এক সময় নীলফামারী ছিল উত্তরের অবহেলিত জনপদ হিসেবে পরিচিত। সময়ের সঙ্গে এই চিত্রটি এখন পাল্টেছে। কিন্তু কোনো পরিবর্তনই দ্রুত হয় না। তার পেছনে থাকে অনেক দিনের নিরলস শ্রম, সাধনা, মেধা আর ঐকান্তিক ইচ্ছা। নীলফামারীর নীলসাগর গ্রুপ এই পরিবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আর যিনি নেপথ্যের কারিগর হিসেবে কাজ করেছেন তিনি প্রকৌশলী আহসান হাবিব লেলিন।
এখানকার নারীরা এতদিন ছিল অনেক বেশি অবহেলিত। কিন্তু মানুষ মাত্রই যে সম্পদ আর অমিত সম্ভাবনা, তা অনুধাবন-উপলব্ধি করেছেন প্রকৌশলী লেলিন। শিক্ষক পিতার নৈতিকতার আদর্শে গড়ে উঠেছেন তিনি; মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার প্রয়াসেরত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে। এ বছর তার লক্ষ্য, নীলফামারীর ১৫ হাজার অবহেলিত নারীর কর্মসংস্থান। যেন এই নারীরা নিজেদের অভাব-অনটন মিটাবার পাশাপাশি নীলফামারীকে এগিয়ে নিতে পারে। সেই সূত্র ধরেই নীলফামারীর নারীদের জীবন আজ বদলে গেছে। অসংখ্য নারী এখন কাজ করছে নীলসাগরের ব্র্যান্ড প্রমোটর হিসেবে।
বহুমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে নীলসাগরের কনজুউমার প্রোডাক্ট প্রমোশনাল অ্যাক্টিভিজমে যুক্ত হয়েছে তারা। যাচ্ছে ভোক্তার কাছে, জানছে ভোক্তার চাহিদা, প্রয়োজন, অর্থনৈতিক সক্ষমতা, অক্ষমতা; অনেকটা আর্থসামাজিক গবেষণার উপাত্ত সংগ্রহ। নীলসাগর সেই চাহিদা কতটা মিটাতে পারে সেই চেষ্টা রয়েছে তাদের। পৌঁছে দিচ্ছে ভোক্তার কাছে নীলসাগরের উৎপাদিত সামগ্রী। নীলফামারীকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করবার প্রয়াসে এই মেয়েরা সহযাত্রী, সহযোদ্ধা।
নীলসাগর গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আহসান হাবিব লেলিন বলেন, ‘‘পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর নারীদের এগিয়ে দিতে তাদের কাজের সঙ্গে যুক্ত করেছে নীলসাগর গ্রুপ। উন্নয়ন কেবল সেতু আর ভবন নির্মাণ নয়, মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন। তাই আগে প্রয়োজন প্রত্যক্ষ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি। আর নারীদের এগিয়ে যাওয়া মানেই অগ্রগতির সূচকে ভূমিকা রাখা।’’
মঙ্গাপীড়িত নীলফামারী এখন সমৃদ্ধ। এখানকার নারীরাও এখন আর অবহেলিত, অপ্রয়োজনীয় নয়। অনিবার্য গুরুত্ব বহন করছে সংসারে, সমাজে। নিভৃতে অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলেছে রাষ্ট্রেরও। কেননা মানের দিক থেকে নীলসাগর গ্রুপ ইতোমধ্যেই অর্জন করেছে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সনদ; মানসম্পন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসাবে। এই নারীদের এখন সামাজিক পরিচয় রয়েছে, রয়েছে নিজস্ব উপার্জন, পেশাগত পরিচয় ও দক্ষতা। একটি স্বনামধন্য ব্র্যান্ডের সঙ্গে তাদের জীবনমানও যুক্ত হয়েছে। যে মেয়েদের কদিন আগেও অনেকে ভাবত বোঝা, অসহায়, কিছু করবার নেই- তারাই এখন নারীর এগিয়ে যাওয়ায়, অর্থনৈতিক উন্নয়ন কাঠামোতে, দেশের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রেখে চলেছে।