নাটোরের লালপুরে পদ্মার বুকে একসময় জেগে ওঠা বালুচর এখন ঢাকা পড়েছে সবুজের চাদরে। বন্যার ধকল কাটিয়ে ফসলের মাঠে চলছে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার প্রাণান্তর চেষ্টা। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে বিলমাড়ীয়া, রসুলপুর, চরজাজিরা, আরাজীবাকনাইসহ প্রায় ১৮টি চরে ৩ হাজার ৬৯২ হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে সবজি দানাদার, ডাল, মসলা, অর্থকারী ফসলসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল। যেখানে চলতি বছর সবধরনের ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৯ হাজার মেট্রিক টন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, একসময় বর্ষা মৌসুমে লালপুরের প্রলয়ঙ্করী পদ্মা নদীতে এখন নেই তেমন একটা প্রবাহ। শীত মৌসুমে নদী শুকিয়ে জেগে উঠেছে নতুন পলিমাটি আর চারিদিকে শুধু সবুজের সমারোহ। চরগুলোতে বেগুন, গাজর, চালকুমড়া, আলু, ভুট্টা, সরিষা, গম, আখ, পেঁয়াজ, মালটা, পেয়ারাসহ প্রায় ২০ ধরনের ফসল চাষ হচ্ছে। সেই ফসল ঘিরেই আগামীর স্বপ্ন বুনছেন পদ্মাপাড়ের কৃষকরা।
এ সময় কথা হয় স্থানীয় কৃষক মুনতাজ আলীর সাথে। তিনি বলেন, “ডিজেল ও সার-বীজের দাম বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেশি পড়ে যাচ্ছে। তাই কাঙ্ক্ষিত লাভ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি।”
উর্বর চরে বিভিন্ন ফসল ফলাতে সরকারি প্রণোদনার পাশাপাশি সুদ বিহীন শস্য ঋণের দাবি করেন তিনি।
কৃষক মুস্তাক আহমেদ বলেন, “হঠাৎ বন্যায় আমার মুলার খেত তলিয়ে যায়। সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এবার ২ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। আশা করি এবার ভালো ফলন পাবো।”
বিলমাড়ীয়া পদ্মার চরে চলতি পথে দেখা যায় পেঁয়াজ খেতের পরিচর্যা করছে আরেক কৃষক রাউফ মালিথা। তিনি বলেন, “আমি দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি ভালো ফলন ও দামের আশায়। কিন্তু এ বছর পেঁয়াজের বীজের দাম ও উৎপাদন খরচ অনেক বেশি এবং নতুন পেঁয়াজের বাজার মূল্য কম। তাই উৎপাদন খরচ বাঁচিয়ে লাভের আশা খুবই কম।”
লালপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. সালাউদ্দিন বলেন, “সরকারি একটু সহযোগিতা পেলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষিতে ব্যাপক উন্নয়ন করা সম্ভব চর এলাকায়।”
লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার প্রীতম কুমার হোড় বলেন, “বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা নতুন করে চরে সবজি চাষ শুরু করেছেন। কৃষি বিভাগ থেকে চরে পরিদর্শন করে কৃষকদেরকে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও চর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের বিভিন্ন ফসলের আধুনিক উৎপাদন প্রযুক্তি বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে “
তিনি আরো বলেন, “এ বছর চরে যে পরিমাণ সবজি আবাদ হচ্ছে এতে লালপুরের চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করা যাবে।”