অস্ত্রের মুখে এক যুবককে অপহরণ করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছেন এক যুবদল নেতা—এমন অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর চাচাতো ভাই গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
অপহৃত যুবকের নাম সোহাগ ইসলাম (২৫)। অভিযুক্ত যুবদল নেতা হলেন চরতারাপুর ইউনিয়ন যুবদলের প্রচার সম্পাদক কুতুব উদ্দিন। দাবি করা হচ্ছে, অপহরণকাণ্ডে তার সঙ্গে ছিলেন মুতাহার হোসেন মোতাই ও রেজাউল করিম।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) রাত ১১টার দিকে পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের শুকচর গ্রামে এমন ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। অপহরণের প্রায় ৫ ঘণ্টা পর অপহৃত যুবককে উদ্ধার করে পুলিশ।
ভুক্তভোগী সোহাগ সদর উপজেলার শুকচর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য তোফাজ্জল হোসেনের তোফাইয়ের ছেলে। তিনি পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে বিএ অনার্স শেষ করে ঢাকায় চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গুলিবিদ্ধ রফিকুল ইসলাম অন্তু একই গ্রামের মোফাজ্জল প্রামানিকের ছেলে। তিনি পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, শুকচর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য তোফাজ্জল হোসেন তোফাই দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। ঢাকায় চিকিৎসার জন্য জমি বিক্রি করে বাড়িতে টাকা রেখেছিলেন। দু-একদিনের মধ্যে তাকে ঢাকায় নেওয়ার কথা। সোমবার রাত ১১টার দিকে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সোহাগ। এ সময় ইউনিয়ন যুবদলের প্রচার সম্পাদক কুতুব উদ্দিন, মুতাহার হোসেন মোতাই ও রেজাউল করিম সেখানে এসে প্রথমে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
সোহাগ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে অস্ত্র ঠেকিয়ে তাকে বাড়ি থেকে অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। এ সময় বাধা দিতে গেলে তার চাচাতো ভাই রফিকুল ইসলাম অন্তুকে মোতাহার হোসেন মোতাই প্রথমে শটগান দিয়ে আঘাত করেন। পরে গুলি করেন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে ভোর ৪টার দিকে পুলিশ চরতারাপুরে অভিযানে গেলে ‘সন্ত্রাসীরা’ তাকে ফেলে পালিয়ে যায়। এরপর পুলিশ তাকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চরতারাপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক এক নেতা বলেন, ‘‘জেলা বিএনপির কয়েকজন নেতা ও পুলিশ রাতে আমাকে ফোন দিয়ে বিষয়টি অবগত করে সোহাগকে উদ্ধারে সহযোগিতা করতে বলেন। এরপর কুতুব উদ্দিন ও মোতাইকে আমি ফোন দিয়ে তাকে (সোহাগ) দ্রুত পরিবারের কাছে ফেরত দিয়ে আসতে অনুরোধ করি। তখন মোবাইলের অপর প্রান্ত থেকে বলে যে, ১০ লাখ টাকা নিয়ে আসতে বল, তারপর সোহাগকে ছেড়ে দিচ্ছি।’’
ভুক্তভোগী সোহাগ ইসলাম বলেন, “গতকাল রাত ১১টার দিকে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। এ সময় এলাকার কুতুব উদ্দিন কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে এসে আমাকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে। ভোর ৪টার দিকে প্রশাসনের চাপের মুখে তারা আমাকে ছেড়ে দেয়। এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।”
গুলিবিদ্ধ রফিকুল ইসলাম অন্তুর মা মায়া খাতুন বলেন, “১০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিল। দেওয়া হয়নি, এজন্য আমার ভাসুরের ছেলে সোহাগকে অপহরণ করে। আমার ছেলে এগিয়ে গেলে শটগান দিয়ে প্রথমে তাকে আঘাত করে। পরে গুলি করে। এখনো গুলি মাথার ভেতরে আছে। ডাক্তার অপারেশন করে বের করার কথা বলেছেন। এখন কীভাবে কী করব, দিশেহারা হয়ে গেছি।”
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সুজানগর পৌর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব জসিম বিশ্বাসকে ফোন পাওয়া যায়নি। তবে, সুজানগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব শেখ আব্দুর রউফ বলেন, “৫ আগস্টের আগে ইউনিয়ন যুবদলের প্রচার সম্পাদক কুতুব উদ্দিন আমার সঙ্গে রাজনীতি করতেন। এরপর এখন তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই।”
পাবনা জেলা যুবদলের আহ্বায়ক হিমেল রানা বলেন, “বিষয়টি আমরা শুনেছি। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সদর উপজেলা যুবদলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পাবনা সদর থানার ওসি আব্দুস সালাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “অপহরণের ঘটনা জানতে পেরে আমরা রাতেই ওই এলাকায় অভিযান চালিয়েছি। পালিয়ে যাওয়ায় অভিযুক্তদের আটক করা সম্ভব হয়নি।”