সন্ধ্যায় বাগানে জোনাকির অপেক্ষা করার কথা। তাদের প্রেম বছর পেরিয়েছে অনেকদিন। ‘মেগা প্রেম’ বলা যায়।
প্রেমের ফের এবং রকমফের দুই-ই আছে। যেমন অনেক দিনের প্রেম। হঠাৎ একদিন প্রেমিক সন্দেহ নিয়ে বলল, আমাদের মধ্যে এই জাফরটা কবে এলো? প্রেমিকা বলল, ওর ব্যাংক ব্যালান্স যেদিন জানতে পারলাম সেদিন থেকে।
বলাবাহুল্য এরপর প্রেমটাই ইমব্যালান্স হয়ে গেল। এই প্রেমকে ‘রান আউট’ টাইপের প্রেম বলা যায়। আবার অনেক আশ্বাস পাওয়ার পর প্রেমিক যখন ফাইনালি প্রেমিকার কাছে জানতে চায়, আমাদের সম্পর্কের কথা জেনে তোমার বাবা কী বললেন? তবে যাই বলুক, আমি কিন্তু তোমাকে ছাড়া বাঁচব না। উত্তরে প্রেমিকা যখন বলে, বাবা বলেছে, তোমার দাফনের খরচ তিনিই দেবেন।
এই প্রেমকে নো বলের সঙ্গে তুলনা করা যায়। আবার টোয়েন্টি টোয়েন্টি প্রেমও আছে। যেমন হঠাৎ দুই বন্ধুর দেখা। বন্ধু জিজ্ঞেস করল, কিরে! কাল তোর সঙ্গে মলিকে দেখলাম, আজ জলি, ঘটনা কী? বন্ধু কাঁধ ঝাকিয়ে বলল, টেস্ট ম্যাচের টাইম কই? ডলিকেও তো সময় দিতে হবে।
যাই হোক, জোনাকির প্রেমের কথা বলছিলাম। তার প্রেম টেস্ট ম্যাচের মতো। কিন্তু জোনাকিটা যেন কেমন- এক্কেবারে রসকষহীন! ভিক্ষুকের মতো হাত পাতলে ডাকাতের মতো তেড়ে আসে। বলে বিয়ের আগে নাকি ওসব ভালো নয়। আজ জোনাকির কোনো কথাই শুনবে না সে।
মশা রোমান্টিক মুডে জোনাকির খোঁজে বাগানের চারপাশে উড়তে থাকে। হঠাৎ গন্ধরাজের ডাল-পাতার ফাঁক দিয়ে একটু আলো জ্বলে ওঠে। প্রেমিক মশা তৃষ্ণার্ত মন নিয়ে ছুটে যায় সেদিকে। তার ডানায় তখন হেলিকপ্টারের বেগ। দুই চোখ বুজে পিয়াসী ঠোঁট ডাকাতের মতো বাড়িয়ে দেয় সে আলোর সামনে। কিন্তু এ কি! চিৎকার দিয়ে মুহূর্তেই মশা উল্টে পড়ে বাগানের শুকনো ঘাসের ওপর। চিৎকার শুনে ছুটে আসে জোনাকি। ওগো, তোমার এ অবস্থা কী করে হলো? তোমাকে চুমু খেতে গিয়ে সিগারেটের আগুনে... ইইই...।
ব্যস! তারপর যা হওয়ার তাই হলো। মশার শত কান্নাতেও মন গলল না জোনাকির। তার একটাই কথা- হোয়েন ক্যারেক্টার ইজ লস্ট, এভরিথিং ইজ লস্ট। সুতরাং দুজনের দুটি পথ বেঁকে গেল দুদিকে।
দুদিন বাদেই খবর পাওয়া গেল জোনাকির বিয়ে। পাত্র ঝিঁঝিঁ পোকা। এরপর থেকেই মশার পাগলামো শুরু। দিন কী রাতে সাঁঝ-প্রভাতে গুনগুনিয়ে গান গায় আর সবাইকে চুমু খেয়ে বেড়ায়। শত চড় খেয়েও তার গান থামে না- হয় যদি বদনাম হোক আরো, আমি তো এখন আর নই কারো...।
এদিকে মশার মজনুগিরি দেখে প্রাণিকুলে আলোচনা, সমালোচনার ঝড় ওঠে। একদল বলে, ঠিক হয়েছে, উচিত সাজা! কাম এবং প্রেম একসঙ্গে হতে পারে না। অন্যদল বলে, হতেই পারে। কারণ প্রেম হলো যৌবনের হামজ্বর। তাছাড়া জোনাকিরা ভালোবাসে কবিকে আর বিয়ে করে বণিককে। এমন উদাহরণ ঢের আছে।
ডাক্তার এবং কবি দুই বন্ধু। ঘটনাক্রমে দুই বন্ধু একই মেয়ের প্রেমে পড়ল। অর্থাৎ এক ফুল দুই মালি কেস! একদিন ডাক্তার ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে কবি বন্ধুকে ধমক দিয়ে বলল, তোর যন্ত্রণায় ও যখন পাগল হয়ে যাবে তখন আমিই ওকে চিকিৎসা করে ভালো করব। সুতরাং ওর আমাকেই বেশি প্রয়োজন। শুনে কবি বন্ধু মুচকি হেসে বলল, তুই চিকিৎসা করলে ও ভালো হয়ে যাবে গ্যারান্টি কি? তোর ভুল চিকিৎসায় ওর তো মৃত্যুও হতে পারে। তখন আমি আমার কবিতা দিয়ে ওকে অমর করে রাখব। সুতরাং ওর প্রতি আমার দাবিই বেশি। দুই বন্ধুর ঝগড়া যখন মুখ থেকে হাতে গড়ানোর উপক্রম তখন ডাক্তার বলল, চল ওকেই তাহলে জিজ্ঞেস করি। কবি বলল, চল। দুই বন্ধু গিয়ে প্রেমিকাকে পাকড়াও করতেই প্রেমিকা স্পষ্ট জানিয়ে দিলো- মরে গিয়ে অমর হওয়ার খায়েশ তার নেই।
এরপর থেকে কবির কোনো রোদ-বৃষ্টি, অমাবস্যা-পূর্ণিমা নেই। এক বসাতেই সে এখন লিখে ফেলতে পারে বিরহের মহাকাব্য। কিন্তু এটাও তো ঠিক, পুরুষের জীবনে প্রেম সে তো অনুকাহিনি মাত্র। পুরুষের পরাণ পোড়ে কয়দিন? নারীর জীবনে তা সমগ্র ইতিহাস।
এ কথা শুনে হইহই করে ওঠে একদল। বলে, ইতিহাস তো আমরাও কম দেখলাম না। প্রজননকালে ময়ূরীর ডাকে হৃদয়ে ভালোবাসা নিয়ে ছুটে আসে একাধিক ময়ূর। শুরু হয় লড়াই। ময়ূরী বেছে নেয় বিজয়ীকে। পশু হাসপাতালের বেডে পরাজিত ময়ূরের খোঁজ তখন আর কে রাখে?
চড়ুইয়ের প্রেমকে মডেল বিবেচনা করে ‘টোনাটুনির প্রেম’ বলা হয়। অথচ পুরুষ চড়ুই মারা গেলে স্ত্রী চড়ুই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নতুন সঙ্গী বেছে নেয়। ইতিহাসের এখানেই শেষ নয়। রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড প্রেমের জন্য সিংহাসন ছেড়েছিলেন। অথচ বেচারা দেবদাস এই প্যাঁচে পড়ে দারু পর্যন্ত ছাড়তে পারল না।
শুনে প্রতিপক্ষ বলে, আমরা কিন্তু একজনের কথা জানি, প্রেমের জন্যে জীবন বাঁচাতে যাকে রাতের আঁধারে প্রিয় শহর ছাড়তে হয়েছিল। কারণ সে যে মহিলাকে ভালোবাসত তার স্বামী বিষয়টি জেনে গিয়েছিল। মহিলার স্বামী তখন বন্দুক নিয়ে তাকে খুঁজতে বেরিয়েছিল। এ জন্যই লোকে বলে, ভাগ্যবান প্রেমিক তারাই যারা অবিবাহিত।
তর্ক-বিতর্ক চলতেই থাকে। কিন্তু ছ্যাঁকা খেয়ে যে একা হয়ে গেল তার কথা কেউ ভাবে না। অবশ্য অনেকে বলে, প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়ে দ্রুত বিয়ে করে ফেলাই নাকি বুদ্ধিমানে কাজ। কারণ প্রেমের জখম প্রেমেই সারে।