সাতসতেরো

বিশ্বের ভয়ংকর যত আগ্নেয়গিরি

পৃথিবীতে প্রায়  পাঁচশ’ ৫০টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে। আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর ভৌগোলিক-প্রাকৃতিক ঘটনা। এটি এমন একটি ঘটনা যা বেশ কয়েকবার পৃথিবীতে গণবিলুপ্তি ঘটিয়েছিল। আসুন জেনে নেয়া যাক এই আগ্নেয়গিরি কী এবং কী কারণে আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি হয়।

পৃথিবীতে কিছু পাহাড় আছে যেগুলো থেকে ভূ-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত গলিত পাথর, ছাই এবং গ্যাস বের হয়ে আসতে পারে। এ ধরনের পাহাড়কে বলা হয় আগ্নেয়গিরি আর ভূগর্ভস্থ পদার্থের নির্গমনকে বলা হয় অগ্নুৎপাত। আবার অগ্নুৎপাত আগ্নেয়গিরির যে পথে নির্গমন ঘটে তাকে বলা হয় জ্বালা মুখ।

পৃথিবীর গভীরের তাপমাত্রা খুবই বেশি যা প্রায় ৬ হাজার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। পৃথিবীর উপরিভাগ কিছু প্লেটের সমন্বয়ে তৈরি। এখানে রয়েছে সাতটি টেকটনিক প্লেট বা ভারী প্লেট এবং ২৬ টি মাইনর টেকটনিক প্লেট বা হালকা প্লেট। প্লেটগুলো সর্বদা গতিশীল। ফলে প্রায়ই এদের মধ্যে সংঘর্ষ হয় এবং এদের সংযোগস্থলে চাপের সৃষ্টি হয়। দুই প্লেটের সংযোগস্থলে চাপের ফলে সৃষ্টি হয় পাহাড়। যেমন হিমালয় পর্বত সৃষ্টি হয়েছে ইন্ডিয়ান প্লেটের সাথে ইউরেশান প্লেটের সংঘর্ষের ফলে।

প্লেটের ধাক্কার সময়ে তরঙ্গ সৃষ্টি হয় যাকে আমরা বলি ভূমিকম্প। ভূপৃষ্ঠ এবং পৃথিবীর কেন্দ্রে গলিত লোহার  মাঝে  একটি কঠিন শিলাস্তর রয়েছে যাকে ম্যান্টল বলা হয়। চাপের পাশাপাশি দুই প্লেটের মাঝে-মাঝে প্রচন্ড তাপের সৃষ্টি হয় যা ম্যান্টলকে গলিয়ে ফেলে এবং সৃষ্ট চাপ এই গলিত পদার্থকে পৃথিবীর পৃষ্ঠে বেরিয়ে আসতে বাধ্য করে। 

এটনা, ইতালি: এটি মাউন্ট এটনা সিসিলি দ্বীপের পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। এটি ইউরোপের সবচেয়ে উঁচু আগ্নেয়গিরি, যার উচ্চতা ৩৩২৯ মিটার। এটনা আফ্রিকা প্লেট এবং ইউরেশিয়ান প্লেট এর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। ১৯৭০ সালে এই আগ্নেয়গিরি থেকে ধোঁয়ার কুন্ডলি বার হতে দেখা গিয়েছিল। ২০২০ সালে পুনরায় এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। বছরে একাধিকবার অগ্নুৎপাত ঘটানো মাউন্ট এটনার রুদ্রমূর্তি ধারণের কালো ধোঁয়া আর ছাইয়ে ঢেকে গেছে পুরো সিসিলি দ্বীপ।

মাউন্ট নিরাগঙ্গ, কঙ্গো: এই আগ্নেয়গিরি আফ্রিকার কঙ্গোতে অবস্থিত। ১৮৮২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৩৪ বার এই আগ্নেয়গিরি থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে। ১৯৭৭ এর বিস্ফোরণে ৬০ মাইল গতিতে লাভা পাশের গ্রামের ছড়িয়েছে এবং এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় ডেকে আনে। ওই ঘটনায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয এবং ৭০ জন মানুষ মারা যায়। বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট লাভার হ্রদের গভীরতা এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৭০০ ফুট। এটি পৃথিবীর গভীরতম লাভার হ্রদ। বিবিসির তথ্য, ২০২১ সালের মে মাসে মাউন্ট নিরাগঙ্গ থেকে ঝর্ণার মতো লাভা নির্গত হতে থাকে। এসময় কুড়ি লাখ মানুষ অধ্যুষিত গোমা শহরের আকাশে রক্তিম ঘন মেঘের সৃষ্টি হয়। লাভার স্রোত এক পর্যায়ে শহরের বিমানবন্দর পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছায়।

মাউন্ট মারাপি, ইন্দোনেশিয়া: ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি মাউন্ট মারাপি। ২০১০ সালে এখানে ভয়াবহ অগ্নুৎপাত হয়। বিপর্যয়ের আশঙ্কায় কর্তৃপক্ষ আগে ১১ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়। ২০২৩ সালেও ইন্দোনেশিয়ার আগ্নেয়গিরি মারাপিতে আবারও অগ্নুৎপাতের ঘটনা ঘটে। এতে দেশটির মিনাংকাবাউ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল। ফলে বিমানবন্দরে আটকে পড়েছিল কয়েকশো যাত্রী। লাভা উদগীরণ শুরু হলে প্রায় তিনশো মিটার এলাকাজুড়ে ছাই ছড়িয়ে পড়ে। পরে ওই এলাকার ওপর দিয়ে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। 

মাউন্ট ভিসুভিয়াস, ইতালি: মাউন্ট বিশুভিয়াস ইতালির নেপলস উপসাগরীয় একটি আগ্নেয়গিরি। ব্যাপকস থেকে নয় কিলোমিটার পূর্বে সমুদ্র উপকূলের খুব কাছেই এর অবস্থান। বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে অগ্নুৎপাত হচ্ছে। খ্রিষ্টপূর্ব ৭৯ অব্দের অগ্ন্যুৎপাতে রোমান শহর পম্পেই এবং হারকিউলানিয়াম লাভার নিচে চাপা পড়ে ধ্বংস হয়ে যায়। অনেক পরে ১৮শ’ শতকে ঘটনাক্রমে শহরগুলো আবার খুঁজে পাওয়া যায়।

পোপোকেটাপেটল, মেক্সিকো: মেক্সিকোর অতি সক্রিয় পোপোকেটাপেটল আগ্নেয়গিরি। এটি উত্তর আমেরিকার মেক্সিকো অঞ্চল অবস্থিত একটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরি।  পোপোকেটাপেটল কথার অর্থ হলো ধোঁয়ার পাহাড়। মেক্সিকোর দ্বিতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ এই আগ্নেয়গিরি এল পেপো নামেও পরিচিত।ডয়চে ভেলের তথ্য, ২০০৫ সাল থেকে সক্রিয় এই আগ্নেয়গিরি। 

কিলাওয়া আগ্নেয়গিরি, হাওয়াই: এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সক্রিয়  আগ্নেয়গিরি। এখানে ভূ-অভ্যন্তরের ম্যাগমা, গলিত পাথর, ম্যান্টাল ভেদ করে বাইরে বেরিয়ে আসে এবং প্রবাহিত হতে থাকে মাসের পর মাস। লাভার পথে কোন কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।

সাকুরাজিমা, জাপান: হিন্দুস্তান টাইমস-এর তথ্য, ২০১৯ সাল থেকে জেগে উঠেছে এই আগ্নেয়গিরি। জাপানের অন্যতম সক্রিয় এই আগ্নেয়গিরি থেকে ক্রমাগত উপচে পড়ে ম্যাগমা, লাভার স্রোত। কাগোসীমা প্রশাসনিক অঞ্চলে  একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি সাকুরাজিমা।