সারা বাংলা

পাবনায় পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্যের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ

পাবনায় ভরা মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ও ন্যায্যমূল্যের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন পেঁয়াজ চাষিরা। এ সময় তারা রাস্তায় পেঁয়াজ ফেলে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন।

বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে জেলার সর্বাধিক পেঁয়াজ উৎপাদনকারী সুজানগর উপজেলার পাবনা-সুজানগর মহাসড়ক অবরোধ করে এই কর্মসূচি পালক করেন কৃষকরা। 

এ সময় বিক্ষুব্ধ চাষিরা জানান, চলতি মৌসুমে অতিবৃষ্টিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তাঁদের রোপণ করা মুড়িকাটা পেঁয়াজ এক দফা নষ্ট হয়েছে। ফলে দ্বিতীয় দফায় বাড়তি মূল্যে পেঁয়াজের বীজ কিনে রোপণ করতে হয়েছে। এতে এ মৌসুমে পেঁয়াজ উৎপাদনে প্রায় দ্বিগুণ খরচ হয়েছে। বর্তমানে মাঠ থেকে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। ঠিক এই সময়ে সরকার ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি করছে। এতে বাজারে পেঁয়াজের বড় দরপতন হয়েছে।

কৃষকরা জানান, এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাবনায় পাইকারী মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম মণ প্রতি এক থেকে দেড় হাজার টাকা কমে যাওয়ায় কৃষকের উৎপাদন খরচও উঠছে না। পাশাপাশি বিরূপ আবহাওয়ায় ফলন কম হওয়ায় লোকসানে পড়েছেন তারা। 

বাজারে বর্তমানে পেঁয়াজের দাম নেমেছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা মণে। অথচ এই পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষকের বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। প্রতি বিঘাতে পেঁয়াজ উৎপাদনে যে টাকা খরচ হয়েছে এবং বর্তমানে তারা যে দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন তাদের এক বিঘা পেঁয়াজে লোকসান হচ্ছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। 

এ পরিস্থিতিতে অবিলম্বে বিদেশ থেকে আমদানি বন্ধ করে মুড়িকাটা পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের দাবি চাষিদের। অন্যথায় কঠোর আন্দোলন-কর্মসূচিরও হুশিয়ারি দেন তারা। 

মানববন্ধনে কৃষক ফজলে রাব্বি তার বক্তব্যে বলেন, “কৃষক ভালো দামের আশায় বেশি করে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। কিন্তু এখন ফল হচ্ছে উল্টো। কৃষকরা ৩০ টাকা কেজি দরেও পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারছে না। কারণ কম দামে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে।” 

চর সুজানগর গ্রামের হাসেন প্রামাণিক নামে অপর এক কৃষক বলেন, “বেশি পেঁয়াজ চাষ করে কৃষক যখন দাম পাবেন না, তখন তারা নিরুৎসাহিত হবেন। তাই অন্তত মৌসুমের এ সময়ে পেঁয়াজ আমদানি না করতে অনুরোধ জানাচ্ছি সরকারের কাছে।” 

কৃষক জামাল হোসেন বলেন, “পেঁয়াজ চাষিদের ক্ষতির মুখ থেকে রক্ষা করতে অন্তত পেঁয়াজের মৌসুমে যেন কোনো পেঁয়াজ আমদানি না করা হয়।” 

সুজানগর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাফিউল ইসলাম বলেন, “পেঁয়াজ উৎপাদন বেশি হলে ও বাজারে আমদানি বেশি হলে স্বাভাবিকভাবে পেঁয়াজের দাম কমে যায়। এই সময় প্রায় প্রতিবছর একই অবস্থার সৃষ্ট হয়। আবার মুড়িকাটা পেঁয়াজ ঘরেও বেশিদিন রাখা যায় না। কৃষকরা পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হয়।” 

তিনি আরো বলেন, “উপজেলায় এ বছর মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে সাড়ে ১৫৭০ হেক্টর জমিতে। প্রতি বিঘা জমি থেকে ৪০ থেকে ৫০ মণ পর্যন্ত পেঁয়াজ এবার ঘরে তুলছে। এছাড়া কৃষকেরা বর্তমানে তাদের জমিতে দানা পেঁয়াজ রোপণ শুরু করেছেন। এ উপজেলায় দানা পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে।”