সাতসতেরো

আছিয়া চলে গেলো, আমরা কি প্রতিবাদ থামিয়ে দেবো?

আছিয়া চলে গেলো, আমরা কি প্রতিবাদ থামিয়ে দেবো?

মাগুরার আছিয়া চলেই গেলো! যাওয়ার আগে পুরো বাংলাদেশকে কাঁদিয়ে গেলো। মনে দাগ কাটেনি- এমন মানুষ পাওয়া ভার। তার সাথে কি হয়েছিলো কেন হয়েছিলো- তা দেশশুদ্ধ সবাই জানে। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কি কি শাস্তি হওয়া উচিত, তা নিয়েও পুরো দেশে হইচই হচ্ছে। এ বয়সী কন্যা ঘরে ঘরে আছে। আকারে ইঙ্গিতেও একে সমর্থন করার কোন উপায় নেই। মাগুরার ঘটনা প্রথম ঘটনা নয়। এর আগেও বহুবার এই জাতীয় ভয়ংকর বিকৃত অপরাধ ঘটেছে, আমরা শোরগোল করেছি, তারপর ভুলে গেছি। ভুলতে পারে না কেবল সেই পরিবার। কিন্তু তাদের খবর আর কে রাখে! কেবল শিশু নয়, নারী নির্যাতনও বাড়তির দিকে। 

মানুষের ভেতর অপরাধ প্রবণতা থাকে। সব দেশে, সব সমাজেই থাকে। যেকোনো নির্যাতনের প্রথম শিকার হয় দুর্বলেরা। দুর্বলতার দিক থেকে সবচেয়ে নিচের স্তরে আছে প্রাণীরা, যারা এই পৃথিবীতেই থাকে কিন্তু অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে না। তাদের ভাষা থাকলেও আমরা বুঝি না এবং তাদের জন্য কোন আইন আদালত থাকলেও তারা নিজে নিজে যেতে পারে না। সমাজে নিষ্ঠুরতার প্রথম শিকার হয় প্রাণীরা। মন চাইলেই আমরা কুকুর বিড়ালের দিকে ঢিল এমনকি গরম পানি ছুঁড়ে মারি, মেরে ফেলতেও দ্বিধা করি না এবং একে অন্যায় বলেও মনে করি না। বরং বিকৃত আনন্দ পাই। গত ১০ই মার্চ বরগুনা সদরে একটি গুলিবিদ্ধ মদনটাক পাখি আহত হয়ে তেঁতুলবাড়িয়া এলাকায় আশ্রয় নেয়। ৭ থেকে ১০ বছর বয়েসি কিছু শিশু পাখিটিকে দেখতে পেয়ে এলাকার অভিভাবকদের জানায়। এবং এলাকার লোকজন উল্লাস করে পাখিটিকে জবাই করে মাংস ভাগাভাগি করে নেয়। শিশুরা কি শিখল? যে দুর্বল গুলিবিদ্ধ পাখিটি প্রাণ বাঁচাতে মানুষের কাছে এসেছিল, সেই মানুষ উল্লাস করে তাকে মেরে খেল! এই নিষ্ঠুরতা দেখে বড়ো হয়ে তারা কি নিষ্ঠুরতাকেই স্বাভাবিক মনে করবে না? ঠিক তার পরের দিন ১১ই মার্চ রাঙ্গামাটি রাজস্থলী উপজেলায় একটি মা হাতি ৯০ কেজি ওজনের একটি বাচ্চা পেটে নিয়ে পাহাড়ি এলাকায় টানা কয়েকদিন স্থানিয়দের তাড়া খেয়ে ধকল সইতে না পেরে মৃত্যুবরণ করে। মানুষ মায়ের কষ্টের চাইতে হাতি মায়ের কষ্ট কোনভাবেই কম থাকার কথা না। কতো কষ্ট পেয়ে সেই মা মৃত্যুবরণ করেছে কিংবা মৃত্যুর আগে মানুষ সম্পর্কে কি কি ভেবেছে, তা আমরা জানি না। জানার প্রয়োজন ও বোধ করি না। এগুলো সমাজে অহরহই ঘটছে। এই সবই ভয়াবহ নিষ্ঠুরটা! 

সমাজে বর্বরতার প্রথম শিকার হয় প্রাণী, তারপর নারী , দরিদ্র, তারপর শিশু। কারণ তারা দুর্বল। সবলেরা তাদের পেয়ে বসে। দুর্বল-সে যেই হোকনা কেন, নির্যাতন অপরাধ। সব নির্যাতনের বিরুদ্ধে হইচই হলে নিপীড়ক, খুনি, ধর্ষকদের অপরাধ প্রবণতা কমবে। বেছে বেছে প্রতিবাদ নয়, প্রতিবাদ হোক দুর্বলের প্রতি সব অপরাধের বিরুদ্ধে!আমরা যেন প্রতিবাদ থামিয়ে না দেই।