আজ শুভ মহালয়া। আজ থেকেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার ক্ষণ গণনা শুরু। মহাদেবী মা দুর্গার আগমনী ধ্বনি উচ্চারিত হবে শরতের শ্যামল আকাশে অরুণ আলোয়, স্নিগ্ধ সমীরণে।
আনন্দময়ীর আগমনের মধুর কলধ্বনি শোনা যায় মহালয়ার পুণ্যতিথিতে। সাধকের সাধন জগতেও মহিষাসুরমর্দিনীর আবির্ভাব ঘটে মহালয়া সাধনাবস্থার পরম পবিত্র মুহূর্তে। মহালয়া উদযাপন তারই স্মারক উৎসব।
সনাতন ধর্মমতে তিনটি অমাবস্যা প্রসিদ্ধ। আলোক অমাবস্যা, মহালয়া অমাবস্যা এবং দ্বীপান্বিতা অমাবস্যা। মহালয়া অমাবস্যা আশ্বিন মাসে হয়। যে কৃষ্ণপক্ষের শেষে মহালয়া অমাবস্যা হয় সেই কৃষ্ণপক্ষকে বলা হয় অপরপক্ষ। এ পক্ষে যারা অপর হয়ে গেছেন অর্থাৎ যারা প্রয়াত হয়েছেন সেই পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ করা হয়। তাদের স্মরণে করা হয় পারলৌকিক ক্রিয়া।
মহতের আলয় থেকে মহালয়। সেখান থেকেই মহালয়া শব্দের উৎপত্তি। প্রাণই মহা। এ মহার আলয় মহালয় হলো বৃহৎ কূটস্থ। প্রথমত কূটস্থে প্রবেশ করে, তারপর বৃহৎ কূটস্থে সাধক প্রবেশ করেন। সাধক যে কুণ্ডলিনী শক্তিকে মূলাধারে জাগ্রত করে ক্রমে ক্রমে বৃহৎ কূটস্থে প্রবেশ করেছেন তা তখন মহাশক্তিতে পরিণত হয়। তিনিই দুর্গতিনাশিনী। তিনিই জগতের দুর্গতি নাশ করেন।
অন্যভাবে বলা যায়, সাধক বৃহৎ কূটস্থে অর্থাৎ মহতের আলয়ে তথা মহালয়ে প্রবেশ করে দেবীশক্তির সহায়তায়, আশীর্বাদে মহিষাসুরকে পরাজিত করেন। এখানে মহিষাসুর হলো ভোগপ্রবৃত্তি রূপ মন্দশক্তি। এ মন্দশক্তি থেকে মুক্তি পেতেই যুগে যুগে সাধক ভক্তকুল দেবীর আরাধনা করছেন। তাই মহালয়া অমাবস্যার পরদিন থেকেই দেবী পক্ষের শুরু। দেবী পক্ষ মানে অসুরের বিরুদ্ধে দেবীর সংগ্রামের পক্ষ, সংগ্রামে দেবীর জয়ের পক্ষ।
পৃথিবী আজ আক্রান্ত করোনাভাইরাসসৃষ্ট মহামারিতে। ক্রমেই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। মৃতের তালিকায় প্রতিদিন যুক্ত হচ্ছে শত শত নাম। এ থেকে পরিত্রাণ চাইছে মানুষ। মহিষাসুরের মতোই করোনাকেও নির্মূল করতে হবে। দেবী দুর্গা এ শরতে আমাদের দেখাবেন পরিত্রাণের পথ। করজোড়ে এ নিবেদন।
পাশাপাশি মনে রাখতে হবে, আমাদের মধ্যেও নানা প্রকার অসুরত্ব আছে। দুর্গাপূজা অসুর বধেরই পূজা। মনের অসুরও বিনাশ করতে হবে। মহালয়ার পরদিন থেকে যে দেবী পক্ষের শুরু সেই দেবী পক্ষে দেবী পূজায় দেবীর কৃপায় আমরা যেন নিজেদের মধ্যে বহন করে চলা অসুরত্ব থেকে মুক্তি পাই। মহালয়া ও দেবী দুর্গার মাহাত্ম্য আমরা যেন অনুধাবন করতে পারি।