ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান রাইজিংবিডিকে জানান, মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) রাতে ঢাকার ভাটারা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে কোন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাৎক্ষণিক সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দেননি তিনি।
কোরবানির জন্য ঢাকার মোহাম্মদপুরের সাদিক এগ্রো থেকে ইফাত নামের এক তরুণের ১৫ লাখ টাকা দামে ছাগল কেনার ফেইসবুক পোস্ট ঘিরে ঈদের আগে রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়।
ছাগল কিনতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন ইফাত। ধানমন্ডির বাসায় ঈদের দিন ছাগলটি কোরবানি দেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। তখন ছাগলসহ ইফাতের ছবি জুড়ে দিয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন তোলেন- ১৫ লাখ টাকা দিয়ে ছাগল কেনার অর্থের উৎস কী?
এ প্রশ্ন ঘিরে সামনে আসতে থাকে ইফাতের পরিচয়। ইফাত নিজেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবিসহ পোস্ট দিয়ে ও সংবাদমাধ্যমে বাবার পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, তার বাবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সভাপতি মো. মতিউর রহমান। ইফাতের বাবার পরিচয় ধরে অনেকে প্রশ্ন তোলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তার ছেলের বিপুল ব্যয়ে কোরবানির পশু কেনার সামর্থ্য হল কী করে?
অবশ্য ছাগলটি ইফাত শেষ পর্যন্ত কেনেননি বলে দাবি সাদিক এগ্রোর কর্ণধার মোহাম্মদ ইমরান হোসাইনের। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ইফাত শুধু ১ লাখ টাকা দিয়ে ছাগলটির বুকিং করেছিলেন। তবে অবশিষ্ট মূল্য পরিশোধ করে ছাগলটির তিনি আর নিয়ে যাননি।
বিষয়টি নিয়ে ইফাতের বক্তব্যও আসে সংবাদমাধ্যমে। তার দাবি, ইমরান হোসাইনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রে তার ‘অনুরোধে’ ছাগলটি নিয়ে প্রচারের জন্য এতটা দামের কথা বলে পোস্ট দিয়েছিলেন তিনি।
মতিউর রহমান এ আলোচনায় ঘি ঢালেন ‘ছেলের’ পরিচয় অস্বীকার করে। একটি টেলিভিশনের প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, মুশফিকুর রহমান ইফাত নামে কেউ তার ছেলে বা আত্মীয় নয়, এমন নামে কাউকে চেনেন না পর্যন্ত। তার একটিই ছেলে, তার নাম তৌফিকুর রহমান।
এরপর ইফাতের পরিচয় ও পারিবারিক বিভিন্ন তথ্য ফেসবুকে আসতে থাকে। ইফাতের সঙ্গে মতিউর রহমান এবং পরিবারের অন্যদের ছবিও প্রকাশিত হয়।
আলোচনার মধ্যে বেসরকারি এক টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “চারবার দুদক তদন্ত করে দেখেছে, আমি কোনো দুর্নীতি করিনি।”
মতিউর সরকারি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসায় জড়িয়েছেন; বিনিয়োগ করেছেন পুঁজিবাজারেও। বিপুল আয়ের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করলে মতিউর ওই সাক্ষাৎকারে বলেন, “একটা গ্রুপ অব কোম্পানির ৩০০ একরের জমিতে আমার একটা অংশ আছে। কোনো কারখানায় আমার বিনিয়োগ আছে। কিন্তু ৩০০ একর জমি বা কারখানার পুরোটা আমার না। আমাদের পরিবারের বিনিয়োগ আছে মাত্র।” মতিউর রহমানের অবৈধ সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য গঠিত অনুসন্ধান দলের প্রধান দুদকের উপ-পরিচালক আনোয়ার হোসেনের আবেদনে গত ২৪ জুলাই ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন মতিউরের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেন।
গত ৬ জানুয়ারি মতিউর রহমান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ১২৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে মামলাগুলো দায়ের করে দুদক ।