মতামত

শেখ কামাল সৃষ্টি সম্ভাবনাময় তারুণ্যের প্রতীক 

ডানপিটে ছেলেটি ছোটবেলা থেকেই পিতার আদর, স্নেহ থেকে বঞ্চিত ছিল। সত্যি বলতে কি, জন্মের পর থেকে পিতার সঙ্গে তার ভালোমতো দেখাই হয়নি। কেননা পিতা শেখ মুজিবুর রহমান তখন ‘বঙ্গবন্ধু’ হয়ে উঠছেন, বাঙালি জাতির মুক্তিদূত হয়ে উঠছেন। পাকিস্তানি শোষকদের নির্মম শোষণের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে, প্রতিবাদ করায় পিতাকে প্রায়ই কারাবরণ করতে হয়। এর মধ্যে একদিন বঙ্গবন্ধু জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি এসেছেন। বহুদিন পর বাড়িতে আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ছোট্ট ছেলেটি এই আনন্দের কারণ বুঝতে পারছে না। কেননা বাড়িতে যে অপরিচিত লোকটি এসেছে, তাকে সে চিনতে পারছে না।

আরও অবাক করা ব্যাপার হলো, এই লোকটিকে তাঁর হাসু আপা (শেখ হাসিনা) ‘আব্বা’ বলে ডাকছে। বেশ কাচুমাচু ভঙ্গিতে ছেলেটি হাসু আপার কানে কানে ফিসফিস করে বলল, হাসু আপা, হাসু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা ডাকি?

এই ছেলেটিই হলেন শেখ কামাল। যিনি জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ ছেলে। একজন দেশপ্রেমিক ও আজন্ম স্বপ্নযোদ্ধা। তিনি শুধু স্বপ্ন দেখেননি; স্বপ্ন বাস্তবায়নেও আমৃত্যু কাজ করে গেছেন।

৫ আগস্ট, ১৯৪৯ সালে তাঁর জন্ম হয়েছিল গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে ২য় ছিলেন তিনি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরেই জন্ম হয়েছিল শেখ কামালের।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পুত্র শেখ কামাল। কে ছিলেন তিনি বা কী ছিলেন তিনি? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার চেয়ে ‘কি ছিলেন না তিনি’ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা বোধহয় সহজ হবে। খুব ছোটবেলা থেকেই সব ধরনের খেলাধুলায় প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল তাঁর। ঢাকার শাহীন স্কুলে থাকাকালীন ছিলেন স্কুলের প্রতিটি খেলার অপরিহার্য অংশ। এর মধ্যে ক্রিকেট খেলা তাকে টানত সবচেয়ে বেশি। দীর্ঘদেহী ফাস্ট বোলার ছিলেন, নিখুঁত লাইন-লেন্থ আর প্রচণ্ড গতি দিয়ে খুব সহজেই টালমাটাল করে দিতেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানকে। অবিভক্ত পাকিস্তানের অন্যতম উদীয়মান পেসার ছিলেন, কিন্তু বাঙালি হওয়ার কারণে এবং মুজিবের পুত্র হওয়ার অপরাধে জুয়েল, রকিবুলদের মতো এই প্রতিভাও অবহেলিত, উপেক্ষিত হয়েছেন নিদারুণভাবে। আরেক ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ মুশতাকের তিল তিল পরিশ্রম আর চেষ্টায় গড়া আজাদ বয়েজ ক্লাব তখন কামালদের মতো উঠতি প্রতিভাদের লালনকেন্দ্র। এখানেই শেখ কামাল প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলেছেন দীর্ঘদিন। শুধু খেলাধুলা নয়, পড়াশোনা, সঙ্গীতচর্চা, অভিনয়, বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা থেকে শুরু করে বাংলা সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবার চেষ্টা- কোথায় ছিলেন না শেখ কামাল?

ঢাকার শাহীন স্কুল থেকে এসএসসি ও ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ভর্তি হলেন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে। পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বিস্তৃত হলো কর্মপরিধি। ছায়ানটের সেতারবাদন বিভাগের মেধাবী ছাত্র শেখ কামাল প্রতিষ্ঠা করলেন ঢাকা থিয়েটার। সুঅভিনেতা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে সুপরিচিত ছিলেন তিনি। এদিকে খেলাধুলাও চলছে পুরোদমে।

সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের বাসিন্দা শেখ কামাল বাস্কেট বল টিমের ক্যাপ্টেন ছিলেন। বাস্কেটবলে তাঁর দক্ষতা অসামান্য ছিল। তিনি থাকাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর হলের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখেছিলেন পুরোটা সময়। এর মাঝে ৬৯ সালে পাকিস্তানি জান্তা সরকার রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ করল ধর্মীয় উগ্রতার পরিচয় দিয়ে। শেখ কামাল প্রতিবাদে সামিল হলেন। তাঁর প্রতিবাদের ভাষা হলো রবীন্দ্রসঙ্গীত, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে যেখানে যখনই সুযোগ পেলেন, তখনই বিশ্বকবির গান গেয়ে অহিংস প্রতিবাদের অসাধারণ উদাহরণ রাখলেন তিনি।

শেখ কামাল ছাত্রলীগের নিবেদিত কর্মী হিসেবে উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান ও একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা পালন করেন। তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। শেখ কামাল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ার কোর্সে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে মুক্তিবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানীর এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর শেখ কামাল সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি নিয়ে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করেন। তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ছিলেন।

ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী ও সংগঠক হিসেবে ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলন এবং ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে শেখ কামাল সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। আমার স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে ’৬৯-এর অগ্নিঝরা গণআন্দোলনের কথা। যে আন্দোলনে শেখ কামালের প্রতিদিনের উপস্থিতি ছিল সবার জন্য তুমুল উৎসাহব্যঞ্জক। এই আন্দোলনে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংগঠিত করে মিছিলসহ বটতলায় সমবেত হতেন। জাতির পিতার সন্তান হওয়া সত্ত্বেও তার মধ্যে কোনো অহমিকাবোধ ছিল না। তিনি ছিলেন বিনয়ী ও মার্জিত। দাম্ভিকতা ছিল তাঁর স্বভাব বিরুদ্ধ। পরোপকারী ও বন্ধুবৎসল শেখ কামালের বিনম্র আচরণে মুগ্ধ হতো সবাই। 

যুদ্ধে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাওয়া দেশ পুনর্গঠনে নিজের অসামান্য মেধা আর অক্লান্ত কর্মক্ষমতা নিয়ে পিতার ডান হাত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন শেখ কামাল। বন্ধু স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ম্যানেজার তানভীর মাজহার তান্নার সঙ্গে যুদ্ধের সময় প্রায়ই আলাপ হতো শেখ কামালের। বারবার আক্ষেপ আর আশাবাদের মিশেলে বলতেন, তান্না, আমরা কি আর দেশে ফিরে যেতে পারব না? দেখে নিস, দেশ স্বাধীন হলে খেলার ছবিটাই বদলে দেব আমি। 

কথা রেখেছিলেন কামাল। স্বাধীনতার পরে দেশে ফিরেই আবাহনী সমাজকল্যাণ সংস্থা গড়েন ১৯৭২ সালে। নতুন যাত্রা শুরু হলো আবাহনী ক্রীড়া চক্র নামে একটি ক্লাবের। ক্রিকেটার তানভীর মাজহার তান্না হলেন এই ক্লাবের ফাউন্ডার ভাইস প্রেসিডেন্ট। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি এই খেলাগুলোকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতেন কামাল। স্বপ্ন দেখতেন একদিন বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রীড়া অঙ্গনে পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে। সেই লক্ষ্যে আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন সব ক্ষেত্রেই। উপমহাদেশের মধ্যে প্রথমবারের মতো আধুনিকতার ছোঁয়ায় পাল্টে দিয়েছিলেন সব খেলা খোলনলচে। ক্র্যাক প্লাটুনের বীরযোদ্ধা আবদুল হালিম খান জুয়েলের মতো অসাধারণ সব প্রতিভাগুলো যেন হারিয়ে না যায়, সেই লক্ষ্যে ক্রিকেট ঢেলে সাজাবার মাস্টারপ্ল্যান করেছিলেন কামাল। দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ক্রিকেটারদের খুঁজে বের করে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা দিয়ে তৈরি করছিলেন নতুন দিনের জন্য- আপাত লক্ষ্য আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। স্বপ্ন কিন্তু এখানেই শেষ নয়, দৃষ্টি সীমা ছাড়িয়ে সেটা বহুদূরে বিস্তৃত ছিল তাঁর। 

নব পরিনীতা বধূর সঙ্গে শেখ কামাল 

ফুটবলে তো রীতিমত বিপ্লব সৃষ্টি করেছিলেন শেখ কামাল। দূরদর্শিতা আর আধুনিকতার অপূর্ব সমন্বয়ে রীতিমত তোলপাড় সৃষ্টি করলেন তিনি গোটা উপমহাদেশে। সেই ১৯৭৩ সালে আবাহনীর জন্য বিদেশী কোচ বিল হার্টকে এনে ফুটবল প্রেমিকদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন! তখন ক্লাব তো দূরের কথা, এই উপমহাদেশে জাতীয় দলের কোনো বিদেশী কোচ ছিল না। আর তাইতো ১৯৭৪ সালে আবাহনী যখন কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ‘আইএফএ’ শীল্ড টুর্নামেন্ট খেলতে যায়, তখন আবাহনীর বিদেশী কোচ আর পশ্চিমা বেশভুষা দেখে সেখানকার কর্মকর্তা আর সমর্থকদের চোখ ‘ছানাবড়া’ হয়ে যায়! পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারণ খেলে আবাহনী ক্রীড়াচক্র দর্শকের অবাক মুগ্ধতা অর্জন করেছিল মাটি কামড়ে ছোট ছোট পাসে মাঠজুড়ে চমৎকার ফুটবল দিয়ে। প্রশংসা করেছিলেন কমল বসুসহ আকাশবাণীর প্রথিতযশা ধারাভাষ্যকারবৃন্দ।

হকিতেও নতুন দিনের সূচনা করেছিলেন শেখ কামাল। যোগ্যতা, দক্ষতা, দেশপ্রেমের অসামান্য স্ফুরণে এই মানুষটা বদলে দিচ্ছিলেন সদ্য স্বাধীন একটা দেশের পুরো ক্রীড়া ক্ষেত্র। শুধু ক্রীড়াই নয়, শিল্প সাহিত্যের সব শাখা পুনর্গঠনে তিনি পালন করছিলেন অসামান্য অবদান। যারা এই দেশ চায়নি, চায়নি স্বাধীনতা, এই উন্নতি, নতুন দিনের আগমন তাদের কেন সহ্য হবে? জাতির পিতা শেখ মুজিবকে অপবাদ দেবার মতো দুঃসাহস কিংবা বুকের পাটা কখনই হয়নি অন্ধকারের ওই মানুষগুলোর। তাই তারা বেছে নিয়েছিল তাঁর সন্তানদের। যে শেখ কামালের কাছে কেউ কোনোদিন কোনো সাহায্য চেয়ে খালি হাতে ফিরে যায়নি, সেই শেখ কামালের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ফাঁদলো একের পর এক মিথ্যে বানোয়াট গল্প। যে গল্পের নিখুঁত পরিবেশনায় কোনো ফাঁক ছিল না। কিন্তু সত্য একদিন প্রকাশ পাবেই। আজ সে অকল্পনীয় নিরেট মিথ্যায় মোড়ানো সেই গল্পগুলো যে মিথ্যে ছিল তা ধীরে ধীরে জানতে পেরেছে দেশের সাধারণ মানুষ।

আগস্টেই তার জন্ম, আবার এই আগস্টেই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তিনি নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করে শহীদ হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের বুলেটের আঘাতে তিনি প্রথম শহীদ। তার জন্ম ও কর্মময় জীবন আমাদের কাছে অতুলনীয় কারণ সততার কষ্টিপাথরে তিনি ছিলেন অনন্য।

বাতাসে ভাসে শেখ কামালের বঙ্গবন্ধুর মতোই তেজোদীপ্ত কণ্ঠ। বঙ্গবন্ধুর ২২-ঊর্ধ্ব ছেলে হয়েও তিনি মন্ত্রী-এমপি হননি। তিনি হয়েছিলেন মানুষের বন্ধু, মানবতার প্রতীক। সৎভাবে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। প্রাণপ্রাচুর্যের কারণে তরুণদের সহজেই আকৃষ্ট করতে পারতেন তিনি। স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠীর তিনি ছিলেন প্রধান সংগঠক। যেখানে স্বাধীনতা-উত্তর তরুণ সমাজের সৃজনশীলতা হয়েছিল অবারিত। তাঁর সহধর্মিণী ছিলেন সেই সময়ের প্রখ্যাত ক্রীড়াবিদ সুলতানা খুকু। বাঙালি সংস্কৃতির চেতনার বাতিঘর হিসেবে পরিচিত ‘ছায়ানটে’ শেখ কামাল সেতার বাজানো শিখতেন। এই গান, খেলাধুলা, অভিনয় আর আড্ডা যাঁর প্রাণ সেই ব্যক্তিই আবার সভা-সমিতি করে মুজিবপন্থী ছাত্রলীগকে সঞ্জীবিত করেছিলেন।

শহীদ হওয়ার আগের মাসে বিয়ে হয়েছিল শেখ কামাল আর সুলতানা কামালের। রূপকথার চেয়েও অসম্ভব সুন্দর তাদের ভালোবাসা এবং পরিণয়। কিন্তু তা স্থায়ী হয়েছিল মাত্র একমাস! মাত্র ২৬ বছরের অতি ক্ষুদ্র জীবনকে তিনি অসামান্য সব কর্ম দিয়ে সাজিয়েছিলেন। মাতৃভূমির ইতিহাসের অন্যতম সূর্যসন্তান হিসেবে নিজেকে চিনিয়ে গিয়েছিলেন অসম্ভব বিনয় আর সারল্যে। আজ তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো বহু আগেই আমরা টেস্ট স্ট্যাটাস পেতাম। পেশাদারিত্ব আর প্রতিভার যথাযথ যত্ন আর সম্মিলনে ক্রিকেটের কাঠামো হতো আরো মজবুত, বিশ্বমানের। আমরা আত্মপ্রকাশ করতাম ক্রিকেট পরাশক্তি হিসেবে। আজ তিনি বেঁচে থাকলে আমাদের ফুটবলে এ দুরবস্থা থাকতো না। সব সময় আধুনিকতা আর পেশাদারিত্বের অনন্য সমন্বয়কারী শেখ কামাল কোনোদিনই আমাদের ফুটবলের এই জীর্ণদশা হতে দিতেন না। ফুটবলেও আমরা হতে পারতাম পৃথিবী সেরা। শুধু ক্রীড়া ক্ষেত্র নয়, শিল্প সংস্কৃতির প্রত্যেকটা ধারায় আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেতৃত্ব দিতে পারতাম সামনে থেকে যদি আচার-আচরণে অতি সহজ-সরল, সদালাপী, সদা হাসিখুশি মনখোলা প্রাণবন্ত একজন শেখ কামাল যদি আমাদের অগ্রদূত থাকতেন।

এই একবিংশ শতাব্দীতে শেখ কামাল এখন স্মরণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। শেখ কামালের বিচরণ ছিল প্রধানত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। তার হেঁটে চলা ছিল আবাহনীর মাঠে। তিনি ছিলেন আনন্দের প্রতীক। খেলাধুলার সঙ্গে যে শিশুরা আজ সম্পৃক্ত এবং যারা আবাহনীর মাঠে দৌড়ে বেড়ায় তাদের সজীবতায় মিশে আছে তাঁর নাম। যে সবুজ চত্বরে তিনি হেঁটেছেন খোলা পায়ে সেই ঘাসের আদর মেখে এখনকার প্রজন্ম এগিয়ে চলেছে। তিনি তো সেই প্রাণের প্রতীক যার নিজ কণ্ঠের গান ঘুরেফিরে আসে স্মৃতিকাতর বন্ধুজনের কানে।

অন্যদের ভালো কাজে উৎসাহ দেওয়া তাঁর অন্যতম ও স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ছিল। জাতির পিতার সন্তান হয়েও তিনি সাধারণ মানুষের মতো জীবন-যাপন করতেন, একই শার্ট বারবার পরতেন, বিলাস পরিত্যাগ করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নাটক ও গান নিয়ে মেতে থাকতেন। শেখ কামাল ছিলেন উদ্দীপ্ত যৌবনের দূত ও পরোপকারী ব্যক্তিত্বের পুরোধা। যারা তাঁর সান্নিধ্যে এসেছেন তারা অনুভব করেছেন তাঁর স্নিগ্ধ ও হাস্যোজ্জ্বল মমত্ববোধ। তাঁর জীবনে যেমন সৃষ্টির আনন্দ আছে, তেমনি আছে কাঁটার আঘাত। শেখ কামালের জীবনটা যেন এক ম্যাজিক বক্স। সৃষ্টি আর সম্ভাবনার গল্পে ঠাসা।  

লেখক : যুগ্ম সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)