আমাদের সমাজে সব কিছু এখন বিতর্কের শিকার। এমন কি ক্রিকেটও! একটা জাতি যখন মাথা তুলে দাঁড়াতে শুরু করেছে তখন এমন বিতর্ক অনভিপ্রেত। তবু এটাই আমাদের নিয়তি। খেয়াল করবেন কোন বিষয়েই আমাদের ঐক্য নাই। রাজনীতি সমাজনীতি অর্থনীতি খেলাধুলা সব বিষয়ে হয় তর্ক, নয় দ্বিমত চলছে। এই যে অসন্তুষ্টি বা অসহিষ্ণুতা এর কারণ কি?
সবাই জানেন যখন মন অশান্ত বা চঞ্চল হয়, যখন বিবেক রুদ্ধ হয় তখন এমন হয়। কোন ব্যাপারেই আজ শান্তি নাই। শান্তি সুদূর পরাহত।
একদল মানুষ আর একদল সুবিধাবাদী লোকের জন্য দেশের সম্মান নষ্ট হোক এটা কেউ চায় না। কাম্য হতে পারে না। বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেট দল সামনে এগিয়ে চলেছে। তাদের জগতে পলিটিক্স কম। এখনো রাজনীতি দানা বাঁধেনি। তাই তারা এশিয়া কাপে ব্রোঞ্জ পদক জিতে নিয়েছে। তাদের সামনে সোনালি ভবিষ্যতের হাতছানি। সে আশা আমাদের বুকেও ভরসা যোগায়। মনে হয় একদিন ওরা পারবেই।
বলছিলাম খেলার কথা। খেলায় রাজনীতি থাকে, জয় পরাজয় থাকে। কোন দেশ তার বাইরে নয়। ভারতের ক্রিকেটে পাকিস্তানের ক্রিকেট জগতে এগুলো নিত্যনৈমিত্তিক। আমাদের দেশে এত দিন আন্ডার কারেন্ট বা তলে তলে থাকা বিষয়গুলো ক্রমেই বড় হয়ে উঠছে। যা মোটেও সুখকর নয়। আমরা যারা বিদেশে থাকি বিদেশে থেকে বাংলাদেশকে সমর্থন করি আমরা চাই শান্তি। আমাদের বিনোদনের অনিবার্য অংশ খেলা। এর ভেতর জাতীয় মর্যাদা, এর ভেতরেই পাই জাতীয় সম্মান। কাজেই আমরা কোন বিভক্তি বা অনৈক্য সমর্থন করি না।
কেন এমন হচ্ছে? কেন সর্বস্তরে এমন ঝগড়া বা অসহিষ্ণুতা? আমার ধারণা এটি একটি মানসিক রোগে পরিণত হতে চলেছে। আসলে বোর্ড বা পরিচালকদের সম্পর্কে কোন ধারণা ছাড়াই মনগড়া কথা বলাটা এখন আধুনিকতা! ভাবখানা এমন যে যারা বলছে তারা জীবনে শত রান করে করে ক্লান্ত। বা বোলিং করে দল ও দেশকে জিতিয়েছে বহুবার। কথা বলার অধিকার আর সমালোচনার অধিকার আছে বলে যা খুশী তা বলতে হবে? কোন ধারণা ছাড়াই এরা সামাজিক মিডিয়ায় বিশেষজ্ঞের কাজ করে। সব বিষয়ে মতামত রাখে। এদের কথা ক্রিকেটার বা সেলিব্রেটিদের কানে পৌঁছায় কি না জানি না, তবে মানুষ এতে বিভ্রান্ত হয়। বিভ্রান্তি ছড়ানোর দায় নিতে এক পা এগিয়ে থাকা সমাজ কোথাও ভালো কিছু দেখে না। ভালো ফল ভালো রেজাল্ট বা ঘুরে দাঁড়ানো যতটা নন্দিত তার চেয়ে বেশি হয় নিন্দা আর কুৎসা।
এ জাতীয় প্রবণতা আমাদের তারুণ্যের জন্য ভালো নয়। আজকে জাতির মেরুদণ্ডের ওপর আঘাত হানছে এসব অপপ্রক্রিয়া। আমি শুধু খেলার কথা বলছি না, সব বিষয়ে বলছি। নির্বাচন থেকে বিদেশীদের ভূমিকা সব বিষয়ে কিছু মানুষের আগ্রহ দেখে মনে হয় এরাই রাজনীতিবিদ। শেখ হাসিনার মতো চমৎকার প্রজ্ঞাময়ী প্রধানমন্ত্রীর বিকল্প নাই। তারপরও এদের কথা থামে না। ঘটনা দেখে মনে হয় শান্তি বিষয়টাতে আগ্রহ নাই জাতির। অথচ শান্তি ছাড়া কোন সমাজ ভালোভাবে এগুতে পারে না। স্থিতি আর শান্তি যারা দেয় বা দিতে পারে তাদের প্রতি ভরসা না রেখে খালি টক শো আর গালাগালি কী সমাধান?
কিছু মিডিয়ার কার্যক্রম দেখলে মনে হবে তাদের আক্রোশ আর মনোবদেনার কারণ দেশের আয় উন্নতি। কোন বাছ বিচার বা আগাম পরিকল্পনা ছাড়া নিছক গালাগালি করে বাহবা কুড়ানো আর যাই হোক মঙ্গল বয়ে আনে না।
অথচ বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাস বা অর্জন মন্দ কিছু না। ক্রমেই বাড়ছে অর্জন। হ্যাঁ ভুলভ্রান্তি থাকবেই। মোদ্দা হিসেবে আমরা তো পিছিয়ে যাচ্ছি না। বুকে হাত দিয়ে বলুন তো কবে শেষবার মন ভালো করা এমন একটা লেখা বা আলাপ শুনেছেন? যেখানে দেশ ও দশের মঙ্গল বা সদার্থক কিছু ছিল। কেন এই অপপ্রক্রিয়ার জয়জয়কার? কারণ সমাজকে ধীরে ধীরে নেগেটিভ করে তোলা। মুক্তিযুদ্ধ ও চেনার বুকে আঁচড় কাটা। যেন পরাধীন ধাকতেই ভালো ছিলাম আমরা। যেন ডান্ডাতন্ত্র থাকলেই ভালো হতো। মাঝে মাঝে ন্যায্য সমালোচনাকেও তাই বাড়াবাড়ি মনে হয়। সবচেয়ে সাংঘাতিক দেশপ্রেমবিরোধী মনোভাব। সমালোচনার নামে ডান বাম মিলে দেশের পিণ্ডি চটকানো, সরকারবিরোধীতার নামে গালমন্দ ভালোই চলছে। এর অবসান জরুরি।
কোন জাতিই নেগেটিভ কিছুর ওপর ভর করে বড় হতে পারে না। আমাদের অর্জনগুলো বড় করে দেখার সময় এখন। কলহ মিথ্যা আর ফাটল ধরানোতে বিকৃত আনন্দ ব্যতীত আর কিছুই নাই। বুঝলাম সমস্যা আছে। তো এই সমস্যা সমাধানে সুপরামর্শ দিন। বলুন কী কী করা দরকার, কেন দরকার? খালি সামাজিক মিডিয়ায় ভাইরাল হবার জন্য লিখে কি লাভ? এতে কি দেশ ও দশের কোন উপকার হয়? বিপজ্জনক এই প্রবণতা এখন ভয়াবহ! এতে সম্প্রীতি বিনষ্টের পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তিও পড়ছে বিপদে।
সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ব্যতীত বাকী সব আসলে এক ধরণের বাষ্প। যা উঠলেও মিলিয়ে যায়। আমি মনে করি তাদের বাইরে রেখে এসব আস্ফালন এক ধরনের বালখিল্যতা। অবশ্যই প্রতিবাদ থাকবে। বাদানুবাদও থাকবে। পৃথিবীর সব দেশে সব সমাজে তা দেখা যায়। কিন্তু আমাদের মতো আত্মহননের প্রবণতা দেখি না। বরং মিডিয়া ও বেশীরভাগ মানুষ এসব দেশে নিজেদের কল্যাণের কথা ভালো দিক বিবেচনা করেই খবর ছাপে। তাতে লাভ হয় জাতির। আখেরে বুনিয়াদ হয় শক্ত।
এমন একটা সময় যখন ভালো কথা খারাপ কথা সব মিলেমিশে একাকার। বিভ্রান্ত হচ্ছে নতুন প্রজন্ম। তারা যদি অপ্রাপ্তমনস্ক ইমম্যাচিউর অগ্রজদের দেখে বড় হয় তো তাদের মানসিক বিকাশ হবে কি করে? এখন আসলেই জয়-পরাজয় বড় বিষয়। জয়ের ধারায় ফেরাটাই বড় কথা। বিশ্বকাপের মতো মর্যদাপূর্ণ খেলায় সম্মান আর গৌরবের চাইতে বড় কিছু হতেই পারে না। কোন খেলোয়াড়ই বড়-ছোট নয়। এগারো জনের দলে এগারো জনই সমান জরুরি। একজন খারাপ করলেই বাকিরা হারবে। ফলে টিমওয়ার্ক আর দেশের জন্য ভালোবাসায় ভরে উঠুক খেলার ভুবন। বাংলাদেশের সম্মান আর ভাবমূর্তি বজায় রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার।
সিডনি