যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ভারী বোমার একটি চালান পৌঁছেছে ইসরায়েলে। এমন এক সময় ওই চালান পৌঁছাল, যখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এই অঞ্চলে তার প্রথম সরকারি সফরে দেশটি সফর করছেন। খবর আরব নিউজের।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন গত মাসে ইসরায়েলে ‘ভারী’ বোমা সরবরাহের ওপর থেকে জো বাইডেন প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর এই অস্ত্রশস্ত্র পাঠানো হলো।
জো বাইডেন ইসরায়েলে ২ হাজার পাউন্ড ওজনের বোমা সরবরাহ সীমিত করেছিলেন। কারণ গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই বোমা নির্বিচারে ব্যবহার করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল।
রবিবার (১৬ জানুয়ারি) ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন কর্তৃক অনুমোদিত ‘এমকে-৮৪’ নামের ‘ভারী’ বোমার একটি চালান ইসরায়েলে রাতারাতি গ্রহণ ও খালাস করা হয়েছে।”
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের প্রধান সালামা মারুফ ভারী বোমা পাঠানোর মার্কিন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, মানবিক উদ্দেশ্য নিয়ে গাজা উপত্যকায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য খাদ্য, ওষুধ, পানি, অথবা আশ্রয় এবং নির্মাণ সামগ্রী পাঠানোর পরিবর্তে বিশ্বের প্রথম গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের পথিকৃৎ যুক্তরাষ্ট্র ভারী এমকে বোমা দিয়ে অপরাধী দখলদার সেনাবাহিনীকে সমর্থন করে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও শনিবার তেল আবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। আজ রবিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে তার বৈঠকের কথা রয়েছে, যেখানে তিনি ট্রাম্পের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বিতর্কিত প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে পারেন বলে জানা গেছে।
নেতানিয়াহু সম্প্রতি তার ওয়াশিংটন সফরের সময় ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর, গাজায় ইসরায়েলের পরবর্তী পদক্ষেপের প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘পূর্ণ সমর্থন’-এর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে বলেছেন, “ইসরায়েলকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা কী করবে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করবে!”
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের সামারিক অভিযানে যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় প্রায় এক মাস ধরে যুদ্ধবিরতি চলছে। যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুসারে, এবার ষষ্ঠ দফায় কয়েশ’ত ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তির বিনিময়ে হামাস গাজায় তিনজন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েলে পৌঁছান।
গত সপ্তাহের শুরুতে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট নেতানিয়াহু শনিবার ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দৃঢ় অবস্থান’কে কৃতিত্ব দিয়েছেন।
নেতানিয়াহু মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। যার মধ্যে অবশিষ্ট ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি ও গাজা যুদ্ধের স্থায়ী সমাধানের বিষয় থাকতে পারে। তবে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে ইসরায়েল-হামাস এখনও একমত হয়নি।
আলোচনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, মধ্যস্থতাকারীরা আগামী সপ্তাহে কাতারের দোহায় গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা শুরু করার আশা করছেন।
ওয়াশিংটন গাজা ইস্যুতে আরব দেশগুলোর বিকল্প প্রস্তাবের সুযোগ উন্মুক্ত রেখেছে, কিন্তু জোর দিয়ে বলেছে, বর্তমানে, “পরিকল্পনা একমাত্র ট্রাম্পের।”
ট্রাম্প ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ ও এর বাসিন্দাদের মিশর বা জর্ডানে স্থানান্তরিত করার প্রস্তাব দিয়েছেন। মিশর ও জর্ডান উভয়ই ট্রাম্পের এমন প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছে।
ট্রাম্প মিশর ও জর্ডানকে গাজার ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে প্রবেশের অনুমতি না দিলে পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।