প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা চায়ের রাজধানী মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। এই উপজেলার হাইল হাওরের পশ্চিম প্রান্তে গোপালা নদীর আশপাশের জলাশয়ে ফুটেছে অগণিত গোলাপী শাপলা। এই ফুলের মায়াবি হাতছানিতে বিমোহিত পর্যটক। দেশের নানা প্রান্ত থেকে বিল ও ফুলের সৌন্দর্য উপভোগে শীতের এই মৌসুমে ছুটে আসছেন তারা।
শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে মির্জাপুর ইউনিয়নের পূর্ব পাশে হাইল হাওরের অবস্থান। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্রতিবছরই শাপলা ফোটে। বর্ষা থেকে শুষ্ক মৌসুম পর্যন্ত বিলটিতে শাপলা থাকে। প্রচার-প্রচারণার অভাবে এর সৌন্দর্য সাধারণের দৃষ্টিগোচর হয়নি এতদিন। এবার কয়েকজন ব্লগার ছবিসহ তথ্য প্রকাশ করলে মুহূর্তেই জনপ্রিয়তা পায় স্থানটি।
এলাকাবাসী জানান, হাইল হাওরের হাজার গোলাপী শাপলা ভোরের প্রথম আলোয় যখন একসঙ্গে ফোটে তখন পুরো এলাকাজুড়ে নয়নাভিরাম দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। এসময় ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন সবাই। দুপুরের দিকে ফুল কিছুটা নিস্তেজ হলেও বিকেলে আবার জলাভূমিতে মনোরম মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেয় শাপলা। সেই দৃশ্যই দেখতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষের পদচারণায় মুখর থাকছে হাওর ও হাওর পাড়ের গ্রামীণ সড়ক।
সিলেট শহর থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, “একসঙ্গে এত শাপলা আগে কখনো দেখিনি। ভোর থেকেই শাপলা বিলে ছড়িয়ে পড়ে অপূর্ব সৌন্দর্য। দুপুরে ফুলের পাপঁড়িগুলো চুপসে গেলেও বিকেলে আবারো রঙের সাজ ছড়ায়। ফুটন্ত শাপলাগুলো জলাভূমিকে যেন অন্য রকমভাবে সাজিয়ে রেখেছে। পুরো দিনটি আমরা শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করেছি। এই ফুল আমাদের বিমোহিত করেছে।”
এলাকার বাসিন্দা মিছলু আহমদ চৌধুরী বলেন, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শাপলা বিলের ছবি ভাইরাল হওয়ায় দর্শনার্থীর সংখ্যা গত কয়েকদিনে দ্রুত বেড়েছে। আগে এখানে কেউ আসত না, এখন প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীরা আমাদের এলাকায় আসছেন এবং নৌকায় ঘুরে শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। আমাদের প্রত্যান্ত এলাকায় এতো মানুষের আগমন ভালোই লাগে। প্রতি বছরই বর্ষার শেষে এভাবেই বিস্তীর্ণ এলাকায় শাপলা ফোটে। সেটি শুষ্ক মৌসুমেও থাকে।”
তিনি বলেন, “মির্জাপুর বাজার থেকে হাওড় পাড়ের গ্রামীন সড়কটি যদি উন্নত করা যায়, তাহলে এই জায়গাটি একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান হিসেবে প্রকাশ পাবে। এখানে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটবে বলে আমার বিশ্বাস।”
শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে শাপলা তুলে ফেসবুকে অনেকেই পোস্ট করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শ্রীমঙ্গলের প্রকৃতিপ্রেমী ও সৌখিন ফটোগ্রাফার তারিক হাসান। তিনি নিজের ফেসবুকের টাইমলাইনে একটি পোস্ট করে বলেন, ‘আচ্ছা রে, তোমরা যে শাপলা বিলে গিয়ে ইচ্ছা মতো ফুল তুলে আনো, এইগুলা এনে কাকে দাও? এটা কোন কালচার তোমাদের যে যেখানেই যাও সব উজাড় করে দাও পঙ্গপালের মতো? তোমাদের হাতে কাশফুল নিরাপদ না, শাপলাফুল নিরাপদ না কোন কিছুই নিরাপদ না!”
মির্জপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য লুৎফুর রহমান বলেন, “প্রচার না থাকায় আগে এখানে তেমন মানুষ আসত না। এখন দূর-দূরান্ত থেকে শাপলার সৌন্দর্য দেখতে মানুষ আসেন। বিনোদনের জন্য দারুণ একটি স্থান তৈরি হয়েছে। অনেকেই পরিবার নিয়ে গোলাপি শাপলা দেখতে আসছেন দেখে ভালো লাগছে।”
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, “মির্জাপুরের গোলাপী শাপলার বিল এখন দেশ-বিদেশের পর্যটকের আকর্ষণ। প্রতিদিন দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে। এখানে পর্যটনের সম্ভাবনা অনেক। প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিতের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে।”