রাজনীতি

প্রধান উপদেষ্টার অবশ্যই এ বিষয়ে বক্তব্য দেওয়া উচিত ছিল: জামায়াত

“প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস শহীদ ওসমান হাদির জানাজায় অংশগ্রহণ করে গুরুত্বপূর্ণ হৃদয়গ্রাহী বক্তব্য দেন। কিন্তু ওসমান হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের ব্যাপারে কোনো কথাই বলেননি। ওসমান বিন হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের ব্যাপারে অবশ্যই তার বক্তব্য দেওয়া উচিত ছিল। আমরা আশাকরি, তিনি এ ব্যাপারে জাতির সামনে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করবেন।’’

রবিবার ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাইয়ের বিপ্লবীযোদ্ধা শরীফ ওসমান বিন হাদির শাহাদাত উপলক্ষে রাজধানীর মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এ কথা বলেন। 

জামায়াত আয়োজিত দোয়া মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘‘দেশবাসীর প্রশ্ন ওসমান বিন হাদির খুনিরা হামলার ছয় ঘণ্টা পর কীভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারল? কেন সরকার তাদের গ্রেপ্তার করতে পারল না? সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা কী করেছে? গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে ওসমান বিন হাদির হত্যাকারীদের সহযোগিতাকারী কেউ লুকিয়ে আছে কিনা তা অবশ্যই তদন্ত করে দেখা উচিত।’’

শহীদ হাদির হত্যার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করার জন্য তিনি সরকারের নিকট জোর দাবি জানান।

শরীফ ওসমান বিন হাদি শির উঁচু করে শহীদ হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন মন্তব্য করে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘‘হাদি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান শহীদ। তার শাহাদাতের পর দেশবাসী তার অনেক বক্তব্য টিভি চ্যানেলসহ বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে শোনার সুযোগ পেয়েছেন। তার বক্তব্যে আমরা দেখতে পাই, তিনি বারবার শহীদ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছিলেন। আল্লাহ তার শহীদ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করেছেন। আজ তার দুনিয়া ও আখিরাতের জীবন সার্থক হয়েছে বলে আমরা মনে করি।’’

“শহীদ ওসমান হাদির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, সৎ জীবন দেশবাসীকে মুগ্ধ করেছে। তার শাহাদাতের পরে মানুষের মধ্যে যে জোয়ার, জজবা ও আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছে তা এক বিরল ঘটনা। গতকাল তার নামাজে জানাজায় সরকার প্রধান, উপদেষ্টাবৃন্দ এবং দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের লাখ লাখ মানুষ যেভাবে অংশগ্রহণ করেছে, তা দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। আল্লাহ তার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে তাকে দুনিয়ায় অতি উঁচু মর্যাদা দিয়েছেন এবং আমরা আশাকরি আখিরাতেও আল্লাহ তাকে অতি উঁচু মর্যাদা দান করবেন। তাকে হারিয়ে তার পরিবার-পরিজন শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন। আল্লাহ তাদের এ শোক সহ্য করার তাওফিক দান করুন।’’ 

দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিমের সঞ্চালনায় মাহফিলে বক্তব্য রাখেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মো. সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও চাকসুর সাবেক ভিপি অ্যাড. জসিম উদ্দিন সরকার এবং শহীদ শরীফ ওসমান বিন হাদির বড় ভাই ওমর বিন হাদি। 

ওমর বিন হাদি বলেন, “আমার ছোট ভাই সবসময় বলত ‘আমাকে আল্লাহ রক্ষা করবেন। আমার নিরাপত্তার দায়িত্ব আল্লাহর। আল্লাহ আমাদের পরিবার-পরিজন ও দেশের ১৮ কোটি মানুষকে নিরাপত্তা দিবেন। আমরা দেশকে আধিপত্যবাদীদের কবল থেকে মুক্ত করার জন্য রাজপথে নেমেছিলাম। আমরা শোষণ-জুলুমের অবসান ঘটিয়ে একটি ন্যায়ভিত্তিক ইনসাফপূর্ণ দেশ গড়ার জন্য রাজপথে নেমেছি।’’

আমার ভাই ওসমান হাদি শাহাদাত বরণ করেছেন। হাদি যে স্বপ্ন দেখত সেই স্বপ্নপূরণ করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। তার অসমাপ্ত বিপ্লব সমাপ্ত করতে তিনি সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি পরিবার-পরিজনসহ সকলের কল্যাণের জন্য দেশবাসীর দোয়া কামনা করেন। 

আলোচনা শেষে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মুসা, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির ও এড. ড. হেলাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি নাজিম উদ্দিন মোল্লা, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি কামাল হোসাইন, ড. আবদুল মান্নান প্রমুখ।