ছন্দময় আর্জেন্টিনার সামনে বিবর্ণ ব্রাজিল। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের খেলায় ব্রাজিলকে নিয়ে রীতিমত ছেলেখেলায় মেতে উঠল আর্জেন্টিনা। সাবেক শিরোপাধারীদের জালে গুণে গুণে ৪ গোল দিল বর্তমান শিরোপাধারীরা। ব্রাজিল শোধ দিয়েছে ১ গোল। তাতে শুধু পরাজয়ের ব্যবধানই কমেছে। নিজেদের মাঠ বুয়েন্স আয়ার্সে আর্জেন্টিনার এমন আধিপত্যে বড় পরাজয়কে সঙ্গী করেছে ব্রাজিল। মাঠে নামার আগেই অবশ্য আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ খেলার টিকিট পেয়ে যায়। বাছাই পর্বের অন্য ম্যাচে উরুগুয়ে বলিভিয়াকে হারাতে না পারায় আর্জেন্টিনা দক্ষিণ আমেরিকার মহাদেশের প্রথম দল হিসেবে ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট পায়। সেই আনন্দটা আর্জেন্টিনা দ্বিগুন করে ব্রাজিলকে ৪-১ গোলে হারিয়ে।
লিওনেল স্কোলানির দলের হয়ে একটি করে গোল করেন জুলিয়েন আলভারেজ, এনজো ফার্নান্দেজ, অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার ও জুলিয়ানো সিমেওনে। ব্রাজিলের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন ম্যাথুস কুনিয়া।
১৪ ম্যাচে ৩১ পয়েন্ট নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকা বাছাইপর্বে টেবিলের শীর্ষে আর্জেন্টিনা। অন্যদিকে ব্রাজিলের সমান ম্যাচে সংগ্রহ কেবল ২১ পয়েন্ট। তারা আছে চার নম্বরে।
দুই দলের দুই বড় তারকা মাঠে নেই। লিওনেল মেসি ও নেইমারকে ছাড়া মাঠে নেমেছিল দুই দল। তারপরও ব্রাজিল দলে ভিনিসিয়াস, রাফিনিয়ারা ছিলেন। আর্জেন্টিনার হয়ে আলভারেস, এমিলিয়ানো মার্তিনেজ নামলেও লাউতারো মার্তিনেজ, পাওলো দিবালারা ছিলেন না। দুই দলের মধ্যে ফেভারিট কে তাই আলাদা করার সুযোগ ছিল না।
কিন্তু মাঠের ফুটবলে আলাদা করা গেছে ঠিকই। আত্মবিশ্বাসী আর্জেন্টিনা নিজেদের দৃঢ়তা দেখিয়ে ব্রাজিলকে স্রেফ দর্শক বানিয়ে রেখেছিল। ম্যাচের প্রায় ৬১ শতাংশ সময় বল আর্জেন্টিনা নিজেদের কাছে রাখতে পেরেছিল। গোলের জন্য ১২টি শট নিয়ে অন টার্গেটে রাখতে পেরেছিল সাতটি। সেখানে ব্রাজিল মাত্র তিনটি শট নিতে পেরেছিল।
ম্যাচের চার মিনিটে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নেন আলভারেস। ম্যানচেস্টার সিটির এই ফরোয়ার্ড আলমাদার বাড়ানো বল ডি বক্সের ভেতরে ফাঁকায় পেয়ে লক্ষ্যভেদ করেন। যা বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচে তৃতীয় দ্রুততম গোল।
৮ মিনিটের ব্যবধানে দ্বিতীয় গোল পায় আর্জেন্টিনা। এবার গোল করেন এনজো ফার্নান্দেজ। ডি বক্সের বাইরে থেকে জটলা থেকে বল পেয়ে ফার্নান্দেজ সহজেই বল জালে পাঠান। ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়া ব্রাজিল শোধ দিতে মরিয়া হয়ে উঠলেও ভালো ফুটবল খেলতে পারছিলেন না। তবুও ২৬ মিনিটে কুনিয়া নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে গোল করে খানিকটা জবাব দেন।
প্রথমার্ধের খেলা শেষ হওয়ার আগে আর্জেন্টিনা ছন্দময় ফুটবলে আরেকটি গোলের দেখা পায়। এনজো ফার্নান্দেজের বাঁকানো ক্রস থেকে অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার পা ছুঁইয়ে গোল করেন। তাতে প্রথমার্ধে স্কোরলাইনের চিত্র ছিল এরকম, আর্জেন্টিনা ৩: ১ ব্রাজিল।
ম্যাচে ফিরতে মরিয়া ব্রাজিল দ্বিতীয়ার্ধে তিন পরিবর্তন করে। কিন্তু মাঠের ফুটবলে তেমন পরিবর্তন টের পাওয়া যায়নি। বরং আর্জেন্টিনার দাপটই ছিল বেশি। তাতে ৭১ মিনিটে চতুর্থ গোলের দেখা পায় আলবিসেলেস্তেরা। জুলিয়ানো সিমেওনে মাঠে নামার তিন মিনিটের মধ্যে বক্সে বল পেয়ে কোনাকুনি শটে গোল করেন।
ব্রাজিলকে এরপর আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঘরের মাঠে আর্জেন্টিনা নিজেদের দাপট দেখিয়ে শেষটাও রাঙান দারুণভাবে। তাতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের বিপক্ষে শেষ পাঁচ ম্যাচে চারটিতে জয় তুলে আর্জেন্টিনা এগিয়ে গেল দারুণভাবে।