সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর ব্যবহার করে বেড়েছে রপ্তানি, কমেছে আমদানি। সেই সঙ্গে বেড়েছে বন্দরের রাজস্ব আয়ও। ২০২৩-২৪ অর্থবছর ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আমদানি-রপ্তানি ও রাজস্ব আয়ের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ভোমরা ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, এ বন্দর দিয়ে ২৩টি বিভিন্ন প্রকার দেশীয় পণ্য ভারতের রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানিকৃত এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে ইয়ার্ন (সুতা), ওয়েস্ট, ক্লিনিং ক্লথ, ক্যাপ, জুট ইয়ার্ন, পলেস্টার স্টাপল ফাইবার, তুষের তেল, ফার্নিচার, মশারির নেট, পলেস্টার সুতা, ফিশি নেট, প্লাস্টিক বাথরুম ফিটিং, তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গি, আদর ক্লে, অপরিশোধিত তিলের তেল, কটন ওয়েস্ট, ট্রাভেল ব্যাগ, সয়া এসিড ওয়েল, রেডিমেড গার্মেন্টস, টোস্ট, জুস, চিপস ও লিচু।
ভোমরা স্থলবন্দর কাস্টমস স্টেশন সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ৫৯ হাজার ৬৯৩টি গাড়িতে ৮ হাজার কোটি ৭৫ লাখ টাকা মূল্যের ২০ লাখ ৮২ হাজার ৭২২ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি করা হয়। এ থেকে সরকার ৯৭৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করে সরকার।
যেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬৩ হাজার ৯০২টি গাড়িতে ৬ হাজার ৪৭৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা মূল্যের ২৩ লাখ ৫৫ হাজার ৬২ টন পণ্য আমদানি করা হয়েছিল। রাজস্ব আয় হয়েছিল ৯০৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
সর্বশেষ অর্থ বছরে আমদানি কমলেও রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৮৪ ভাগ। এ সময়ে অর্থাৎ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে বেড়েছে রপ্তানি।
জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ২২ হাজার ৯৩৭টি গাড়িতে ৩ হাজার ৪০৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা মূল্যের ২ লাখ ৮৬ হাজার ১৩০ টন পণ্য রপ্তানি হয়। যেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৪ হাজার ৫৮০টি গাড়িতে ৩ হাজার ৯০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা মূল্যের ২ লাখ ৭৪ হাজার ১১০ টন পণ্য রপ্তানি হয়। সেই হিসেবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ২৩ ভাগ।
এদিকে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে ৯২ কোটি ২৪ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আয় করেছে ভোমরা শুল্ক স্টেশন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভোমরা বন্দর থেকে ৮৫৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছিল। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আয় হয়েছে ৯৪৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
স্থল শুল্ক স্টেশনের এন্ট্রি শাখা থেকে রপ্তানির তুলনামূলক তথ্য নেওয়া হয়েছে। রপ্তানি বাণিজ্য দেশীয় মুদ্রায় রাজস্ব আহরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু মুছা জানান, পণ্য রপ্তানিতে আমাদের দেশ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো সুবিধা লাভ করছে। এছাড়া সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দ থেকে কলকাতার দূরত্ব অন্যান্য বন্দর অপেক্ষা কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এই বন্দর ব্যবহার করতে বেশি আগ্রহী।
তিনি বলেন, “এখানে আমদানি-রপ্তানি দুটোই ক্রমশ বাড়ছে। সেইসাথে বাড়ছে সরকারের রাজস্ব আয়।”
ভোমরা স্থল বন্দরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা প্রশাসন মনিরুজ্জামান খান জানান, চলতি অর্থবছরে ডলার সংকটের কারণে আমদানিতে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। আশা করছি বাকি যে সময়টা আছে, এর মধ্যেই ঘাটতি পূরণ হবে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে খাদ্যপণ্য, নির্মাণসামগ্রী, পোশাক ও কসমেটিকসসহ নানা পণ্য আমদানি হয়। অপরদিকে, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয় কৃষিপণ্য, মাছ ও শিল্পজাত দ্রব্য।