জাতীয়

উত্তাল কুয়েট, উত্তাপ ঢাকাসহ সারা দেশে

উত্তাল কুয়েট, উত্তাপ ঢাকাসহ সারা দেশে

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্র রাজনীতি প্রশ্নে ছাত্রদল ও শিক্ষার্থীদের সংঘাতের জেরে পুরো খুলনা নগরী উত্তাল হয়ে উঠে। সেই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও শহর-নগরে। কুয়েটে উভয় পক্ষ মিলে অন্তত ৫০ জন আহত হওয়ার খবর রয়েছে। কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। 

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) কুয়েটে দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে আলাদাভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদল। চট্টগ্রাম, কুমিল্লাহ প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের খবর আসছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর থেকে কুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ আছে। কুয়েটে ছাত্র রাজনীতি যাতে আবার শুরু হতে পারে, সে জন্য ছাত্রদলের কর্মীরা সোমবার ক্যাম্পাসে লিফলেট বিতরণ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুপুরে শিক্ষার্থীরা ‘ছাত্র রাজনীতির ঠিকানা, এই কুয়েটে হবে না’, ‘দাবি মোদের একটাই, রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস চাই’, ‘এই ক্যাম্পাসে হবে না, ছাত্র রাজনীতির ঠিকানা’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হলগুলো প্রদক্ষিণ করে।

ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মঙ্গলবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় বিক্ষোভ করে।

ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া কুয়েটের বাইরেও হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পকেট গেট থেকে বহিরাগতরা একটি গ্রুপের পক্ষ নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দুপুর আনুমানিক ২টার দিকে কুয়েটের পকেট গেটের বাইরে বিএনপি-সমর্থিত বহিরাগতরা একজন ছাত্রকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে ক্যাম্পাসের ভেতর ফেলে রাখে। এরপর থেকে সাধারণ ছাত্ররা বেরিয়ে ক্ষোভ দেখাতে থাকেন।

এক পর্যায়ে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে চলে আসে ছাত্রশিবির ও বহিরাগতদের গ্রুপ। বহিরাগতরা কুয়েটের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে। কুয়েট প্রধান ফটকের সামনে শিক্ষার্থীরা কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালায়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কুয়েটের প্রধান ফটকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান।

খানজাহান আলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বলেন, ‘‘কুয়েটে ছাত্রদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।’’

কুয়েটের ঘটনায় উভয় পক্ষ পরস্পরকে দোষ দিচ্ছে। কেন্দ্রীয়ভাবেও এই বিভাজন দেখা দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদাভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদল। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে কিছুটা দূরে ডাস ক্যাফেটেরিয়া এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল অবস্থান নেয়।

কুয়েটে দুপুর থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন করা হয় বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কুয়েটে দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়ে ছাত্রদল বলেছে, কুয়েটে সাধারণ শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারকে অপব্যবহার করে ফরম বিতরণের অভিযোগ এনে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর ‘গুপ্ত সংগঠন’ শিবির ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কতিপয় সন্ত্রাসীর নৃশংস হামলার প্রতিবাদে কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)

কুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সন্ধ্যা ৭টার দিকে বুয়েট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি পলাশী হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের পাশ দিয়ে বকশিবাজার মোড় ঘুরে পুনরায় সেখানে গিয়ে সমাবেশ করেন।

মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই আহত কেন, প্রশাসনের জবাব চাই’, ‘কুয়েটে হামলা কেন, জবাব চাই জবাব চাই’, ‘ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা-হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি-চলবে না চলবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, বাংলাদেশকে আরেকটি নৈরাজ্যপূর্ণ রাষ্ট্রে পরিণত হতে আমরা দেব না। হাজারো শহীদের রক্তস্নাত এ ফ্যাসিস্টমুক্ত স্বাধীনদেশে ফ্যাসিস্টদের পুরনো পদচারণা আমরা মেনে নেব না। কুয়েটের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা একান্তই কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের, কোনো বহিরাগত সন্ত্রাসীর না। ইতোপূর্বে বুয়েটে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যেমন শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছিল, ছাত্রদলের বর্তমান সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধেও তাদের অবস্থান অনঢ় এবং সুদৃঢ়। 

দ্রুত হামলাকারী সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়ে কুয়েট প্রশাসনের উদ্দেশ্যে তারা বলেন, কোনভাবেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গিয়ে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি পুনর্বাসনের চেষ্টা করবেন না। অন্যথায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা এর বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোরতম কর্মসূচী গ্রহণ করবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)

কুয়েটের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদল ও ছাত্রদলের বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামরার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির। রাত সাড়ে ৮ টার দিকে ঢাবি শাখা শিবিরের প্রচার সম্পাদক সাজ্জাদ হোসাইন খাঁন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানিয়েছে সংগঠনটি‌। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কুয়েট শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রদল এবং ছাত্রদলের ছত্রছায়ায় বহিরাগতদের হামলায় প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছেন। ঢাবি ছাত্রশিবির এমন নৃশংস হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এক যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ এবং সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন খান বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে, তাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা এক নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। নতুন বাংলাদেশে কুয়েটের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের এ নৃশংস হামলা ঔদ্ধত্যের বহিঃপ্রকাশ। শিক্ষার্থীদের রক্তে রঞ্জিত ক্যাম্পাস দেখে মনে হচ্ছে আমরা ১৫ জুলাইয়ে ফিরে গেছি। শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রদলের দেশীয় স্বশস্ত্র হামলা আমাদের নিষিদ্ধঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের আচরণ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)

সন্ধ্যায় কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে ছাত্রদলের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাবি শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় বটতলায় এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা।

মিছিলে তারা ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘সন্ত্রাস করে দুই দল, লীগ আর ছাত্রদল’, ‘ছাত্রদল হামলা করে, ইন্টেরিম কি করে’, ‘আমার ভাই আহত কেন, ইন্টেরিম জবাব দে’, ‘লীগ গেছে যেই পথে, দল যাবে সেই পথে’, ‘কুয়েটের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়িনাই’, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী সুয়াইব হাসানের সঞ্চালনায় শিক্ষার্থীরা বলেন, কুয়েটের মতো ঘটনা আজ থেকে ৬ মাস আগে আমরা বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ঘটতে দেখেছি। একইভাবে ছাত্রদল আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থী ভাইবোনের উপর যে নারকীয় হামলা চালিয়েছে, আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে এর সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছি। আমরা নতুন বাংলাদেশে যে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দিকে যাচ্ছি, যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি, সেই স্বপ্নকে ব্যাহত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ক্যাম্পাসগুলোতে যারাই ছাত্রলীগের মতো সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতে আসবে আমরা তাদের শক্ত হাতে প্রতিহত করবো।

এদিকে, রাত ১১টার দিকে জাবি শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এনিয়ে ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)

কুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের হামলার প্রতিবাদে রাত সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও অ্যাকাডেমিক ভবন ঘুরে পুনরায় সেখানে গিয়ে সমাবেশ করেন তারা।

মিছিলে তারা ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কুয়েট তোমার ভয় নাই, জুলাই আগস্ট ভুলি নাই’, ‘কুয়েটে হামলা কেনো প্রশাসন জবাব চাই’, ‘জোহা স্যারের স্মরণে, ভয় করিনা মরণের’, ‘আলী রায়হান মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশান’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

মিছিল শেষে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মেহেদী সজীব, সালাউদ্দিন আম্মার, আকিল বিন তালেব, দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, আমরা দেখেছি কুয়েট শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রদল কিভাবে হামলা চালিয়েছে। শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের চালানো নির্মমতা আমরা আবারো লক্ষ করছি। আমি তাদের সাবধান করে দিতে চাই, জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশ আর পূর্বের বাংলাদেশ কিন্তু এক নয়। ছাত্রলীগকে যেভাবে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করেছি, ছাত্রদল যদি না শুধরে নেয়; তাদের পরিণতিও ভয়াবহ হবে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)

রাত ৯টার দিকে ইবির জিয়া মোড় থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে বিক্ষোভ নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ মিনারে গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।

মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নো যুদ্ধ’, ‘কুয়েটে হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘লীগ গেছে যেই পথে, দল যাবে সেই পথে’, ‘নৌকা আর ধানের শীষ, দুই শাপের একই বিষ’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’সহ বিভিন্ন শ্লোগান দেন।

এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা যেই জুলাইয়ে স্প্রিট ধারণ করেছিলাম, তা আজ কুয়েটে নষ্ট হয়েছে। জুলাইয়ের পরে কেউ স্বৈরাচার হলে তাদের পরিস্থিতি হবে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের মতো। বিপ্লবী ছাত্র জনতা তাদের রেহাই দিবে না। আমরা বাংলাদেশ থেকে সন্ত্রাসীদে নির্মূল করে ছাড়ব। আমরা ক্যাম্পাসে অনেক সন্ত্রাসীদের ছাড় দিয়েছি বলেই আজকের হামলা।

তারা আরো বলেন, ষড়যন্ত্র থেমে নেই। আমাদের সবসময় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সন্ত্রাসীদের কোন পরিচয় নেই। আজকের হামলাকারীদের বিচার ও ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে। আমরা কারো বিরুদ্ধ আন্দোলন করতে দ্বিধা করিনি। এখনো কারো পাখা গজালে ছাত্রসমাজ তাদের ছাড় দেবে না।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)

কুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাত পৌনে ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন কুবি শিক্ষার্থীরা।

এ সময় শিক্ষার্থীরা মিছিলে ‘একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘চব্বিশের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘বায়ান্নর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘কুয়েটে হামলা কেন? প্রশাসন জবাব চাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

বিক্ষোভ মিছিল শেষে আয়োজিত সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম আবর্তনের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মো. হান্নান রহিম বলেন, “কুয়েটে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদল সন্ত্রাসীদের হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তদন্ত করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এর বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আজ ছাত্রদল যে লিখিত বিবৃতি দিয়েছে, তাতে তারা উল্লেখ করছে- ছাত্রদলের ওপর হামলা করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত হাস্যকর এবং ছাত্রলীগের মতো কার্যকলাপ। আমি ছাত্রদলের ভাইদের বলতে চাই, আপনারা ছাত্রলীগের পথে হাঁটবেন না।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব হোসাইন বলেন, “ছাত্র রাজনীতির সংস্কার না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ছাত্র রাজনীতি চলবে না। অন্যথায় ক্যাম্পাসে এরকমই হামলা, সন্ত্রাসী কার্যক্রম চলতে থাকবে। আমি ছাত্র ভাইদের উদ্দেশ্যে বলব, আপনারা যদি জুলাই অভ্যুত্থানের স্প্রিরিট ধরে রাখতে চান, তাহলে বাংলাদেশের কোন ক্যাম্পাসে কোন দল যেন লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি না করতে পারে।”

 

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি)

কুয়েট শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রদল-যুবদলের হামলার প্রতিবাদে রাত ৯টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজের ব্যানারে মশাল মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা।

মিছিলটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল থেকে শুরু হয়ে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে যায়। এরপর ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক দিয়ে মাহতাব টাওয়ার প্রদক্ষিণ করে পুনরায় প্রধান ফটকে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।

এ সময় তারা কুয়েটে যারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে তাদেরকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। একইসঙ্গে ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরকে সুস্থ ধারার রাজনীতি করার আহ্বান জানান। অন্যথায় তাদের পরিণতি ছাত্রলীগের মত হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন। 

সমাবেশে বক্তব্য দেন, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মিরাজুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মঞ্জুরুল ইসলাম, কাওসার আলম, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মোরসালিন ইসলাম রানা, মজনু আলম, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী নুরুল আমিন প্রমুখ।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)

কুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের সশস্ত্র হামলার প্রতিবাদে রাত ১০টায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। বাকৃবির আব্দুল জব্বার মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে ছেলেদের আবাসিক হলগুলো প্রদক্ষিণ করে আবার আব্দুল জব্বার মোড়ে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।

মিছিলে তারা ‘সন্ত্রাসীর ঠিকানা, এ ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর যে নৃশংস সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। এ ঘটনার দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠ বিচারের দাবি জানাচ্ছি। অন্যায়ভাবে হামলা চালালে বাকৃবির শিক্ষার্থীরাসহ দেশের সব ছাত্র-জনতা জেগে উঠবে। ছাত্রসমাজ এখনো জুলাই আন্দোলনের চেতনা ভুলে নাই। সেই চেতনাকে সামনে রেখে আমরা আমাদের পথচলাকে আরও মসৃণ করতে চায়। ক্যাম্পাসগুলোতে কোন সন্ত্রাসীদের ঠিকানা হবে না।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)

কুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের হামলার প্রতিবাদে রাত ১০টায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন যবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। এ সময় মহানবী (সা.)-কে কটুক্তির প্রতিবাদ এবং অভিযুক্ত রাখাল রাহার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।

এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ছাত্রদলের সন্ত্রাস, রুখে দাঁড়াও ছাত্র সমাজ’, ‘ছাত্রলীগ গেছে যেই পথে, ছাত্রদল যাবে সেই পথে’, ‘শিক্ষা সন্ত্রাস, একসাথে চলে না, চলবে না’, ‘শিক্ষা চাঁদাবাজি, একসাথে চলে না, চলবে না’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরো দেব রক্ত’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘সন্ত্রাসীদের আস্থানা, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘সন্ত্রাসীদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’সহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন।

মিছিল শেষে আয়োজিত সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, কুয়েটে শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রদল কর্তৃক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ছাত্রদল কুয়েট হলের গ্লাস ভেঙেছে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেছে। আমাদের দেশের জনগণের সম্পদ নষ্ট করেছে। কুয়েট প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীকে ক্যাম্পাসে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি। কুয়েট উপাচার্য এ দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না। 

তারা বলেন, যবিপ্রবি ক্যাম্পাসে কোন লেজুড়ভিত্তিক রাজনীতি চলবে না। ক্যাম্পাসের আশেপাশে কোথাও ছাত্রদলের কোন লিফলেট বা পোস্টার দেওয়া যাবে না। আমাদের ক্যাম্পাসে ছাত্রদলসহ সব রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।

শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, রাখাল রাহা ছদ্মবেশি সন্ত্রাস। আসল নাম সাজ্জাদুর রহমান। সে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটুক্তি করেছে। আমরা রাখাল রাহার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)

কুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাত ১০টায় শাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী আজাদ শিকদারের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার বিন সেলিম, শিল্প ও উৎপাদন প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী পলাশ বখতিয়ার, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল হোসেন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সজিবুর রহমান, বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম প্রমুখ।

সরকারি তিতুমীর কলেজ

কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তিতুমীর কলেজের প্রধান ফটক থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মশাল মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে টিবি গেট প্রদক্ষিণ করে পুনরায় কলেজের প্রধান ফটকে এসে শেষ হয়।

এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘শিক্ষা-সন্ত্রাস, একসাথে চলে না’, ‘শিক্ষা-বোমাবাজি, একসাথে চলে না’, ‘শিক্ষা-চাঁদাবাজি, একসাথে চলে না’, ‘শিক্ষা-সন্ত্রাস, একসাথে চলে না’, ‘যেই হাত ছাত্র মারে, সেই হাত ভেঙে দাও’সহ নানান স্লোগান দেন।