বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে জেলা বিএনপি দ্বিবার্ষিক সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সম্মেলনের প্যান্ডেলের জন্য বাঁশ পোতা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক কার্যক্রমসহ স্কুলের বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগিতার কাজ ব্যহত হচ্ছে।
এদিকে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের কাছে সম্মেলন বন্ধে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) কর্তৃপক্ষ। কারণ, এর আগে কোনো রাজনৈতিক দলের সভা ও সমাবেশ এই কোম্পানির স্থাপনায় হয়নি।
সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় বিএনপির এই সম্মেলন বন্ধে গত ২ জানুয়ারি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানকে, বাঁশের প্যান্ডেল অপসারণ করতে গত ১ জানুয়ারি জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলামকে এবং গত ২৪ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয় বিজিএফসিএল কর্তৃপক্ষ।
বিজিএফসিএলের চিঠিতে বলা হয়েছে, তিতাস গ্যাসক্ষেত্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র। এটি কেপিআই-১ (ক) শ্রেণিভূক্ত প্রতিষ্ঠান। কেপিআই নীতিমালার আলোকে অত্র প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সমুন্নত রাখা হচ্ছে। বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস স্কুল এন্ড কলেজ কেপিআই-১ (ক) শ্রেণিভুক্ত স্থাপনার অভ্যন্তরে অবস্থিত। অত্র স্কুল এন্ড কলেজের কাছে কর্মকর্তা-কর্মচারীর আবাসিক এলাকা, বিজিএফসিএলের প্রধান কার্যালয় ও দুইটি উচ্চচাপ সম্পন্ন গ্যাস কূপ রয়েছে। এসকল স্থাপনা একই নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্যে অবস্থিত। বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস স্কুল অ্যান্ড কলেজের কলেজ শাখার ক্লাস চলমান রয়েছে। প্যান্ডেলের কারণে স্কুল শাখার ছাত্র-ছাত্রীদের অ্যাসেম্বলি ও খেলাধুলা মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। এ বিষয়টি অবহিত করে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলামকে মাঠ থেকে প্যান্ডেলের বাঁশ অপসারণের অনুরোধ করে বিজিএফসিএল কর্তৃপক্ষ। ১৮ জানুয়ারি জেলা বিএনপির সম্মেলনের পর মাঠ থেকে প্যান্ডেলের বাঁশ সরানো হবে বলে জবাবে জানান সিরাজুল ইসলাম। পরবর্তীতে বিজিএফসিএল কর্তৃপক্ষ গত ১ জানুয়ারি সিরাজুল ইসলামকে এক চিঠির মাধ্যমে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে কেপিআই-১ (ক) শ্রেণিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে অবস্থিত এই মাঠ থেকে প্যান্ডেলের বাঁশ অপসারণের অনুরোধ জানান।
জানা গেছে, গত ২৮ ডিসেম্বর বেলা ১১টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বিজিএফসিএলের অভ্যন্তরে এ মাঠে জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। গত ২৩ ডিসেম্বর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলোচনাসভার জন্য সম্মতি চেয়ে বিজিএফসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে আবেদন করেন এবং উক্ত মাঠে বাঁশ দ্বারা প্যান্ডেলের অবকাঠামো তৈরি করা হয়। ২৪ ডিসেম্বর বিএনপির আবেদনের বিষয়ে দিক-নির্দেশনা চেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দেয় বিজিএফসিএল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু জেলা প্রশাসন থেকে কোনো দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। জেলা বিএনপির সম্মেলনের তারিখ পরিবর্তন করে ১৮ জানুয়ারি করা হয়েছে। এই সংক্রান্ত একটি প্রেসবিজ্ঞপ্তি জারি করে জেলা বিএনপি। কিন্তু তারপরও মাঠ থেকে বাঁশের প্যান্ডেল অপসারণ করেনি বিএনপির নেতাকর্মীরা। সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় কেপিআই-১ (ক) শ্রেণিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের এ মাঠে বিএনপির সম্মেলন বন্ধের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দিয়েছে বিজিএফসিএল কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস স্কুল শাখার একাধিক ছাত্র নাম না বলার শর্তে জানায়, এই প্রতিষ্ঠানে কোনদিন এমন সম্মেলনের আয়োজন হয়নি। বাঁশের জন্য অ্যাসেম্বলি ও খেলাধুলার মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। মাঠটিকে দ্রত অ্যাসেম্বলি ও খেলাধুলার ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ জানান তারা।
জেলা বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জেলার কোনো রাজনৈতিক সভা কোনোদিন ওই কেপিআই ভূক্ত প্রতিষ্ঠানে হয়নি। তারা জানান, একটি পক্ষের নেতাকর্মীদের এড়াতেই তারা শহরতলীর একটি প্রতিষ্ঠানের মাঠে সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
একাধিকবার কল দিলেও মুঠোফোন বন্ধ থাকায় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলামের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বিজিএফসিএল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, “আমরা সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে চিঠি দিয়েছি।”