খেলাধুলা

বীরত্বের দিন ‘দায়মুক্তি’ ও আক্ষেপের কথা শোনালেন সোহান

৬, ৪, ৪, ৬, ৪, ৬। সব মিলিয়ে ৩০।  বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার এক ওভারে ৩০ রান নিতে পারে তা আগে কখনো দেখেছেন কিংবা ভেবেছেন কি? আপনার দেখার ও ভাবনার সমীকরণ বৃহস্পতিবার মিলিয়ে দিয়েছেন কাজী নুরুল হাসান সোহান। 

রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক সোহান কাইল মায়ার্সের করা ইনিংসের শেষ ওভারে ৩০ রান নিয়ে ফরচুন বরিশালকে অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচ হারিয়েছেন। জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৬ রান। শেষ বলে ছক্কায় রান পৌঁছে যায় ৩০-এ। ৭ বলে ৩২ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলে রংপুরের জয়ের নায়ক হয়েছেন সোহান।

বীরত্বের এমন দিনে সোহান এসেছিলেন সংবাদ সম্মেলনে। যেখানে আবেগের স্রোত ভাসল। বীরত্বের গল্পের সঙ্গে দায়মুক্তি ও আক্ষেপের কথা শোনালেন সোহান। 

ইফতেখার আউট হওয়ার পর ক্রিজে আসেন সোহান। বরিশালের দেওয়া ১৯৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় রংপুরের স্কোরবোর্ডে তখন রান ১৫৭। ১৩ বলে তাদের দরকার ৪১ রান। প্রথম বলে ২ রান নিয়ে খাতা খোলেন সোহান। পরের ওভারে ১ বলও খেলার সুযোগ হয়নি। ওই ওভারে প্রথম দুই বলে দুই ছক্কা হাঁকিয়ে তৃতীয় বলে আউট হন খুশদীল শাহ। এরপর আবার বিপর্যয়। অবস্ট্রাকটিং অব দ্য ফিল্ড হয়ে মাহেদী আউট হন। পঞ্চম বলে সাইফ উদ্দিন সীমানায় ক্যাচ দেন। ষষ্ঠ বলে রাব্বী পারেননি ব্যাটে বল লাগাতে। তাতে শেষ ৬ বলে সমীকরণ দাঁড়ায় ২৬ রানে। ব্যাটিংয়ে সোহান। কী ভাবনা কাজ করছিল তার?

‘আগের ওভারে খুশদিল দুটি ছয় মেরেছিল। ও বলছিল, এই ম্যাচ জেতা সম্ভব। রাব্বী ভাই এসেও বলেছিলেন, তুমিই খেলো ছয়টা বল। আমারও মনে হয়েছিল, ইনশা আল্লাহ মারতে পারলে হয়ে যাবে। এরপর দেখেন প্রথম বল ছয় হলো, তখন আস্তে আস্তে বিশ্বাসটা আরও বেড়েছে যে ইনশা আল্লাহ সম্ভব।’’

‘‘বোলার যেই থাকুক অবশ্যই তাদের বোলিং অ্যাটাক খুবই ভালো। এবং ২৬ রান ছিল, অনেক রানই। যেটা বললাম যে, রাব্বী ভাইয়ের সাথে যখন কমিউনিকেশনটা করতেছিলাম তখনই আসলে বিশ্বাসটা হয়েছে। থ্যাংকস টু আল্লাহ। এরকম জিনিস একটা করতে পেরেছি ম্যাচের জন্য।’’ শেষ বলে দরকার ছিল কেবল ২ রান। ১ রান হলে ম্যাচ টাই। আউট হলে ম্যাচ ফসকে যাবে। এমন সময়ে সচরাচর ব্যাটসম্যানরা নিরাপদ শটটাকেই বেছে নেন। সোহান স্থির থাকলে নিজের পরিকল্পনায়। বড় শট খেলেই দলকে দিলেন উড়ন্ত জয়। 

‘‘শেষ বলে বড় শটের পরিকল্পনা ছিল। আমি চাচ্ছিলাম যে এক-দুই ওরকম কিছু না, যদি আমার জায়গায় বল পাই ওভার বাউন্ডারি মারব বা বাউন্ডারিই হোক। এটাই চাচ্ছিলাম।’’ 

বীরত্বের দিনে সোহানের মনে পড়ছিল ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা। অ্যাডিলেডে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে মাত্র ৫ রানের জন্য হেরে যায় বাংলাদেশ। শেষ ওভারে ২০ রানের তাড়ায় সোহান চার-ছক্কা মেরে দলকে জয়ের খুব কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিলেন। শেষ বলে দরকার ছিল একটি বাউন্ডারি। কিন্তু ১ রানের বেশি নিতে পারেননি। সেই ম্যাচটা আজ মনে পড়ছিল তার। হয়তো ‘দায়মুক্তি’ও পেয়েছেন। 

‘‘অবশ্যই, দেখেন এই ম্যাচটা জেতার পর মনে হচ্ছিল। শেষ টি-টোয়েন্টিতে আমরা যেটা খেলেছিলাম ভারতের সাথে বিশ্বকাপের ম্যাচ ছিল, এক ওভারে ২০ রান দরকার ছিল। আমি মনে ১৫ বা ১৬ রান করেছিলাম। শেষ বলে ছয় হলে হয়তো ম্যাচটা জিততাম। ছয় হয় নাই, ম্যাচটা ৫ রানে হেরেছিলাম। এটা আমার কাছে একটা জিনিস সবসময় মনে থাকে যে, বিশ্বকাপের মত এরকম সময়ে ম্যাচটা.. যদিও ২০ রান লাগতো, ২০ রান অনেক রান, কিন্তু তারপরও অনেক কাছাকাছি গিয়েছিলাম। যদি শেষ করতে পারতাম ভালো লাগতো।’’

সোহান ওই সময়ে পারেননি। এবার পেরেছেন। এটাই তার সেরা ইনিংস কি না, জানতে চাইলে নুরুল হেসেও যেন একটু আক্ষেপই করলেন, ‘‘দেখেন, আমি যেখানে ব্যাটিং করি, সবাই ভুলে যায়, এটা নতুন কিছু নয়। অবশ্যই সবচেয়ে বড় হলো দলের জন্য অবদান রাখতে পারছি, আলহামদুলিল্লাহ। যেহেতু দলকে জেতাতে পেরেছি, তো এটা সেরা ইনিংসগুলোর একটি।’’