পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ড জামে মসজিদটি মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত। এই মসজিদটির ঠিক বিপরীত পাশেই রয়েছে হাসপাতাল ও আদালত। ফলে এলাকাটি জন গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবছর রমজানে এই মসজিদে গণ ইফতারের আয়োজন করা হয়। এবারও রোজাদার মুসল্লিদের জন্য নেওয়া হয়েছে এই উদ্যোগ। যেখানে ধনী-গরিব থেকে শুরু করে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষ একসঙ্গে একই প্লেটে ইফতার করার সুযোগ পাচ্ছেন।
মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানায়, পাঁচ বছর ধরে রমজান মাস জুড়ে গণ ইফতারের আয়োজন করছেন তারা। স্থানীয়দের দেওয়া আর্থিক সহযোগিতায় এই আয়োজন করা হচ্ছে। ইফতারের জন্য রাখা হয় খিচুড়ি অথবা বিরিয়ানি। ইফতারে যারা অংশ নিতে আসেন তাদের অধিকাংশই পথচারী, হাসপাতালের রোগী দেখতে আসা স্বজন অথবা ভ্যান ও রিকশা চালক।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) পঞ্চম দিনের মতো গণ ইফতারের আয়োজন করা হয় এই মসজিদে। এদিন তিন শতাধিক মুসল্লি অংশ নেন ইফতারে। গণ ইফতার কার্যক্রম শুরু হয় রমজানের প্রথম দিন থেকেই। চলবে মাসব্যাপী।
পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার সাতেমরা এলাকার মুক্তার হোসেন। বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বিকেলে অসুস্থ স্বজনকে দেখতে হাসপাতালে যান তিনি। হাসপাতাল থেকে বের হতে হতে সময় হয়ে যায় ইফতারের। ইফতার কোথায় করবেন এ নিয়ে যখন তিনি চিন্তিত, তখন স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারেন মসজিদে গণ ইফতার আয়োজনের বিষয়টি। ইফতারে অংশ নিয়ে আয়োজকদের প্রশংসা করেন তিনি।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থেকে আদালতে মামলা সংক্রান্ত কাজে এসেছিলেন আব্দুল কুদ্দুস। এদিন তিনিও ইফতার করেন পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ড জামে মসজিদে। তিনি বলেন, “আদালতের কাজ শেষ হতে একটু দেরি হয়ে গেছে। ভেবেছিলাম, বাজারে গিয়ে কোনো একটি হোটেলে বসে ইফতার করব। যখন জানতে পারলাম মসজিদে ইফতারের আয়োজন আছে, তখন এখানেই বসে পরি। ইফতারের আয়োজনটা ভালো ছিল।”
সাব্বির আহমেদ নামে এক ইজবাইক চালক বলেন, “আমি প্রতিদিন এখানেই ইফতার করি। আয়োজনটা ভালো। আমাদের মতো মানুষের কথা চিন্তা করে যারা এমন উদ্যোগ নিয়েছেন, আল্লাহ তাদের মনের আশা পূরণ করবেন ইনশাআল্লাহ।”
স্থানীয় যুবক মো. বাদল বলেন, “আমরা গত পাঁচ বছর ধরে এই গণ ইফতার কর্মসূচি করে আসছি। একক কারো অর্থায়নে নয়, মুসল্লিদের উদ্যোগ এবং স্থানীয়দের সহযোগিতায় এটি হচ্ছে। আমাদের এই ধারাবাহিকতা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।”
পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ড জামে মসজিদের ইমাম মুফতি মুহিবুর রহমান বলেন, “আগে মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে শুধুমাত্র আমাদের ইমাম, মুয়াজ্জিন এবং খাদেমের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা ছিল। যখন আমরা বারান্দায় বসে ইফতার করতাম, তখন দেখতাম- হাসপাতালের অনেক রোগীর স্বজনেরা, রিশকা-ভ্যান চালক এবং অনেক পথচারী মসজিদের ওযু খানায় এসে শুধু পানি পান করে ইফতার করতেন। এই বিষয়টা দেখে আমাদের খুবই খারাপ লাগে। ফলে মসজিদ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা গণ ইফতার আয়োজনের উদ্যোগ নেই।’
তিনি আরো বলেন, “এ বছর প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ জন রোজাদার আমাদের সঙ্গে ইফতার করছেন। যাদের মধ্যে অধিকাংশই গরিব শ্রেণির। বিষয়টি আমাদের খুবই ভালো লাগে। আমরা চাই ব্যস্ততম এলাকাগুলোর প্রত্যেক মসজিদেই রমজান জুড়ে এমন আয়োজন থাকুক। যেখানে গরিব পথচারীরা পেটপুরে ইফতার করতে পারবেন।”