দেশে তাবলিগ জামাতের দুটি অংশ ‘জুবায়ের’ ও ‘সাদপন্থিদের’ মধ্যে গত কয়েক বছর ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। উভয়পক্ষের মধ্যে এর আগে কয়েক দফা সংঘর্ষও হয়েছে। এই অবস্থায় তাবলিগ জামাতের এই দুই পক্ষের বিরোধ রক্তক্ষয়ী সংঘাতের রূপ পাওয়ার প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক আদেশ জারি করেছে।
এতে দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের শুক্রবার থেকে ঢাকার কাকরাইল মসজিদে রাত্রীযাপনসহ তাবলিগ জামাতের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। একই সাথে বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়ের আহমদের অনুসারীদের কেবল ২৭ ডিসেম্বর শুক্রবার কাকরাইল মসজিদ ঘিরে বড় ধরনের জমায়েত থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
দুই সপ্তাহের জন্য কাকরাইল মসজিদে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে গত ১৫ নভেম্বর থেকে ঢাকায় তাবলিগ জামায়াতের এই মারকাজে (কেন্দ্রে) জড়ো হন সাদপন্থিরা। অন্যদিকে সাদপন্থিদের নিষিদ্ধ ঘোষণাসহ তিন দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কাকরাইল এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন জুবায়েরপন্থিরা।
একইসঙ্গে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মাঠ এবং তাবলিগের প্রধান কেন্দ্র কাকরাইল মসজিদে সাদপন্থিদের কোনো কার্যক্রম চালাতে না দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা।
তুরাগ তীরে ইজতেমার মাঠ দখল ঘিরে গত ১৭ ডিসেম্বর রাতে তাবলিগ জামাতের দুইপক্ষের সংঘর্ষে তিনজনের প্রাণহানির পর থেকে উত্তেজনা চলছে।
জুবায়েরপন্থিদের দাবি, সাদপন্থিদের সকল কার্যক্রম রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে; টঙ্গীতে হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনতে হবে; কাকরাইল মারকাজ ও টঙ্গীর ইজতেমা মাঠসহ তাবলিগের সকল কার্যক্রম ‘শুরায়ে নিজামের’ অধীনে করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে ওই তিন দাবি তুলে ধরেন জুবায়ের অনুসারী উত্তরার জামিয়াতুল মানহাল আল কওমিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কেফায়েতুল্লাহ আজহারী। দাবি বাস্তবায়নে তিনি কাকরাইল এলাকায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। এদিনই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাবলিগের দুই পক্ষকে জমায়েত না হতে আলাদা আলাদা নির্দেশনা দিল।
তাবলিগের দুই পক্ষের মধ্যে বিভাজন শুরু হয় ২০১৭ সালে। নামাজ ও কোরআন পড়িয়ে টাকা নেওয়ার সমালোচনা করে সেসময় মাওলানা সাদের একটি বক্তব্য ছড়িয়ে পড়লে তাবলিগ অনুসারীদের মধ্যে বিভক্তি ছড়িয়ে পড়ে। এবার সেই বিভেদ আরো বড় হয়েছে। সেই তাদের বিরোধের কারণে গত কয়েক বছর ধরে বিশ্ব ইজতেমা হচ্ছে দুই পর্বে।