সারা বাংলা

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গাইবান্ধায় দাফন সুদানে নিহত সবুজের

আফ্রিকার সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের ড্রোন হামলায় নিহত ছয় বাংলাদেশির একজন গাইবান্ধার হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান সবুজ মিয়া (২৮)।

সেই সবুজ মিয়াকে নিজ জেলা গাইবান্ধায় আনা হয় হেলিকপ্টারে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে বীরের মর্যাদা।

রবিবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে সদর উপজেলার তুলসীঘাট এলাকায় একটি হ্যালিপ্যাডে নামানো হয় সবুজের মরদেহ। এসময় শত শত উৎসুক মানুষ ভিড় করে সবুজকে একনজর দেখার জন্য। 

এর আগে শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে সুদানে শান্তিরক্ষা মিশনের ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের ড্রোন হামলায় নিহত ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর মরদেহ দেশে এসে পৌঁছায়।  

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শান্তিরক্ষীদের মরদেহবাহী ফ্লাইটটি অবতরণ করে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়। 

রবিবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে সবুজ মিয়ার মরদেহের কফিন বহনকারী হেলিকপ্টার গাইবান্ধা সদর উপজেলার তুলসীঘাট হেলিপ্যাডে আসার কথা থাকলেও আবহাওয়ার প্রতিকূলতার কারণে হেলিকপ্টারে লাশ এসে পৌঁছায় দুপুর ২টার দিকে।

সেখান থকে অ্যম্বুলেন্সে মরদেহ সবুজের গ্রামের বাড়ি পলাশবাড়ী উপজেলার মহদীপুর ইউনিয়নের ভগমানপুর গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এসময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

নিহতের চাচাতো ভাই ফরিদ মিয়া বলেন, “অভাবের সংসারে সবুজই ছিল একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। দুবছর বয়সে সে বাবাকে হারিয়ে এতিম হয়ে যায়। খুব অল্প বয়সেই সে সেনাবাহিনীর বেসামরিক পদ লন্ডি মিস্ত্রি হিসেবে কাজ শুরু করে। স্বপ্ন ছিল, সুদানের ওই মিশনে বেশ কিছুদিন থেকে একটু স্বাবলম্বী হলেই দেশে এসে নিয়মিত ঘর-সংসার করবে।”

“বিয়ে হয়েছে মাত্র ১৭ মাস আগে। এই বয়সে তার স্ত্রীও বিধবা হলো। আর তার বৃদ্ধা মা একা হয়ে গেল। সারা দিন শুধু মুখে একটাই কথা, ‘মোর সোনাটাক তোমরা যেটি থাকি পারেন, আনি দেও,” বলেন ফরিদ। 

নিহতের চাচা আনোয়ার মিয়া বলেন, “বাপ মারা যাওয়ার পর সেই ছোটবেলা থেকে ওকে মানুষ করেছি। কী যে কষ্ট করেছি, সেটা শুধু আমি জানি। ওর একটা চাকরি করার খবু ইচ্ছে ছিল, আল্লাহ সেই ইচ্ছেকেও পূরণ করেছে। আবার আল্লাহ তাকে এভাবে কেড়েও নিল। বাবাকে (সবুজ) হারিয়ে আমাদের পাগল হওয়ার অবস্থা।” 

দাফনের সময় উপস্থিত পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জাবের আহমেদ বলেন, “সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সবুজ মিয়াকে গার্ড অব অনার দেওয়ার পর ৩টা ৩০ মিনিটে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরবর্তী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকার সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।” 

নিহত সবুজ মিয়া পলাশবাড়ী উপজেলার মহদীপুর ইউনিয়নের ভগমানপুর গ্রামের পূর্বপাড়ার মৃত হাবিদুল মিয়ার ছেলে।

গাইবান্ধা সেনা কমান্ডার আলভি ইসলাম বলেন, আমরা সবুজ মিয়া লাশ গ্রহণ করি এবং যথাযথ মর্যাদায় তার গ্রামের বাড়িতে দাফন সম্পন্ন করা হয়।” 

সুদানে ওই ড্রোন হামলায় ছয় শান্তিরক্ষী নিহত হওয়ার পাশাপাশি ৯ শান্তিরক্ষী আহত হন। যাদের মধ্যে আটজন কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে আগা খান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।