে টিকিটের জন্য খোঁজ নেবেন তারাও সহায়তা করবে। তবে সবচেয়ে ভালো অ্যাপ ডাউনলোড করে ফোনে ইনস্টল করার পর জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে নিবন্ধন করে নিন। নিবন্ধনের পরই প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে অনলাইনেই ট্রাভেল পাস সংগ্রহ করা যাবে। এই ট্রাভেল পাস দেখিয়ে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া জাহাজে উঠতে হবে।
উল্লেখ্য, বেশ কিছু কারণে এখন শুধু কক্সবাজার শহর থেকে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল করছে। কক্সবাজার নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে প্রতিদিন পর্যটকবাহী জাহাজ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। যেতে লাগবে প্রায় ৬ ঘণ্টা। ট্রাভেল পাসধারী পর্যটকদের অনুমোদিত জাহাজে ভ্রমণ নিশ্চিত করতে হবে। পর্যটক ও অনুমোদিত জাহাজে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন ব্যাগ ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের পণ্য পরিবহন নিষিদ্ধ। আপনি সেন্টমার্টিন দ্বীপে পৌঁছার পর কোন হোটেলে থাকবেন তা লিপিবদ্ধ করতে হবে। সেন্টমার্টিন গিয়ে রাতে বিচে কোনো পার্টি করা যাবে না। এ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছে দ্বীপের পরিবেশ রক্ষার কথা চিন্তা করে। আপনিও নিশ্চয়ই চাইবেন না, আপনার কারণে পরিবেশের ক্ষতি হোক। সুতরাং সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখনই সময়।
সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। বঙ্গোপসাগরের বুকে অবস্থিত এই ছোট্ট দ্বীপটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নীল জলরাশি এবং প্রবালের জন্য বিখ্যাত। এটি ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এক স্বপ্নের জায়গা! এই দ্বীপে ভ্রমণ আপনাকে নতুন অভিজ্ঞতা দেবে।
সেন্টমার্টিন গিয়ে ঘোরাঘুরি করতে হলে কিছু বিকল্প আছে। ভ্যান গাড়ি যাতায়াতের জন্য বেশি ব্যবহার হয়। এখানকার সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থানীয় যাতায়াতের মাধ্যম সাইকেল। দ্বীপের ভেতর সাইকেল ভাড়া করে পুরো এলাকা ঘুরে দেখার সুযোগ রয়েছে। সাইকেল ভাড়া প্রায় ২০০ টাকা প্রতি ঘণ্টা। স্থানীয় কিছু ইজি বাইকও দ্বীপের প্রধান সড়কে চলাচল করে। চাইলে ভাড়া করে নিতে পারেন সেগুলো।
তবে সেন্টমার্টিন ছোট দ্বীপ হওয়ায় অনেক স্থান পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখা যায়। দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে হাঁটা একটি আদর্শ উপায়। সেন্টমার্টিন থেকে ছেঁড়া দ্বীপে যাওয়ার জন্য নৌকা বা ছোট ট্রলার ভাড়া করতে হয়। এই ট্রলার ভাড়া করা যায় স্থানীয়দের থেকে, এবং এটি দ্বীপের এক কোণ থেকে অন্য কোণে যাওয়ার জনপ্রিয় মাধ্যম। চাইলে তারা আপনাকে পুরো দ্বীপ ঘুরে দেখাতে পারে।
সেন্টমার্টিন গেলে শাহ পরীর দ্বীপ দেখে আসতে পারেন। এক যাত্রায় দুটোই উপভোগ করতে পারবেন। টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নে অবস্থিত শাহ পরীর দ্বীপ। টেকনাফ শহর থেকে এ দ্বীপের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিমি। শাহ পরীর দ্বীপ থেকে সমুদ্রকে ৩ ভাগে উপভোগ করা যায়। এখানে রয়েছে দীর্ঘ জেটি। যা দিয়ে খুব সহজে সমুদ্রসহ চারপাশ ভালোভাবে উপভোগ করা যায়। এই দ্বীপ থেকে মিয়ানমারের মংডু প্রদেশ দেখা যায়। এখানে নতুন সংযোজন হয়েছে ৫.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়ক।
সেন্টমার্টিনে দুইশোর অধিক ছোট-বড় রিসোর্ট, কটেজ এবং আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে ব্লু মার্টিন রিসোর্ট, সি প্যারাডাইস, সেন্ট মার্টিন রিসোর্ট, সি প্রবাল, মারমেইড রিসোর্ট, সেন্ট মার্টিন বিচ ইকো রিসোর্টে বিভিন্ন বাজেটে থাকা যাবে।
সেন্ট মার্টিনে প্রধান খাবার হলো সি-ফুড। সামুদ্রিক তাজা মাছ, লবস্টার, কোরাল, পোয়া, লইট্টা ও কাঁকড়া। নারকেল পানির সরবত। স্থানীয় ছোট রেস্তোরাঁগুলোতে দেশি খাবারের ব্যবস্থাও আছে। আর হ্যাঁ, সেন্টমার্টিনে উল্লেখযোগ্য হলো ডাব। এখানকার ডাবের পানি তুলনামূলক মিষ্টি। তবে দাম একটু চড়া।