রাশেদ শাওন : তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তবে রেখে গেছেন অসংখ্য গান। এক সময় সেই গানগুলো মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে। এখনো যারা শোনেন তারা একটু হলেও কি নস্টালজিক হয়ে যান না! তার নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের স্বর্ণালী সময়। কণ্ঠ জাদুকর মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীর কথা বলছি। ষাট, সত্তর ও আশির দশকে চলচ্চিত্র, রেডিও এবং টেলিভিশনে গান করতেন মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী। তিনি মিডিয়ায় গান গাওয়া শুরু করেন ১৯৬০ সাল থেকে। জানা যায় ২০৬টি চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। তার গাওয়া গানের সংখ্যা প্রায় চার হাজার। মতান্তরে সাড়ে তিন হাজার। বাংলা গানের পাশাপাশি তিনি উর্দু গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন। আর কণ্ঠশিল্পী হিসেবে পেয়েছিলেন দারুণ দর্শক প্রিয়তা। তার গাওয়া জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- বাঁশি বাজে দূরে, ঐ দূর দূর দূরান্তে, জানতাম যদি শুভঙ্করের ফাঁকি, হেসে খেলে জীবনটা যদি চলে যায়, হৈ হৈ রঙ্গিলা রঙ্গিলা রে, তোর রূপ দেখে চোখ ধাঁধে মন ভরে না, শোন গো রূপসী ইত্যাদি। কণ্ঠশিল্পী, সংগীত পরিচালক এবং সুরকার মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীর জন্ম ১৯৪৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনা জেলায়। তিনি বিপিন দাস, সমর দাস, আবদুল আহাদ, কাদের জামেরী প্রমুখ সংগীত ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে সংগীতে দীক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালের সুরাইয়া সিদ্দিকীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এ সংগীতশিল্পী। এ দম্পতির তিন কন্যাসন্তান রয়েছে। তারা হলেন- এ্যানি সিদ্দিকী, রেনি সিদ্দিকী ও গিনি সিদ্দিকী। তারা সবাই সংগীতের সঙ্গে জড়িত। সংগীতজগতে অবদান স্বরূপ তিনি জাতীয় পুরস্কার ছাড়াও অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এই স্বনামধন্য প্রয়াত কণ্ঠশিল্পীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তার গাওয়া চলচ্চিত্রের গানগুলো থেকে জনপ্রিয় দশটি গান প্রিয় পাঠকদের জন্য উপস্থাপন করছি। গানগুলো শোনার পাশাপাশি ভিডিও দেখে নিন।
১. গান : শোন গো রূপসী ললনা
সিনেমা : কি যে করি (১৯৭৫), পরিচালক : জহিরুল হক, কণ্ঠশিল্পী : মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, অভিনেতা রাজ্জাক, ববিতা। এই গানটি সে সময় দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। পরবর্তিতে বাংলা চলচ্চিত্রে রোমান্টিক গানের সেরা তালিকাতেও জায়গা করে নেয় তা। এখনো গানটি এখনো তা আবেদন ধরে রেখেছে।
২. গান : হৈ হৈ রঙ্গিলা রঙ্গিলা রে
সিনেমা : রংবাজ (১৯৭৩), পরিচালক : জহিরুল হক। অভিনয় শিল্পী : রাজ্জাক, কবরী। কণ্ঠশিল্পী : মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী ও সাবিনা ইয়াসমীন।
৩. গান : তোর রূপ দেখে চোখ ধাঁধে
সিনেমা : রংবাজ (১৯৭৩), পরিচালক : জহিরুল হক। অভিনয় শিল্পী : রাজ্জাক। কণ্ঠশিল্পী : মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী। এই গানটিও দারুণ জনপ্রিয়তা পায় সে সময়। তখন মানুষের মুখে মুখে ছিল এ গানটিও।
৪. গান : আমি কত দিন কত রাত ভেবেছি
সিনেমা : মানুষের মন, গীতিকার : গাজী মাজহারুল আনোয়ার, কম্পোজিশন : সত্য সাহা, কণ্ঠ : মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী। রোমান্টিক এ গানটি সে সময় দারুণ শ্রোতা প্রিয়তা লাভ করে।
৫. গান : কে তুমি এলে মোর এই জীবনে
সিনেমা : অভিশাপ, কণ্ঠ : মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী ও জিনাত রেহানা।
৬. গান : একটি ছোট্ট আশা
সিনেমা : প্রতিশোধ, সংগীত পরিচালনা : আলতাফ মাহমুদ, কণ্ঠ : মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী ও শাহনাজ রহমতউল্লাহ, অভিনয় : রাজ্জাক ও সুচন্দা। সে সময়ের বেশ জনিপ্রয়তা পায় ছবিটি। সেই সঙ্গে এই গানটি শ্রোতাদের মন জয় করে নেয়।
৭. গান : লেখা পড়া করে যে গাড়ি-ঘোড়া চড়ে সে
সিনেমা : অতিথি (১৯৭৩), গীতিকার : গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সংগীত : সত্য সাহা, কণ্ঠশিল্পী : মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী ও সাবিনা ইয়াসমীন।
৮. গান : এই শহরে আমি যে
সিনেমা : মানুষের মন (১৯৭২), পরিচালক : মোস্তফা মেহমুদ, কণ্ঠশিল্পী : মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, অভিনয় শিল্পী : রাজ্জাক। জীবনধর্মী গানটি শ্রমজীবী মানুষের কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীর গায়কিতে তা এক উচ্চ মর্যাদা লাভ করেছে।
৯. গান : রঙ্গিলা মাঝি রে তুমি রঙের বৌঠা বাও
সিনেমা : পারুলের সংসার, কণ্ঠশিল্পী : রেবেকা সুলতানা ও মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী।
১০. গান : ওই মেঘলা বরন কন্যা চলে চপল চরণে
সিনেমা : আলিঙ্গন, পরিচালক : সুভাষ দত্ত, গীতিকার : সৈয়দ শামসুল হক, সংগীত পরিচালনা : সত্য সাহা, কণ্ঠশিল্পী : মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ নভেম্বর ২০১৪/রাশেদ শাওন