জাতীয়

পিলখানা হত্যা মামলা এখন হাইকোর্টে

মেহেদী হাসান ডালিম : পিলখানা হত্যাকাণ্ড ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস ঘটনা। বাংলাদেশের ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়। ছয় বছর আগে এই দিনে রাজধানীর বিডিআর (বিজিবি) সদর দফতর পিলখানায় ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তাসহ এক সঙ্গে ৭৪ জনকে হত্যা করে বিপথগামী বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) সদস্যরা।

 

ওই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া হরতাল-অবরোধের মধ্যেও এগিয়ে চলছে। ইতিমধ্যেই হাইকোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চে এ মামলার আপিল শুনানি ২১ কার্যিদিবস অতিক্রম করেছে।

 

আদালত সূত্রে জানা যায়, ডেথ রেফারেন্স ও ফৌজদারি আপিলের শুনানির জন্য মোট ৩৫ হাজার ১১৩ পৃষ্ঠার পেপার বুক প্রস্তুত করা হয়েছে।আদালতে সম্পূর্ণ পেপার বুক পড়া হবে, তারপর উভয়পক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন। চূড়ান্ত যুক্তি উপস্থাপন শেষে হাইকোর্ট এ মামলার আপিলের রায় ঘোষণা করবেন।

 

হাইকোর্টে এ পর্যন্ত ২১ কার্যদিবস শুনানি হয়েছে।রাষ্ট্রপক্ষের ৬৫৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দির মধ্যে ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দি আদালতে পাঠ করা শেষ হয়েছে।প্রায় বিরতিহীনভাবে চলছে আপিল শুনানি।পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ডেথ রেফারেন্স ও ফৌজদারি আপিলের শুনানি এক সঙ্গে চলছে।

 

এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আপিল শুনানির কার্যক্রম যে গতিতে এগুচ্ছে তাতে আমরা আশা করতে পারি আগামী ছয় মাসের মধ্যে হাইকোর্টের বিচার প্রক্রিয়া শেষ হবে।’

 

তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ের পর এটা আবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে যাবে। তারপর আপিল বিভাগ বিস্তারিত শুনবেন।’ তবে হাইকোর্টের চাইতেও আপিল বিভাগে কম সময় লাগবে বলে জানান রাষ্ট্রের এ প্রধান আইন কর্মকর্তা।

 

আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামীম সরদার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মামলার নথিপত্র অনেক বেশি হওয়ায় এই মামলার কার্যক্রম শেষ করতে ছয় মাসের বেশি সময় লাগবে।’

 

আসামিপক্ষের আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘উচ্চ আদালত প্রতিটি সাক্ষীর সাক্ষ্য চুলচেরা বিশ্লেষণ করবেন। আশা করি ন্যায় বিচার পাব।’

 

তিনি আরো বলেন, ‘অনেকের বিরুদ্ধে যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।’

 

সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা যায়, গত ৪ জানুয়ারি শুধু পিলখানা হত্যাকাণ্ডের আপিল মামলার জন্য বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের হাইকোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চ গঠন করেন প্রধান বিচারপতি। এই বিশেষ বেঞ্চে সু্প্রিম কোর্টের নিজ তত্ত্বাবধায়নে পেপারবুক প্রস্তুত করে দ্রুততার সঙ্গে আপিল শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়।১৮ জানুয়ারি থেকে প্রায় বিরতিহীনভাবে শুনানি চলছে।

 

আরো জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসার কাছে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে মহানগর তৃতীয় দায়রা জজ ড. আক্তারুজ্জামান বহুল আলোচিত পিলখানা হত্যাকাণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। এর মধ্যে তৎকালীন ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জন বিডিআর সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড, বিএনপি দলীয় প্রাক্তন সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা তোরাব আলীসহ ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং ২৭৮ জনকে খালাস দেওয়া হয়। বিশ্বের ইতিহাসে একটি মামলায় সবচেয়ে বেশি আসামির ফাঁসির আদেশের রেকর্ড গড়েছে এ রায়টি।বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে নয়জন পলাতক রয়েছেন। কারাগারে আটক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন চারজন।

 

নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ১১৯টি ফৌজদারি আপিল, ১৪১টি জেল আপিল এবং ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার জন্য একটি ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে দায়ের করা হয়েছে। খালাসপ্রাপ্ত ২৭৮ জনের মধ্যে ৬৯ জনের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ।

 

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর(বিজিবি) সদর দফতরে কথিত বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন চৌকস সেনা অফিসার, নয়জন বিডিআর সদস্য, সাতজন সাধারণ লোক এবং একজন সেনা সদস্যকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন বিপথগামী বিডিআর সদস্যরা। পরে ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়, যা পিলখানা হত্যা মামলা নামে পরিচিত। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই হত্যাকাণ্ড কলঙ্কজনক ঘটনা এবং কালো অধ্যায়।

     

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ ফেব্রয়ারি ২০১৫/মেহেদী/রফিক