সারা বাংলা

ধর্মান্তরিত সেই আকাশ এখন আলোচিত ‘খুনি’

চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে সারবাহী একটি জাহাজে সাত জনকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে উঠে এসেছে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফানের নাম। এক সময়ের দরিদ্র গ্রামীণ পরিবেশে বেড়ে ওঠা সেই আকাশ মন্ডল এখন দেশের আলোচিত এক নাম। 

র‍্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী, জাহাজের মাস্টারকে ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত খাবার খাইয়ে হত্যার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার নৃশংস পরিকল্পনা। পরে ধরা পড়ার ভয়ে একে একে আরও ছয় জনকে হত্যা করেন তিনি।

ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর আকাশের মা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে অন্যত্র বিয়ে করে চলে যান। এরপর বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর গ্রামের দরিদ্র নানা-নানির কাছে বেড়ে ওঠেন আকাশ। গ্রামের মানুষের কাছে তিনি শান্ত ও নিরীহ স্বভাবের একজন যুবক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর তার নাম হয় ইরফান।

নানা-নানির মৃত্যুর পর বড় ভাই বিধান মন্ডলের সাথেই থাকতেন তিনি। বিধান মন্ডলও ধর্মান্তরিত হয়ে নাম পরিবর্তন করেছেন। তার নাম এখন আবির হোসেন।

স্থানীয়রা জানান, আকাশ মন্ডল এলাকা ছেড়ে বহু আগে চলে গেছে। এখানে থাকা অবস্থায় অভাবের তাড়নায় চুরির মত ছোটখাটো অপরাধে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ৫-৬ বছর আগে নারী ঘটিত একটি অপবাদও ওঠে তার বিরুদ্ধে। তবে মানুষ হত্যা করার মতো মানুষ ছিল না সে।

প্রতিবেশী জিহাদুল ইসলাম বলেন, “প্রায় দুই বছর ধরে আকাশকে এলাকায় দেখি না। অভাব ও অভিভাবক না থাকায় এলাকায় মাছ-শাকের মত ছোটখাটো চুরিতে দুয়েকবার জড়িয়েছে আকাশ। তবে এমন নৃশংস হতে পারে তা মনে হয়নি। সে এলাকাতে শান্ত স্বভাবেরই ছিল। মাছ ধরা এবং দিনজমুরি কাজ করতো। বছর চারেক আগে ফকিরহাটের ফলতিতা বাজার এলাকায় সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রির একটা ছোট দোকানও দিয়েছিল দুই ভাই। তবে ওই দোকান বেশি দিন টেকেনি।”

ওই গ্রামের মো. জুয়েল বলেন, “নারী ঘটিত একটা বিষয় নিয়ে পাঁচ ছয় বছর আগে এলাকা ছেড়ে চলে যায় সে। দুই বছর আগে একবার এলাকায় এসে থাকা শুরু করলে ভাইয়ের সাথে বনিবনা না হওয়ায় আবারও নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এরপর আর তাকে দেখিনি। শুনেছি মাঝে এক বার নাকি আসছিল। এখন শুনছি জাহাজে সাত জনকে খুন করছে এই আকাশই।”

আকাশের বড় ভাই আবির বলেন, “দুই বছর আগে বাড়ি ছাড়ার পর গতবছর একবার বাড়িতে একদিনের জন্য এসেছিল। তার সাথে যোগাযোগ নেই। একটু মনকষাকষি হয়েছিল আমার সাথে। তারপর আর কোনা যোগাযোগ নেই। এলাকা থেকে চলে যাওয়ার পরই জাহাজে কাজ নেয়। তারপর একবারই বাড়িতে এসেছে। তাও গত বছরের শীতের সময়।”

তিনি জানান, তার বাবার বাড়ি পার্শ্ববর্তী মোল্লাহাট উপজেলার কোদালিয়া এলাকায়। ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর মা ধর্মান্তরিত হয়ে অন্যত্র চলে যান। পরে ফকিরহাটের মূলঘর এলাকায় সরকারি জায়গায় ঘর বেঁধে নানা-নানির সাথেই থাকতেন তারা।

আকাশ বিয়ে করেছে কিনা সে বিষয়েও জানা নেই উল্লেখ করে আবির বলেন, ‘‘এলাকায় থাকতে তো বিয়ে করেনি। জাহাজে জাহাজে থাকতো এটাই জানতাম। আর আমাদের কারো সাথেই কোনো কথা হতো না। টিভিতে দেখে লোকে বলছে, প্রথমে তো বিশ্বাস করিনি। পরে দেখি আকাশরেই দেখায়।”

ঘটনার পর তিনি বাড়িতে কারও সাথেই যোগাযোগ করেননি বলে দাবি তার ভাইয়ের। এলাকায়ও কেউ তাকে এক বছরের মধ্যে দেখেনি বলে জানান।

সাত খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত আকাশ মন্ডলের বিরুদ্ধে স্থানীয় পুলিশের কাছেও কোনো অভিযোগ নেই। 

ফকিরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর কবির বলেন, “চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে সারবাহী জাহাজে সাতজনকে হত্যার ঘটনায় আটক আকাশ মন্ডলের নামে আমাদের থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ নেই।”