টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় ফাইলা পাগলার মেলা বন্ধ ঘোষণা করেছে যৌথবাহিনী। রবিবার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে উপজেলার দাড়িয়াপুরে অবস্থিত ফাইলা পাগলার মাজার প্রাঙ্গণে উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও থানা পুলিশ অভিযান শেষে মেলা বন্ধের এ ঘোষণা দেন।
অভিযানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল রনী, সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন এটিএম ফজলে রাব্বি প্রিন্স, সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
১৯৪৯ সালে উপজেলার দাড়িয়াপুর গ্রামে প্রথম ফাইলা পাগলার মেলা শুরু হয়। প্রতি বছরের হিজরী রজব মাসের প্রথম দিন থেকে মেলা শুরু হয়ে মাসব্যাপী চলে এর কার্যক্রম। পূর্ণিমার রাতে হয় বড়মেলা। তবে মানতকারী ভক্ত দর্শনার্থীদের আনাগোনা থাকে সারা মাস। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শত শত লোকজন ব্যান্ডপার্টিসহ মানত করা মোরগ, খাসি, গরুসহ নানা পণ্যসামগ্রী নিয়ে হাজির হয়। মাজারের চারপাশের প্রায় এক কিলোমিটার পর্যন্ত লোকজন মোরগ, গরু-খাসি জবাই করে মানত পূরণ করে।
মাজার ঘেষে পাগল ভক্তদের বসার আস্তানা। সেখানে প্রকাশ্যে গাঁজা সেবন করা হয়। এ সুযোগে দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভক্ত ও যুবকেরা অনেকটা প্রকাশ্যে মাদক সেবন করে। এ ছাড়া মেলাকে কেন্দ্র করে প্রতি রাতে অশ্লীল নৃত্যের আয়োজন করা হয় বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের। বিষয়টি নিয়ে সচেতন নাগরিক সমাজ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেয়। পরে রবিবার বিকেলে যৌথবাহিনী মেলা বন্ধে অভিযান চালায়। এ সময় ব্যবসায়ী ও আগত দর্শনার্থীদের মেলাস্থল ত্যাগ করতে ১৫ মিনিট সময় বেঁধে দেওয়া হয়। পরে দোকানপাট সরিয়ে নিতে ব্যবসায়ীদের দুই ঘণ্টা সময় দেয় যৌথ বাহিনী। পরে মেলায় আসা লোকজন দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। এ সময় মেলায় বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে আসা ব্যবসায়ীরা ক্ষিপ্ত হয়। পরে তারা মালামাল সরাতে দুই দিন সময় পান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল রনী জানান, মেলার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতাও পাওয়া গেছে। এ কারণে মেলাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে মাজার কমিটির সভাপতি কবির হাসান অভিযোগ করে বলেন, ‘‘একটি মহল মেলাটি বন্ধ করার জন্য পাঁয়তারা করছে। মাজারের পাশ থেকে পাগল ভক্তদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবুও মেলাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মেলাটি বন্ধ করায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’’
২০০৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে মাজারে পরপর দুটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে মাজারের খাদেমসহ আটজন নিহত হয়। আহত হন অন্তত ১৫ জন। হামলার পর কয়েক বছর মেলায় লোকজন কম হচ্ছিল। ধীরে ধীরে ভয় কেটে যাওয়ার পর থেকে লোকজন মেলায় বেশি আসছে।