বিনোদন

চব্বিশে শাকিব হিট, শাকিব ফ্লপ!

দেশে সিনেমা মুক্তির সংখ্যা প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। চলতি বছর মোট ৫২টি সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। তার মধ্যে চারটি আমদানি করা সিনেমা। এগুলোর মধ্যে বছরজুড়ে আলোচনা-সমালোচনায় ছিল কয়েকটি সিনেমা। অধিকাংশ সিনেমা নীরবে মুক্তি পেয়েছে আবার দু’একদিন বাদে হল থেকে নীরবেই নেমে গেছে।  আলোচিত হয়েছে অর্ধডজন সিনেমা। এর মধ্যে নায়কের আসনে শীর্ষে রয়েছেন শাকিব খান। নির্মাতাদের তালিকায় শীর্ষে ছিলেন তরুণ নির্মাতা রায়হান রাফি। তার নির্মিত ‘তুফান’ সুপারহিট তকমা পেয়েছে।   

চলচ্চিত্রে চলতি বছরের সূচনা হয় বিতর্ক দিয়ে। প্রদর্শক সমিতির নিয়ম অমান্য করে একইদিনে তিনটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল। ‘কাগজের বউ’, ‘শেষ বাজি’ ও আমদানি করা কলকাতার ‘হুব্বা’। গত ১৯ জানুয়ারি সিনেমা তিনটি মুক্তি পায়।  মূলত আমদানি করা সিনেমাটি নিয়ম না মেনে মুক্তি পেয়েছিল। কিন্তু একটি সিনেমাও দর্শক টানতে পারেনি। তার আগের প্রথম দুই সপ্তাহে প্রেক্ষাগৃহে কোনো সিনেমাই মুক্তি পায়নি। পরের সপ্তাহে মুক্তি পায় ‘রুখে দাঁড়াও’। সিনেমাটি দর্শক খড়ায় ভুগেছে।  

ফেব্রুয়ারি মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ট্র্যাপ’, ‘পেয়ারার সুবাস’, ‘শ্রাবণ জোৎস্নায়’, ‘ছায়াবৃক্ষ’ ও ‘টাল মাতাল’ সিনেমাগুলো দর্শক টানতে পারেনি। উল্টো গলার কাঁটা হয়েছিল হল মালিকদের। হলের বিদ্যুৎ বিল তুলতেও ব্যর্থ হয়েছে কিছু সিনেমা। কোনোটা হাতে গোনা দর্শক পেলেও সপ্তাহের ৭ দিন পূর্ণ সময় ধরে রাখার সক্ষমতা দেখাতে পারেনি। 

রোজার জন্য মার্চে বন্ধ থাকে সিনেমা হল। এক মাস বন্ধ থাকার পর এপ্রিলে রোজার ঈদে একসঙ্গে মুক্তি পায় ১১টি সিনেমা। মুক্তিপ্রাপ্ত এক ডজন সিনেমার মধ্যে ব্যবসার দিকে তুলনামূলক রাজকীয় অবস্থানে ছিল শাকিব খান-হিমেল আশরাফ জুটির ‘রাজকুমার’। আরশাদ আদনান প্রযোজিত ভার্সেটাইল মিডিয়ার সিনেমাটি ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়। এছাড়া ‘লিপস্টিক’, ‘দেয়ালের দেশ’, ‘ওমর’, ‘কাজল রেখা’ ব্যবসায়িকভাবে সফল না হলেও প্রশংসিত হয়। বাকি সাত সিনেমা ‘সোনার চর’, ‘মেঘনা কন্যা’, ‘আহারে জীবন’, ‘গ্রীন কার্ড’, ‘মোনা: জ্বীন ২’, ‘মায়া: দ্যা লাভ’, ‘পটু’ ব্যবসায়িক দিক থেকে ফ্লপ হয়েছে। 

ঈদ শেষ না হতেই দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় আমদানি করা বলিউডের সিনেমা ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস মাহি’। সিনেমাটি সুপার ফ্লপ হয়। বরাবরের মতো ভিনদেশি সিনেমাটি দর্শক টানেনি। ফলে লগ্নি করা অর্থ তুলতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।

মে মাসে মুক্তি পায় ‘ডেডবডি’, ‘শ্যামা কাব্য’, ‘পটু’, ‘সুস্বাগতম’, ‘ফাতিমা’ ও ‘ময়নার শেষ কথা’। সিনেমাগুলো চালিয়ে প্রেক্ষাগৃহ মালিকরা বিদ্যুৎ খরচ তুলতেই হিমশিম খেয়েছেন। এমনও হয়েছে দর্শকখরায় শো বন্ধ হয়ে গেছে। আবার দু’চারদিন চালিয়ে সিনেমা নামিয়ে দিয়েছে অনেক প্রেক্ষাগৃহ মালিক।

কোরবানি ঈদে মুক্তি পায় শাকিব খান অভিনীত এবং রায়হান রাফি পরিচালিত ‘তুফান’। সিনেমাটি হলে বসন্ত ফিরিয়েছে। ইন্ডাস্ট্রি হিট তকমা পেয়েছে। ‘তুফান’ তাণ্ডব চালালেও মুক্তিপ্রাপ্ত বাকি চার সিনেমা ‘ময়ূরাক্ষী’, ‘ডার্ক ওয়ার্ল্ড’, ‘রিভেঞ্জ’, ‘আগন্তুক’ কোনোটাই সফল হতে পারেনি।  

বছরের প্রথম ছয় মাসে কয়েকটি সিনেমা মন্দের ভালো চললেও শেষ ছয় মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আজব কারখানা’, ‘অমানুষ হলো মানুষ’, ‘জিম্মি’, ‘শরতের জবা’, ‘বাদশা দ্য কিং’, ‘চরিত্র’, ‘হৈমন্তীর ইতিকথা’, ‘স্ত্রী টু’ (আমদানি করা), ‘ঢং’, ‘৩৬ ২৪ ৩৬’, ‘দরদ’, ‘ভয়াল’, ‘নয়া মানুষ’, ‘দুনিয়া’, ‘হুরমতি’, ‘ডেঞ্জার জোন’, ‘মাকড়সার জাল’, ‘প্রিয় মালতি’ ও ‘নকশিকাঁথার জমিন’ নামের সিনেমাগুলো সুপার ফ্লপ হয়েছে। তবে ‘৮৪০’ সিনেমাটি আলোচনায় ছিলো। 

এসব সিনেমায় মনোয়ার হোসেন ডিপজল, শাকিব খান, অপু বিশ্বাস, শবনম ইয়াসমিন বুবলী, মোশাররফ করিম, সজল, কুসুম শিকদার, মেহজাবীন চৌধুরী, মৌসুমী হামিদ, ফেরদৌস আহমেদ, ইয়ামিন হক ববি, আদর আজাদ, জিয়াউল রোশান, পূজা চেরির মতো তারকা অভিনয়শিল্পীরা থাকলেও দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়। আবার অনেক সিনেমা প্রচারণা ছাড়া নীরবে মুক্তি পেয়েছে। কয়েকটি সিনেমার গল্প ভালো হলেও পর্যাপ্ত প্রচারণার অভাব এবং প্রেক্ষাগৃহ না পাওয়ায় সিনেমা দর্শকের কাছে পৌঁছাতে পারেনি।

হিমেল আশরাফ পরিচালিত ‘রাজকুমার’ ও রায়হান রাফি পরিচালিত ‘তুফান’ বছরজুড়ে আলোচনায় ছিলো। হিট তকমায় নাম লিখিয়েছেন  শাকিব খান অভিনীত এই দুই সিনেমা। তবে শাকিব খান অভিনীত ‘দরদ’ সিনেমাটি আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারেনি। সিনেমাটি নির্মাণ করেন অনন্য মামুন।