সমুদ্রে ভারতীয় মৎস্যজীবীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সীমা নেই। এতদিন অভিযোগ ছিল বাংলাদেশি জলসীমায় প্রবেশ করে ইলিশ ধরে নিয়ে যায় ভারতীয় মৎস্যজীবীরা। এবার অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য সমুদ্রে নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা বিরল প্রজাতির হাঙর দেদারে শিকার করার অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় মৎস্যজীবীদের বিরুদ্ধে।
কেবল বড় হাঙর নয়। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের শিডিউল ১-এর আওতায় থাকা ছোট শিশু হাঙরের পর্যন্ত দেদার শিকারের অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় মৎস্যজীবীদের বিরুদ্ধে। এমন ঘটনায় সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র ক্ষতির আশঙ্কায় গভীর প্রকাশ করেছে ভারতীয় পরিবেশবিদেরা।
কাকদ্বীপ, নামখানাসহ পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার উপকূলীয় সমুদ্র বন্দর সংলগ্ন মৎস্য আড়ত। অভিযোগ রয়েছে, বেশ কিছুদিন ধরেই বেআইনিভাবে এসব আড়তে চলছে নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা হাঙরের বেচাকেনা। বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরেজমিনে দেখতে গিয়ে দেখা যায়, কাকদ্বীপের মাঝ নদীতে ট্রলার রেখে ছোটছোট ভুটভুটিতে বোঝাই করে ঘাটে ভেড়ানো হচ্ছে মাছ বোঝাই ক্যারেট। যার বেশ কয়েকটিতেই রয়েছে শত শত শিশু হাঙর ! ক্যামেরা সামনে ধরতেই কোনো মতে সেই সব ক্যারেট তুলে পালালেন মৎস্যজীবীরা।
স্থানীয় মাছ বাজারগুলো দেখা গেছে, রুই-কাতলার মতো প্রকাশ্যে দেদারে বিক্রি হচ্ছে শিশু হাঙর। যার প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ রুপিতে। বোঝাই যায় বাজারে খুব বেশি চাহিদা নেই। তারপরও কেন ধরা হচ্ছে বিরল প্রজাতিরই হাঙর?
সামুদ্রিক মৎস্যজীবী শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক ও কাকদ্বীপ ফিশারম্যান ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, “একসময় বাণিজ্যিকভাবে হাঙর শিকার করা হতো, বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি হিসেবে হাঙর শিকার নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়লে হাঙর শিকার কার্যত বন্ধ। তবে ইলিশ মৌসুমে ইলিশের জালে ছোট ছোট শিশু হাঙর আটকা পড়ে। কিছু লাভের জন্য সেগুলো সমুদ্রে না ফেলে বাজারজাত করে মৎস্যজীবীরা।” এ বিষয়ে প্রশাসনিক নজরদারির দাবি জানান তারা।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বন্দর সংলগ্ন মৎস আড়তগুলোতে নজরদারি বাড়িয়েছে প্রশাসন। চলছে মাইকিং, ধরপাকড়।
তবে মৎস্য ব্যবসায়ী মিন্টু দাসের মতে, জালের মধ্যে যদি শিশু হাঙর চলে আসে এবং সেই মৃত হাঙর যদি আমরা নদীতে আবারো ফেলে দিই তাহলে নদী দূষিত হবে। এদিকে সঙ্গে করে নিয়ে এলে কিছু অতিরিক্ত অর্থ পাওয়া যায়।
স্থানীয় শিক্ষক সৌম্যকান্তি জানা হাঙর নিধনের এমন ঘটনায় রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সামুদ্রিক বাসতন্ত্রে খাদ্যশৃঙ্খলের একেবারে উপরে বসে আছে হাঙর। যাকে বলা হয় টপ মোস্ট ফিডার বা কি স্টোন স্পিসিস। এরা সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করে। এরা বিপন্ন হয়ে উঠলে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র বিপন্ন হয়ে উঠবে। তাই দ্রুত পদক্ষেপ জরুরি।