সচিবালয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় নিহত ফায়ার সার্ভিস কর্মী সোহানুজ্জামান নয়নের গ্রামের বাড়িতে মাতম চলছে। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বড়বালা ইউনিয়নের আটপুনিয়া গ্রামের এ তরুণের মৃত্যুতে তার পরিবার ও এলাকাবাসী বাকরুদ্ধ।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে নয়নের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সন্তানের শোকে পাগলপ্রায় মা ও বাবা। কোনো সান্ত্বনা তাদের শান্ত করতে পারছে না। নয়নের একমাত্র বোনসহ স্বজনদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ৩টা ২০ মিনিটে ঢাকায় সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছিলেন নয়ন। দায়িত্ব পালনকালে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় তিনি গুরুতর আহত হন। দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকার তেজগাঁও ফায়ার সার্ভিসের স্পেশাল ইউনিটে কর্মরত ছিলেন সোহানুজ্জামান নয়ন। মাত্র ২৩ বছর বয়সে দায়িত্ব পালনের সময় নিহত হলেন তিনি।
গভীর রাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের চেষ্টায় ১০ ঘণ্টা পর সেই আগুন নেভানো সম্ভব হয়।
১০ তলা ওই ভবনে অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ; পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ; যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দপ্তর রয়েছে।
নিহত নয়নের বাবা আক্তারুজ্জামান দুদু মিয়া বলেন, ‘‘আমার একমাত্র ছেলেকে সহায়-সম্বল শেষ করে পড়াশোনা করিয়েছি। এই চাকরি ঘিরে নয়নের অনেক স্বপ্ন ছিল। চাকরির পাশাপাশি প্রোমোশনের জন্য পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছিল। নয়ন এ বছর বিএ ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছেন।’’
ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক মা নার্গিস বেগমও। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ পরিবাবের পাশে সরকারকে দাঁড়ানোর আকুতি জানিযেছেন তিনি।
পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, আগুন নেভানোর সময় পুরো এলাকা সুরক্ষিত রাখা হলে এ দুর্ঘটনা ঘটত না। তারা কাভার্ডভ্যান চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবহেলার অভিযোগও তুলেছেন স্থানীয়রা।
নয়নের মরদেহ আনতে স্বজনরা ঢাকায় গেছেন। সন্ধ্যায় তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা তাকে শেষবারের মতো দেখতে অপেক্ষা করছেন।