ক্রিকেট ইতিহাসের ১৪৮ বছরের দীর্ঘ পথচলায় যা আগে কখনো ঘটেনি, মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বাইশ গজে আজ ঠিক সেই রূপকথারই জন্ম দিলেন নিউ জিল্যান্ডের দুই ওপেনার ডেভন কনওয়ে ও টম ল্যাথাম। এক টেস্টের উভয় ইনিংসে একই দলের দুই ওপেনারের সেঞ্চুরি করার কোনো নজির আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তো বটেই, এমনকি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও ছিল না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের এই টেস্টে কিউইদের দুই কান্ডারি সেই অকল্পনীয় কীর্তি গড়ে ইতিহাসের পাতায় অমরত্ব পেলেন।
ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ডেভন কনওয়ে খেলেছিলেন ২২৭ রানের এক মহাকাব্যিক ডাবল সেঞ্চুরি। আর অধিনায়ক টম ল্যাথাম করেছিলেন ১৩৭। আজ রবিবার (২১ ডিসেম্বর) ম্যাচের চতুর্থ দিনে দ্বিতীয় ইনিংসেও সেই একই দাপট বজায় রাখলেন দুজনে। কনওয়ে ১০০ রান করে সাজঘরে ফেরার পর ল্যাথামও ১০১ রানের ইনিংস খেলে থামেন। ক্রিকইনফোর তথ্যমতে, আন্তর্জাতিক বা ঘরোয়া ক্রিকেট ইতিহাসের কোনো পর্যায়েই এক দলের দুই ওপেনারের চার শতক পাওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম।
প্রথম ইনিংসে নিউ জিল্যান্ডের করা ৫৭৫ রানের জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ লড়াই করার চেষ্টা করলেও ৪২০ রানে থমকে যায়। সফরকারীদের পক্ষে কাভেম হজ ১০৯ রানে অপরাজিত থেকে বীরত্বপূর্ণ এক লড়াই উপহার দেন। তবে সঙ্গী হিসেবে অন্যদের বড় সমর্থন পাননি তিনি। ফিলিপ অ্যান্ডারসন ১৭ রানে বিদায় নেওয়ার পর, ফুড পয়েন্টজনিংয়ের ধকল কাটিয়ে মাঠে নামা নির্ভরযোগ্য ব্যাটার শাই হোপ মাত্র ৪ রানে সাজঘরে ফেরেন। বাকিদের মধ্যে কেবল জায়দেন সিলস (১৫) কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন। কিন্তু কেমার রোচ রানের খাতাই খুলতে পারেননি। কিউই বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ১৫৫ রানের বড় লিড পায় নিউ জিল্যান্ড।
সেই লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামা নিউ জিল্যান্ড শুরু থেকেই ছিল আগ্রাসী। দুই ওপেনার তাদের রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরি করার পর আউট হলে কেন উইলিয়ামসন (৪০*) এবং রাচিন রবীন্দ্র (৪৬*) দ্রুত রান তুলতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত ২ উইকেটে ৩০৬ রানে ইনিংস ঘোষণা করে কিউইরা। যার ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪৬২ রান।
চতুর্থ দিনের শেষ বিকেলে ব্যাটিংয়ে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিনা উইকেটে ৪৩ রান সংগ্রহ করেছে। ওপেনার ব্র্যান্ডন কিং ৩৭ রানে এবং জন ক্যাম্পবেল ২ রানে অপরাজিত আছেন। জয়ের জন্য ম্যাচের শেষ দিনে ক্যারিবীয়দের আরও ৪১৯ রান করতে হবে। ক্রিকেট ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৪১৮ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড রয়েছে (২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ)। ফলে এই ম্যাচ জিততে হলে ল্যাথাম-কনওয়েদের রেকর্ড গড়ার দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও গড়তে হবে নতুন এক বিশ্বরেকর্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (চতুর্থ দিন শেষে): নিউ জিল্যান্ড: ৫৭৫/৮ ডিক্লে. ও ৩০৬/২ ডিক্লে. (ল্যাথাম ১০১, কনওয়ে ১০০) ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪২০/১০ (হজ ১০৯*) ও ৪৩/০ (কিং ৩৭*) লক্ষ্য: ৪৬২ রান (জিততে প্রয়োজন আরও ৪১৯ রান)।